ইসলামে প্রতিবন্ধীদের সমাদর

2
1668

128

লিখেছেনঃ আব্দুর রাকীব (মাদানী), দাঈ, দাওয়াহ সেন্টার, আল্ খাফজী | ওয়েব সম্পাদনাঃ মোঃ মাহমুদ ইবনে গাফফার

আল্ হামদুলিল্লাহ, ওয়াস্ স্বালাতু ওয়াস্ সালামু আলা রাসূলিল্লাহ, আম্মা বাদঃ-

এতে কোন দ্বীমত নেই যে, প্রতিবন্ধীগণ মানব সমাজের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ধারণা করা যায়, যখন থেকে মানব জাতি বিস্তার লাভ শুরু করেছে, ঠিক তখন থেকে কোন না কোনরূপে প্রতিবন্ধীও অস্তিত্বে এসেছে। তাই তাদের উপেক্ষা করা হলে সমাজের একাংশকে উপেক্ষা করা হবে। যার ফলে সমাজ ও জাতির সার্বিক উন্নয়ন ও সমন্নোতিতে ব্যাঘাত ঘটবে, যা সুসভ্য ও আদর্শ সমাজে অশোভনীয়।

মহান আল্লাহর মনোনিত ধর্ম ইসলামে রয়েছে তাদের উদ্দেশ্যে কিছু সুন্দর বিধান। রয়েছে তাদের মর্যাদা ও অধিকার, যা আমরা অনেকে জানিনা । আমরা এই প্রবন্ধে তারই কিছুটা আলোচনা করার প্রচেষ্টা করবো  ইন্ শাআল্লাহ।

প্রতিবন্ধী কাকে বলে ? 

আভিধানিক অর্থে প্রতিবন্ধী হচ্ছে, দৈহিক শক্তির একান্ত অভাব বা অঙ্গহানি হেতু যাহারা আশৈশব বাধাপ্রাপ্ত, মূকবধির, অন্ধ, খঞ্জ ইত্যাদি। [ সংসদ বাংলা অভিধান/৩৮২]

পারিভাষিক অর্থে প্রতিবন্ধীতা হচ্ছে, দেহের কোন অংশ বা তন্ত্র আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে, ক্ষনস্থায়ী বা চিরস্থায়ীভাবে তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলা। [উইকিপিডিয়া, বাংলা]

অস্বাভাবিক সৃষ্টির রহস্যঃ  মহান আল্লাহ সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা। তিনি ভাল-মন্দেরও সৃষ্টিকর্তা। কিন্তু তাঁর সৃষ্টিকুলের মধ্যে কিছু সৃষ্টিকে আমরা অনেক সময় অস্বাভাবিক ও বিকৃত দেখতে পাই। অনেকে এর দোষটা স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাকে দেয়; অথচ তিনি পুত-পবিত্র দোষমুক্ত, আবার অনেকে সেই সৃষ্টিকেই দোষারোপ করে। এর পিছনে তাঁর উদ্দেশ্য ও রহস্য মহান । সেটা এক মাত্র তিনিই জানেন। তবে কিছু কারণ অনুমান করা যেতে পারে যেমনঃ

[১] যেন বান্দা তাঁর একচ্ছত্র ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে পারে যে, তিনি সব বিষয়ে ক্ষমতাবান। তিনি যেমন স্বাভাবিক সুন্দর সৃষ্টি করতে সক্ষম, তেমন তিনি এর ব্যতিক্রমও করতে সক্ষম।

[২] আল্লাহ যাকে এই আপদ থেকে নিরাপদে রেখেছেন সে যেন নিজের প্রতি আল্লাহর দয়া ও অনুকম্পাকে স্মরণ করে, অতঃপর তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। কারণ আল্লাহ চাইলে তার ক্ষেত্রেও সেইরকম করতে পারতেন।

[৩]  প্রতিবন্ধীকে আল্লাহ তাআলা এই বিপদের বিনিময়ে তাঁর সন্তুষ্টি, দয়া, ক্ষমা এবং জান্নাত দিতে চান। নবী (সাঃ) বলেনঃ ‘‘আমি যার দুই প্রিয়কে (দুই চোখকে) নিয়ে নিই, অতঃপর সে ধৈর্য ধরে ও নেকীর আশা করে, তাহলে আমি তার জন্য এর বিনিময়ে জান্নাত ছাড়া অন্য কিছুতে সন্তুষ্ট হই না।’’  [সহীহ তিরমিযী, নং ১৯৫৯]

প্রতিবন্ধীর প্রতি শারয়ী কর্তব্যঃ

[১] যেন সে ধৈর্যধারণ করে এবং সন্তুষ্ট থাকে কারণ এটি ভাগ্যর লেখা,যা ঈমানের অঙ্গ। মহান আল্লাহ বলেনঃ পৃথিবীতে এবং ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর কোন বিপদ আসে না; কিন্তু তা জগৎ সৃষ্টির পূর্বেই কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ। এটা এ জন্যে, যাতে তোমরা যা হারাও তাতে দুঃক্ষিত না হও এবং তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তাতে উল্লসিত না হও। আল্লাহ উদ্ধত ও অহংকারীকে পছন্দ করেন না।)  [ হাদীদ/২২-২৩]

