সালাতের ফজিলত সম্পর্কে জঈফ ও জাল হাদিস

12
4954

mithabolarsasti

সালাত জান্নাতের চাবি কথাটি সমাজে বহুল প্রচলিত । অনেকে বুখারিতে আছে বলেও চালিয়ে দেয়াই পছন্দ করে। আসলে এর কোন ভিত্তি নাই।

হাদিস নং ১।

জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ (ছা) বলেছেন, জান্নাতের চাবি হল সালাত। আর সালাতের চাবি হল পবিত্রতা।

(মুসনাদে আহমাদ হা/১৪৭০৩ তিরমিজি হা/৪ মিস্কাত হা/২৪৯ ফাজায়েলে আমাল  ৮৮ পৃ)

তাহকিকঃ

হাদিস এর প্রথম অংশ  জঈফ (জঈফুল জামে হা/৫২৬৫, সিলসিলা ই জঈফা হা/৩৬০৯) দ্বিতীয় অংশ পৃথক সনদ এ ছহিহ সুত্রে বর্ণিত আছে। (আবু দাউদ হা/৬১, তিরমিজি হা/৩)

হাদিসটির প্রথম অংশ জঈফ হবার কারন হল- উক্ত সনদ এ দুইজন দুর্বল রাবি আছে। (ক) সুলাইমান বিন করম ও (খ) আবু ইয়াহিয়া আল-কাত্তাত।

(আলবানি, মিস্কাত হা/২৯৪ এর টিকা দ্রষ্টব্য)

জ্ঞাতব্যঃ

জান্নাতের চাবি সম্পর্কে ইমাম বুখারি (রহ) একটি অনুচ্ছেদের বিষয়বস্তু আলোচনা করতে গিয়ে ওহাব ইবনু মুনাব্ববিহ (রহ) থেকে যে বর্ণনা এসেছে তা হল-

“লা ইলাহা ইল্লাল্লহ” কি জান্নাতের চাবি? তখন তিনি বলেন, হ্যাঁ। তবে প্রত্যেক চাবির দাত রয়েছে। তুমি যদি এমন চাবি নিয়ে আসো যার দাঁত রয়েছে, তাহলে তোমার জন্য জান্নাত খোলা হবে। অন্যথাই খোলা হবে না।

(বুখারি ১/১৬৫ পৃ হা/১২৩৭ এর পূর্বের আলোচনা দ্রষ্টব্য)

এছারাও আরও অন্নান্য ছহিহ হাদিস দারাও এটা প্রমানিত।

(বুখারি হা/৫৮২৭, মুসলিম হা/২৮৩, )

তাই, “লা ইলাহা ইল্লাল্লহ” হল জান্নাতের চাবি আর শরিয়াতের অন্নান্য আমল-আহাকাম অর্থাৎ সালাত, সিয়াম, হাজ, যাকাত ইত্যদি ওই চাবির দাঁত।

 

হাদিস নং ২।  

সালাত হল দিনের খুঁটি। সুতারাং যে ব্যাক্তি সালাত কায়েম করলো সে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করলো। আর যে ব্যাক্তি সালাত ছেড়ে দিল সে দ্বীনকে ধ্বংস করল।

(কাশফুল খাফা ২/৩২ পৃ, তাযকিরাতুল  মউজুয়াত পৃ ৩৮, ফাজায়েলে আমাল  ২৯ পৃ)

তাহকিকঃ

সমাজে হাদিসটির সমাধিক প্রসার থাকলেও হাদিসটি গ্রহন যোগ্য নয়। ইমাম নাবাবি (রহ) বলেন, এটি বাতিল ও মুনকার।

(কাশফুল খাফা ২/৩১ পৃ,)

হাদিস নং ৩।

রসুল (সা) বলেছেন, সালাত মুমিনের মিরাজ।

(তাফসিরে রাযি ১/২১৮ পৃ, তাফসিরে হাক্কি ৮/৪৫৩ পৃ, মিরকাতুল মাফাতিহ ১/১৩৪ পৃ, “ইমান” অধ্যায়)

তাহকিকঃ

উক্ত বর্ণনার কোন সনদ নাই। এটি ভিত্তিহিন ও বানোয়াট।

হাদিস নং ৪।

আনাস (রা) বলেন, রসুল (সা) বলেছেন, “সালাত মুমিনের নুর”

