ব্যক্তি ও সমাজের জন্য ইসলামের দিকনির্দেশনা

1
1916
লেখক: শাইখ মুহাম্মদ ইবন জামীল যাইনূ | অনুবাদক: ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান
ইসলামের বৈশিষ্ট্য

১) ইসলাম হচ্ছে তাওহিদ বা একত্ববাদের দ্বীন। উহা হল অন্তরে দৃঢ়ভাবে এ ঈমান পোষণ করা যে, এক স্রষ্টা সমস্ত জগতকে সৃষ্টি করেছেন, তা বাস্তব সত্য, যা প্রতিটি বুদ্ধিমান ও চিন্তাশীল লোকের বুদ্ধির আনুকূল্য কথা। আর এই স্রষ্টাই হচ্ছেন সত্যিকারের মাবুদ, তাই একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা কর্তব্য। এছাড়া একমাত্র তাঁর নামেই হতে হবে যবেহ করা, নজর-নেওয়াজ দেয়া। আর বিশেষ করে দোয়ার ক্ষেত্রে তো কথাই নেই। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: দোয়াই হচ্ছে ইবাদত (তিরমিযি, হাদীসটি হাসান ও সহিহ)

এ কারনেই গাইরুল্লাহর নিকট দোয়া করা জায়েয নেই।

২) ইসলাম সমস্ত কিছুর সমন্বয় সাধন করে, কোন বিভেদ সৃষ্টি করে না। এবং ঐ সমস্ত রাসূলগণের উপর ঈমান আনতে বলে যাদেরকে আল্লাহ তাআলা প্রেরণ করেছিলেন লোকদের হেদায়েতের জন্য, তাদের জীবনকে সুসংহত করার জন্য। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন তাদের মধ্যে সর্বশেষ নবী। আর তার শরীয়ত আল্লাহর হুকুমে পূর্ববর্তি সমস্ত শরীয়ত সমূহকে বাতিল করে দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা তাঁকে সমস্ত মানব জাতির জন্য প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি তাদের অন্যান্য মিথ্যা ও বিকৃত ধর্মের হাত হতে রক্ষা করে ইসলামের অপরিবর্তিত দ্বীনের মধ্যে শামিল করতে পারেন।

৩) ইসলামের শিক্ষাসমূহ সহজ ও সাধারণের বোধগম্য। ইসলাম কোন রকম অবাস্তব চিন্তা কিংবা বিকৃত আকিদা অথবা দার্শনিকের কাল্পনিক কোন চিন্তাকে স্বীকৃতি দেয় না। উহা প্রত্যেক যুগে ও সমাজে সহজেই পালন করা চলে।

৪) ইসলাম জড় ও আত্মিক জগতকে সম্পূর্ণ আলাদা করে না। বরঞ্চ জীবনকে এক ও সর্বব্যাপী ধারণা করে এবং উভয় জগতকে এক হিসাবে দেখে। তাই কোন একটাকে গ্রহণ করা, আর অন্যটাকে ছেড়ে দেয়ার নীতি তার মধ্যে নেই।

৫) ইসলাম অত্যান্ত দৃঢ়তার সংগে মুসলমানদের মধ্যে একে অন্যের মধ্যে সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বকে বজায় রাখে এবং জাতি বা এলাকাগত দুরত্বকে অস্বীকার করে।

আল্লাহ তাআলা বলেন: “নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সেই ব্যাক্তিই আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে অধিক মুত্তাকি।” [সূরা হুজুরাত ৪৯: ১৩ আয়াত]

৬) ইসলামে এমন কোন পূজারীর দল নেই যারা দ্বীন নিয়ে ব্যবসা করে। আর এমন কোন অবাস্তব চিন্তা ভাবনা নেই যা বিশ্বাস করা কঠিন। প্রতিটি ব্যক্তিই আল্লাহর কিতাব ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদিস পড়তে পারে এবং সালফে সালেহীনগণ যেভাবে বুঝেছেন ঐভাবে বুঝে নিয়ে তার ভিত্তিতেই জীবনকে গড়তে পারবে।

ইসলাম জীবনের পরিপূর্ণ বিধান

১) ইসলাম মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকেই সুন্দর ও সুসংহত করেছে। তা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক কিংবা সামাজিক যাই হোক না কেন। আর সাথে সাথে এই জাতীয় সমস্যাবলী সমাধানের জন্য উত্তম রাস্তাও প্রদর্শন করেছে।