(মুসনাদে আবি ইয়ালা হা/৩৬৫৫, ফাজায়েলে আমাল  ২৯ পৃ)

তাহকিকঃ

বর্ণনাটি জইফ। মুহাদ্দিস হুসাইন সালিম আসাদ (রহ) বলেন, উক্ত হাদিসের সনদ অত্যন্ত দুর্বল।

(তাহকিক মুসনাদে আবি ইয়ালা হা/৩৬৫৫,)

উক্ত হাদিসের সনদে ইসা ইবনু মাইসারা নামে একজন দুর্বল রাবি আছে।

(সিলসিলাই জইফা হা/১৬৬০)

উল্লেখ্য, ছলাত নুর, সাদাকা দলিল মর্মে মুসলিমে যে হাদিস বর্ণিত হয়েছে তা ছহিহ।

(মুসলিম হা/৫৫৬, মিস্কাত হা/২৮১)

হাদিস নং ৫।

যে বাক্তি জামাতের সাথে ফজরের সালাত আদায় করে সে যেন আদম (আ) এর সাথে পঞ্চাশ বার হজ করে এবং যে বাক্তি জামাতের সাথে যোহরের সালাত আদায় করে সে যেন নুহ (আ) এর সাথে চল্লিশ কিংবা ত্রিশ বার হজ করে। এভাবেই অনন্যা ওয়াক্ত সে আদায় করে।

(হাসান ইবনু মুহাম্মাদ আস-ছাগানি, আল-মউজুয়াত হা/৪৮ পৃঃ ৪২)

তাহকিকঃ

বর্ণনাটি জাল ও মিথ্যা।

(আল-মউজুয়াত হা/৪৮ পৃঃ ৪২)

 

হাদিস নং ৬।

সালমান ফারসি (রা) বলেন, আমি রাসুল (সা) কে বলতে শুনেছি, যে বাক্তি ভোরে ফজরের ছালাতের দিকে আগিয়ে গেলো সে ইমানের পতাকা নিয়ে গেলো। আর যে বাক্তি ভোরে (ফজরের সালাত আদায় না কওরে) বাজারের দিকে  আগিয়ে গেলো সে শয়তানের পতাকা নিয়ে গেলো।

(ইবনু মাজাহ হা/২২৩৪, বঙ্গানুবাদ মিস্কাত হা/৫৮৯)

তাহকিকঃ

উক্ত হাদিসের সনদ অত্যন্ত দুর্বল। এর সনদে উবাইস ইবনু মাইমুন নামক রাবি রয়েছে। ইমাম বুখারি (রহ) সহ অন্যান্য মুহাদ্দিছ গন তাকে মুনকার বলে অভিযোগ করেছে। ইবনু হিব্বান (রহ) বলেন, সে নির্ভরশীল বাক্তির নাম দিয়ে ধারনা পূর্বক বহু জাল হাদিস বর্ণনা করেছে।

(আলবানি, জইফ ইবনু মাজাহ হা/২২৩৪, মিস্কাত হা/৬৪০ টিকা দ্রষ্টব্য)

 

হাদিস নং ৭।

ইমরান ইবনু হুসাইন (রা) বলেন, রাসুল (সা) কে একদা জিজ্ঞাস করা হল, আল্লাহর এই বানি সম্পর্কে-“নিশ্চয়ই সালাত অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে” তখন তিনি বললেন, যাকে তার সালাত অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে না “তার সালাত হয় না”।

(তাফসির ইবনে কাসির; সিলসিলা ই জইফা হা/৯৮৫, ফাজায়েল এ আমাল পৃঃ ১৭২)

তাহকিকঃ

হাদিসটি জইফ। উক্ত বর্ণনার সনদে ইবনু জুনাইদ নামে একজন মিথ্যুক রাবি রয়েছে। মুহাদ্দিসগণ বর্ণনাটিকে মুনকার বলেছেন।

(সিলসিলা ই জইফা হা/৯৮৫৫)

হাদিস নং ৮।

ইবনু আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা) বলেন, যার সালাত তকে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে না তাকে উহা ইসলাম থেকে দূরে সরে দেয়া ছারা আর কিছুই বৃদ্ধি করে না।