২) ইসলাম মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ রাস্তা দেখানোর জন্য সচেষ্ট। এর মধ্যে মূল কথা হচ্ছে, সময়ের সুষ্ঠ ব্যবহার। আর ইসলামের বিধানসমূহই হচ্ছে মুসলমানদের দুনিয়া ও আখেরাতের জীবনের কামিয়াবীর সঠিক দিক নির্দেশনা।

৩) ইসলামের মূল হচ্ছে আকিদাহ, অত:পর শরীয়াহ। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর  মক্কার জীবনের সম্পূর্ণ প্রচেষ্টাই ছিল আকিদা প্রচার। তারপর যখন তিনি মদিনায় হিজরত করেন, তখন শরীয়ত প্রতিষ্ঠা করেন, যাতে তথায় ইসলামী রাস্ট্র গঠন করা যায়।

৪) ইসলাম মানুষকে জ্ঞানের দিকে আহবান করে। আর উৎসাহিত করে নবলব্ধ উপকারী ইলম অর্জনের জন্য। তাই দেখা যায়, মধ্য যুগে মুসলিমরা জ্ঞান বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অতি উচ্চ স্তরে পৌছেঁ ছিলেন। যেমন, ইবনে হাইছাম, বাইরূণী এবং আরও অনেকে।

৫) ইসলাম হালাল ধন দৌলত অর্জন করাকে স্বীকার করে। তবে শর্ত হল, তাতে কোন ধোকা কিংবা জোর জবরদস্তি থাকবে না। আর সাথে সাথে এটাও উৎসাহিত করে যে, নেককার ব্যক্তিগণ হালাল মাল উপার্জন করবে এবং ঐ উপার্জিত অর্থ দ্বারা ফকিরদের সাহায্য করবে ও আল্লাহর রাস্তায় খরচ করবে। আর এভাবেই ইসলামের সামাজিক ন্যায় পরায়ণতা মসিলিম উম্মাহর মধ্যে প্রচারিত হয়, যারা তাদের শরীয়াহ তাদের রব হতে গ্রহণ করে।

আল্লাহ তাআলা বলেন: “তার মত কেউ নেই, তিনি সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা।” [সূরা শুরা ৪২: ১১ আয়াত]

আর যা বলা হয়েছে  যে সম্পদ জমা করা হবে হালাল পন্থায় তা মিথ্যা হাদিস তার কোন মূল ভিত্তি নেই।

৬) ইসলাম হচ্ছে জিহাদ ও জীবনের দ্বীন। প্রতিটি মুসলিমের জন্য ফরজ করা হয়েছে দ্বীনের সাহায্যের জন্য সে তার জান ও মালকে ব্যয় করবে। আর উহা জীবনের দ্বীন। অর্থাৎ উহা মানুষকে এমন শিক্ষা দেয় যদ্বারা তারা সুন্দরভাবে জীবনকে গড়ে তুলবে ইসলামের ছায়াতলে। তবে শর্ত হলো, সে আখেরাতের জীবনকে দুনিয়ার জীবনের উপর প্রধান্য দিবে।

৭) ইসলাম উহার গণ্ডীর মধ্যে স্বাধীন চিন্তা ভাবনার পথকে প্রশস্ত করে দেয়। সাথে সাথে চিন্তা জগতের জড়তাকে দূর করে, আর ইসলামের মধ্যে যে সমস্ত খারাপ চিন্তাভাবনা প্রবেশ করে তাকে হটিয়ে দেয়। আর ঐ সমস্ত বিদআত সুসংস্কার, মউজু হাদিসসমূহকে দূরীভূত করে, যা মুসলমানদের অগ্রযাত্রাকে বাধা প্রদান করে।

দোয়া হচ্ছে ইবাদত

দোয়া যে ইবাদত তা সহীহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। এটা হতে প্রমাণিত হয় যে, দোয়া বিশেষ ধরণের ইবাদত। কোন রাসূল কিংবা অলীর জন্য যেমন সালাত আদায় করা চলেনা, তেমনিভাবে কোন রাসূল অথবা অলীর নিকট (তাদের মৃত্যুর পর) আল্লাহকে ছেড়ে কোন দোয়া চাওয়া যাবে না।

১) যদি কোন মুসলিম বলে: হে রাসূলুল্লাহ বা হে গায়েবের খবর জানা ব্যক্তি; আমাকে বিপদ থেকে উদ্ধার কর, সাহায্য কর, তখন ওটা হবে দোয়া এবং ঐ ইবাদত গায়রুল্লাহর জন্য করা হলো, যদিও তার অন্তরে এই নিয়ত থাকে যে, সত্যিকারভাবে আল্লাহই রক্ষাকর্তা। এর তুলনা হচ্ছে ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে আল্লাহর সাথে কোন শিরক করে বলে: আমার অন্তরে আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই, তথাপিও তার এ কথা অগ্রাহ্য হবে। কারণ, তার মুখের কথা তার আমলের বিপরীত। এজন্যই তার মুখের কথা তার অন্তরের নিয়ত ও আকিদার সাথে মিল থাকতে হবে। নতুবা উহা শিরক বা কুফরির পর্যায়ে যাবে, যা তওবা ব্যতিত আল্লাহ ক্ষমা করেন না।

২) আবার যদি কোন মুসলিম বলে: আমার অন্তরের নিয়ত হচ্ছে তাদেরকে (রাসূল ও অলী) আল্লাহর নিকট মধ্যস্থাকারী বানানো। যেমন কোন আমিরের নিকট আমি যেতে পারিনা কোন মধ্যস্ততাকারী ব্যতিত। এমতাবস্থায় ইহা সৃষ্টিকর্তার সাথে অত্যাচারী সৃষ্ট ব্যক্তির তুলনা করা হল, যার নিকট মধ্যস্ততাকারী ব্যতিত পোঁছা  যায় না। আর এই ধরণের তুলনা কুফরির পর্যায়ভুক্ত। আল্লাহ তাআলার জাত, সিফাত ও কার্যসমূহ যে কত পাক পবিত্র তা বর্ণনা করে বলেন: “তার মত কেউ নেই, তিনি সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা।” [সূরা শুরা ৪২: ১১ আয়াত]

যদি আল্লাহর সাথে কোন ন্যায় পরায়ন ব্যক্তির তুলনা করা হয়, তবে তা কুফরি ও শিরকের পর্যায়ভুক্ত। আর সেখানে কোন অত্যাচারীর সাথে তুলনা করা তো আরো ভয়ংকর। আল্লাহ তাআলা ঐ সমস্ত যালিম, যারা বড় বড় অহংকারের কথা বলে, তা হতে খুবই পবিত্র।

৩) এমনকি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানায় মুশরিকরা পর্যন্ত এই ধারণা পোষণ করত যে, আল্লাহ তাআলাই স্রষ্টা, রিযকদাতা। এতদসত্তেও তারা তাদের আউলিয়াদের ডাকত (যারা মুর্তি আকারে ছিল) মধ্যস্ততাকারী হিসেবে, যাতে তারা তাদেরকে আল্লাহর নিকট পৌঁছিয়ে দেয়। আল্লাহ তাআলা তাদের এতটুকু মধ্যস্ততা পর্যন্ত পছন্দ করেন নি, বরঞ্চ তাদের উদ্দেশ্যে বলেন: “যারা তাঁকে (আল্লহ) ছেড়ে অন্যদের আউলিয়া বলে আকড়ে ধরেছিল, তার বলত: আমরা এদের উপাসনা এজন্য করি যাতে তারা আমাদের আল্লাহর নিকট পৌঁছায়। আল্লাহ অবশ্যই তাদের মধ্যে যে মতবিরোধ ছিল, তার বিচার করবেন। নিশ্চয়ই তিনি কাফের ও মিথ্যবাদীকে হেদায়েত প্রদান করেন না।” [সূরা যুমার : ৩ আয়াত]

আল্লাহ তাআলা আমাদের অতি নিকটবর্তী ও শ্রবণকারী। তাঁর নিকট কোন মধ্যস্ততাকারীর প্রয়জন হয় না। তিনি বলেন: “আর যদি কোন বান্দা তোমার নিকট আমার সম্বন্ধে প্রশ্ন করে তবে বল: আমি খুবই নিকটে।” [সূরা বাকারা : ১৮৬]