(ফাজায়েল এ আমাল পৃঃ ১৭৩, তাবারানি, আল-মুজামুল কাবির হা/১০৮৬২)

তাহকিকঃ

বর্ণনাটি বাতিল বা মিথ্যা। এর সনদে লইস ইবনু আবি সালিম নামক ত্রুতিপূর্ণ  রাবি রয়েছে।

(সিলসিলা ই জইফা হা/২)

জ্ঞাতব্যঃ

উক্ত বর্ণনা প্রমান করে ত্রুটিপূর্ণ কোন বাক্তি সালাত আদায় করলে সালাত কবুল হয়না। সুতারাং সালাত আদায় করে কোন লাভ নাই। কিন্তু উক্ত ধারনা সঠিক নয়। বরং সালাত আদায়ের মাধ্যমে এক সময় সে আল্লাহর অনুগ্রহে পাপ কাজ ছেড়ে দিবে। ছহিহ হাদিসে বর্ণিত হইছে,

আবু হুরাইরা (রা) বলেন, জনৈক বাক্তি রাসুল (সা) এর নিকটে এসে বললেন, অমুক বাক্তি রাতে সালাত আদায় করে আর সকাল হলে চুরি করে। তিনি উত্তরে বললেন, সালাত তাকে অচিরেই তা থেকে বিরত রাখবে।

(আহামাদ হা/৯৭৭৭, মিস্কাত হা/১২৩৭, সনদ ছহিহ)

চলবে……

Print Friendly, PDF & Email
Banner Ad


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

12 COMMENTS

  1. আপনারা জয়ীফ হাদিছ আর জাল হাদীছকে এক করে দেখেন। তা সঙ্গত নয়। বরং বড় ধরণের অপরাধ। এটা এক ধরণের প্রতারনা। আপনারা বুঝে বা না বুঝে যে ভাবেই হোক এটা করে যাচ্ছেন। আল্লাহতালা আমাদের সবাইকে সহি বুঝ দান করুন।
    রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহিসসালামের যে হাদীছটি পোস্টের উপড়ে দিয়েছেন তাতে এখানে জাল হাদীছ সম্পর্কে আলোচনা করার কথা। কিন্তু আপনারা এখানে বা অন্যত্রও তা করেন না। এটা কোন ভাবেই যুক্তিসংগত নয়।
    এ ছাড়া জাল হাদিছ যেগুলোকে বলেছেন সেগুলোর পক্ষে আপনাদের পছন্দনীয় ব্যক্তিদের বর্ণনা দিচ্ছেন। উচিত ছিল পক্ষ ও বিপক্ষ সকল মতামত তুলে ধরে এর পর সিদ্ধান্তে পৌছা।  
    ৮ং হাদীছের মোকাবেলায় যে হাদীছটী উল্লেখ করেছেন তা ফাজায়েলে আমাল এ আছে। আপনারা ৮ং হাদিছের সুত্রে ফাজায়েলে আমালের উল্লেখ করলেন অথচ পরবর্তী হাদীছের সুত্রে ফাজায়েলে আমালের উল্লেখ করেন নি। এটা ভুলে হলে আশা করা যায় আল্লাহতালা মাফ করে দিবেন। আর ইচ্ছাকৃতভাবে হলে এটা কত বড় প্রতারনা হল- সেটা দয়া করে একটু চিন্তা করে দেখবেন কি?
    সমাজে অনেক জাল বা মওজু হাদীছ প্রচলিত আছে। অমেক সময় অনেক ভাল কেতাবে বা অনেক বড় বুজুর্গের লেখা বা কথার মধ্যেও তা থাকতে পারে। এগুলো দুর করার জন্য অবশ্যই ভাল নিয়তে চেষ্টা করতে হবে। ের জন্য অনেক গবেষণা দরকার। গবেষনার ফলাফল বর্ণনার সময়ও সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার। কোন নিশ্চয়তা নেই যে আপনার বা আপনার পছন্দনীয় বুজুর্গদের গবেষণা সঠিক আর অন্যদেরটা ভুল। 
    আল্লাহতালা আমাদের সবাআইকে ভাল নিয়তে দ্বীনের ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা, গবেষণা এবং আমাল করার তৌফিক দান করুন।

আপনার মন্তব্য লিখুন