৪) এমনকি ঐ সমস্ত মুশরিকরাও প্রচণ্ড বিপদে পড়ে একমাত্র আল্লাহকে ডাকত।

আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর যখন চর্তুদিক হতে পচণ্ড ঢেউ তাদের বেষ্টন করে ফেলত, তখন তারা ধারণা করত যে, উহাদের দ্বারা তারা বেষ্টিত হয়ে পড়েছে। তখন তারা কায়মনোবাক্যে এক আল্লাহকে ডেকে ডেকে বলত: যদি আপনি আমাদের এই বিপদ হতে উদ্ধার করেন তবে অবশ্যই আমরা শুকর গুজার বান্দায় পরিণত হব।” [সূরা ইউনুস : ২২]

তারা তাদের আউলিয়াদেরকে (যারা মুর্তির আকারে ছিল) ডাকত সুখের সময়। এতদসত্বেও কোরআন তাদের কাফের আখ্যায়িত করেছে।

তাহলে ঐ সমস্ত মুসলিম, যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিংবা নেককার (মৃত) ব্যক্তিদের ডেকে তাদের নিকট উদ্ধার কামনা করে, প্রচণ্ড বিপদে ও পরীক্ষার সময় এবং সুখের সময়েও তাদের ডাকে, তাদের সম্বন্ধে আপনাদের কি ধারণা? তারা কি আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণী পড়েনি?

“আর তার থেকে অধিক গোমরাহ আর কে হতে পারে, যে আল্লাহ ছাড়া এমন কাউকে ডাকে যে কিয়ামত পর্যন্ত (ডাকলেও) তার ডাকে সাড়া দিবে না। আর তারাও (গাইরুল্লাহ) তাদের দোয়া সম্বন্ধে অজ্ঞ। যখন লোকদের হাশর হবে, তখন তারা তাদের শত্রু বনে যাবে, আর তারা যে তাদের ইবাদত (দোয়া ) করত তাকে অস্বীকার করবে।” [সূরা আহকাফ : ৫,৬]

৫) অনেকের ধারণা যে, মুশরিকরা (যাদের কথা কোরআনে আছে) পাথরের তৈরী মুর্তিদের নিকট দোয়া করত। এটা ভূল ধারণা। কারণ, যে মুর্তিদের কথা কোরআনে বর্ণিত আছে তারা ছিলেন নেককার ব্যক্তি।

বুখারী শরীফে ইবনে আব্বাস রা. হতে সূরা নুহের ঐ কথার ব্যাখ্যায় বর্ণিত আছে: আর তারা বলল: তোমরা তোমাদের মাবুদদের পরিত্যাগ করোনা। আর পরিত্যাগ করোনা ওয়াদ্দা, ইয়াগুছ, ইয়াউক ও নাছরা কে) এর ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস রা. বলেন: এরা ছিলেন নুহ আ: বংশের নেককার ব্যক্তিগণ। যখন তারা মৃত্যুমুখে পতিত হলেন, শয়তান তখন তাদের কওমের লোকদের বলল: তারা যেখানে বসত সেখানে তাদের মূর্তি বানিয়ে স্থাপন কর, আর তাদের নামকরণও কর। তারা সেটা করল, যদিও তারা তখনও তাদের ইবাদত করত না। তারপর যখন এই লোকেরা মৃতু মুখে পতিত হল, তখন থেকেই এই মুর্তিদের ইবাদত শুরু হয়ে গেল। [বুখারী]

৬) যারা নবী ও আউলিয়াগণকে ডাকে, আল্লাহ তাআলা তাদের ধিক্কার দিয়ে বলেন: “বল: তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে যাদেরকে মাবুদ মনে করে আহবান কর, দেখবে তোমাদের দু:খ দৈন্য দূর করার অথবা পরিবর্তন করার শক্তি তাদের নেই। তারা যাদেরকে আহবান করে তাদের মধ্যে যারা নিকটতর তারাইতো তাদের প্রতিপালকের নৈকট্য লাভের উপায় সন্ধান করে। তাঁর দয়া প্রত্যাশা করে এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করে, তোমার প্রতিপালকের শাস্তি ভয়াবহ।” [সূরা ইসরা ৫৬,৫৭ আয়াত]

ইবনে কাসীর রহ. এই আয়াতের তাফসীরে যা বলেন তার মূল কথা হলো, এই আয়াত ঐ সমস্ত ব্যক্তিদের শানে নাযিল হয়েছে, যারা ঈসা আ. এবং মালাইকাদের ইবাদত করত। এই আয়াত ঐ সমস্ত ব্যক্তিদের কার্যের প্রতিবাদ করে, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যদের নিকট দোয়া করত, হোকনা তারা নবী কিংবা অলী।

৭) কেউ কেউ ধারণা করে যে, আল্লাহ ছাড়া অন্যের নিকট বিপদে মুক্তি চাওয়া জায়েয। তারা বলে: সত্যিকারের বিপদ ঊদ্ধারকারী হলেন আল্লাহ, আর রাসূল বা আউলিয়াদের নিকট বিপদ থেকে উদ্ধার চাওয়া রূপক। যেমন বলা হয়, আমাকে ঐ ঔষধ বা ডাক্তার রোগ মুক্তি দিয়েছে। কিন্তু তাদের এ কথা সঠিক নয়। কারণ ইব্রাহিম আ. বলেন: “যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন তিনিই হেদায়েত দান করেন। আর তিনিই আমার খাদ্য যোগান ও পানিয়ের ব্যবস্থা করেন। আর যখন অসুস্থ হই তখন তিনিই আমাকে সুস্থ করেন।” [সূরা শুয়ারা ২৬: ৭৮-৮০ আয়াত]

উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা বার বার তিনিই করেন কথাটা উল্লেখ করেছেন এজন্য যে, নিশ্চয়ই হিদায়েত দাতা রিযক দাতা সুস্থতা দানকারী একমাত্র তিনিই, অন্য কেউ নয়। তাই ঔষধ হচ্ছে আল্লাহর রহমতের দারা রোগমুক্তির কারণ, সে নিজে রোগ মুক্তিদাতা নয়।

৮) এমন অনেকে আছে যারা বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য, উদ্ধারকারী নির্বাচনের ক্ষেত্রে জীবিত কি মৃত তা প্রভেদ করে না। কিন্ত আল্লাহ তাআলা বলেন: “জীবিত ও মৃত ব্যক্তিরা কখনই সমতুল্য নয়।” [সূরা ফাতির : ২২ আয়াত]

অন্যত্র তিনি বলেন: “তখন সে তার বংশের লোকের নিকট সাহায্য চাইল, তার শত্রুর বিরুদ্ধে।” [সূরা কাসাস ২৮: ১৫ আয়াত]

এই ঘটনা ঐ ব্যক্তি সম্বন্ধে যিনি মুসার আ. এর নিকট সাহায্য চেয়েছিল তার শত্রুর বিরুদ্ধে। আর তিনি সাহায্যও করেন। “সে তাকে মুষ্টিঘাত করে, ফলে সে মৃত্যুমুখে পতিত হয়।” [সূরা কাসাস : ১৫ আয়াত]

কিন্তু কোন অবস্থাতে মৃত ব্যক্তির নিকট বিপদে সাহায্য চাওয়া জায়েয নয়। কারণ, সে দোয়া শ্রবণ করে না। আর যদি শ্রবণ করত, তথাপি জবাব দেয়ার কোন ক্ষমতা তার নেই। এ সম্বন্ধে আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমরা তাদেরকে আহবান করলে তারা তোমাদের দোয়া শুনবেনা এবং যদি শুনতেও পেত তথাপি তোমাদের আহবানে সাড়া দিবে না। তোমরা তাদেরকে যে শরীক করছ, তা তারা কিয়ামত দিবসে অস্বীকার করবে।” [সূরা ফাতির ৩৫: ১৪ আয়াত]

এ আয়াত হতে এটা স্পষ্টই প্রতীয়মান হল যে, মৃতদের নিকট দোয়া চাওয়া শিরক এর পর্যায়ভুক্ত। অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন: “যারা আল্লাহকে ছেড়ে অন্যদের ডাকে তারা কোন জিনিস সৃষ্টি করেনি, বরঞ্চ তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়েছে। মৃতরা কখনই জীবিতদের সমতুল্য নয়। আর তাদের এতটুকু ধারণা নেই যে, কখন আবার তাদের পুনরুত্থান করা হবে।” [সূরা নাহল, ১৬: ২০,২১ আয়াত]

৯) সহীহ হাদিসে বর্ণিত আছে যে, লোকেরা কিয়ামতের দিন নবীদের নিকট আগমন করবে এবং তাদের নিকট শাফায়াত প্রার্থনা করবে। এভাবে শেষ পর্যায়ে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে তারা যে বিপদে আছে, তা হতে উদ্ধারের জন্য শাফায়াতের অনুরোধ করবে। তখন তিনি বলবেন: হ্যাঁ আমি তা করব। তারপর তিনি আরশের নীচে সিজদা করবেন এবং আল্লাহ তাআলার নিকট ঐ বিপদ হতে উদ্ধার এবং শীঘ্র বিচার প্রার্থনা করবেন। এই শাফায়াত এমন সময় তাঁর নিকট চাওয়া হবে, যখন তিনি জীবিত হবেন এবং তাঁর সাথে লোকেরা কথা বলবে এবং তিনিও তাদের সাথে কথা বলবেন। তারা আর্জি জানাবে যে, তিনি যেন তাদের জন্য আল্লাহর নিকট সুপারিশ (শাফায়াত) করেন এবং তাদের জন্য বিপদ মুক্তির প্রার্থনা করেন। আর এটাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করবেন। (আমার মাতা পিতা তার জন্য কুরবান হউক)।

১০) সবচেয়ে বড় দলিল যা দ্বারা মৃতদের ও জীবিতদের মধ্যে চাওয়ার প্রভেদ করেছেন তা হলো ওমর রা. এর ঐ ঘটনা- যখন তাদের মধ্যে দুর্ভিক্ষের প্রসার ঘটেছিল। তখন তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর  চাচা আব্বাস রা. এর নিকট তাদের জন্য দোয় চেয়েছিলেন। তিনি তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর  নিকট দোয়া চাননি, কারণ, ততদিনে তিনি উপরের বন্ধুর নিকট প্রত্যাবর্তন করেছেন।

১১) বহু আলেম মনে করেন অসীলা এবং বিপদে সাহায্য চাওয়া একই ধরণের। আসলে উভয়ের মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। অসীলা হলো আল্লাহর নিকট কিছু প্রার্থনা করা কোন মাধ্যম ধরে। যেমন, বলা – হে আল্লাহ! আপনার প্রতি ও রাসূল সাল্লাল্লাহু  আলাইহ ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি আমাদের যে ভালবাসা আছে, তার অসীলায় আমাকে বিপদমুক্ত করুন। এভাবে দোয়া করা জায়েয। অপরদিকে বিপদে মুক্তি চাওয়া হলো – কোন গাইরুল্লাহর নিকট কিছু চাওয়া। যেমন: হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম! আমাদেরকে বিপদ হতে উদ্ধার করুন, এটা কোন ক্রমেই জায়েয নয়। উহা বড় শিরকের অন্তভূক্ত। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর আল্লাহকে ছেড়ে অন্য কাউকে ডেকোনা, যে না তোমার কোন উপকার করতে পারবে, আর না কোন ক্ষতি করতে পারবে। যদি তা কর অবশ্যই তুমি জালিমদের (মুশরিক) অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে।” [সূরা ইউনুস, ১০: ১০৬ আয়াত]

আল্লাহ তাআলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অন্যদের বলতে বলেছেন: বল: আমিতো কোন ক্রমেই তোমাদের ক্ষতি বা ভাল করার ক্ষমতা রাখি না। [সূরা জিন : ২১ আয়াত]

অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন: “বল: আমি তো একমাত্র আমার প্রতিপালককে ডাকি, আর তার সাথে কাউকে শরিক করিনা।” [সূরা জিন, ৭২: ২০ আয়াত]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যখন কিছু চাও একমাত্র আল্লাহর নিকট চাও, আর সাহায্য চাইলেও তাঁর নিকটে চাও। [তিরমিজি]

কবি বলেন: বিপদে একমাত্র আল্লাহর নিকটেই চাই। কারণ, তিনি ব্যতিত কেউ তা দূর করতে পারে না।

Print Friendly, PDF & Email
Banner Ad


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

1 COMMENT

আপনার মন্তব্য লিখুন