[২] যেন সে বিশ্বাস রাখে যে, আল্লাহ যখন কোন মুমিনকে পরীক্ষায় ফেলেন, তখন তিনি তাকে ভালবাসেন এবং অন্যান্যদের থেকে তাকে বেশি অগ্রাধিকার দেন। তাই তিনি নবীগণকে সবচেয়ে বেশি বিপদাপদের মাধ্যমে পরীক্ষা করেছিলেন। নবী (সাঃ) বলেনঃ “ নবীগণ সব চেয়ে বেশি পরীক্ষিত হন, অতঃপর তাদের থেকে যারা নিম্ম স্তরের। মানুষকে তার দ্বীন অনুযায়ী পরীক্ষা নেওয়া হয়, যদি তার দ্বীনী অবস্থা প্রবল হয়, তাহলে তার বিপদও কঠিন হয়। আর যদি তার দ্বীন দুর্বল হয়, তাহলে তার পরীক্ষা সে অনুপাতে হয়। বিপদ বান্দার পিছু ছাড়েনা পরিশেষে তার অবস্থা এমন হয় যে, সে পাপ মুক্ত হয়ে যমীনে চলা-ফেরা করে। [সহীহ তিরমিযী নং১৪৩,ইবনু মাজাহ]

[৩] প্রতিবন্ধী ব্যক্তি যেন মনে রাখে যে, দয়াবান আল্লাহ মুমিনকে তার প্রত্যেক বিপদের বদলা দেন, যদিও সেই বিপদ নগণ্য হয়, এমনকি কাঁটা বিধলেও। নবী (সাঃ) বলেনঃ ‘‘মুসলিম ব্যক্তিকে কষ্ট, ক্লান্তি, দুঃখ, চিন্তা, আঘাত, দুশ্চিন্তা গ্রাস করলে এমন কি কাঁটা বিধলেও আল্লাহ তাআলা সেটা তার পাপের কাফ্ফারা করে দেন’’। [ বুখারী, মুসলিম]

[৪] মুমিন প্রতিবন্ধী যেন তার নির্দিষ্ট প্রতিবন্ধীতাকে ভুলে গিয়ে শরীরের বাকি অঙ্গগুলোকে কাজে লাগায়। কারণ কোন এক অঙ্গের অচলতা জীবনের শেষ নয়। তাছাড়া দেখা গেছে, যার পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের কোন একটি অচল তার বাকি ইন্দ্রিয় বা অঙ্গগুলো বেশি কিংবা দ্বীগুণ সচল।

প্রতিবন্ধীদের জন্য আমাদের করণীয়ঃ

[১] নিজের সুস্থতা ও আরোগ্যতার কারণে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং প্রতিবন্ধী ভাইদের জন্য দুআ করা।

[২] যথাসম্ভব প্রতিবন্ধীদের সাহায্য-সহযোগিতা করা। সেটা অন্ধ ব্যক্তিকে রাস্তা চলায় সাহায্য করা হোক কিংবা তাদের জীবন-যাপনের ক্ষেত্রে সাহায্য করা হোক কিংবা তাদের শিক্ষাদানে সহযোগিতা হোক। সুস্থদের সামান্য সাহায্যে তাদের জীবন-যাপন সহজ হতে পারে, তাদের মুখে ফুটতে পারে হাসি এবং তারা দাঁড়াতে পারে সমাজের সবার সাথে এক লাইনে।

মনে রাখা দরকার, প্রতিবন্ধীর দেখাশোনা করা তার উপর জরূরী, যে তার অভিভাবক। আর সমষ্টিগত ভাবে সকল মুসলিমের জন্য ফরযে কিফায়া। অর্থাৎ সমাজের কিছু লোক তাদের দেখা-শোনা করলে বাকি লোকেরা গুনাহগার হবে না।

[৩] বিশেষ করে তাদের এমন শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া যার ফলে তারা নিজের প্রয়োজনীয় কাজ নিজে করতে পারে এবং নিজে রোজগার করে স্বয়ং সম্পন্ন হতে পারে।

ইসলামে প্রতিবন্ধীর মর্যাদাঃ

[১] সবাই সমান, আর তাক্বওয়াই হচ্ছে মানুষ মর্যাদার মান-দন্ডঃ ইসলামে মানব মর্যাদার মাপ-কাঠি রং, বর্ণ, ভাষা, সৌান্দর্য্যতা, সুস্থতা, ইত্যদি নয়। বরং মান-দন্ড হচ্ছে তাক্বওয়া তথা আল্লাহ ভিরুতা। যে যত বেশি মুত্তাকী আল্লাহ তাকে তত বেশি ভাল বাসেন। এই মাপ-কাঠির মাধ্যমে ইসলাম প্রতিবন্ধী ও অপ্রতিবন্ধীর মাঝে ভেদাভেদ দূরীভূত করেছে এবং উভয়কে সমমর্যাদা দান করেছে। আল্লাহ বলেনঃ হে মানুষ ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে, পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদা সম্পন্ন যে অধিক মুত্তাকী। [হুজুরাত/১৩]

নবী (সাঃ) বলেন: ‘‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের শরীর ও আকৃতির দিকে দেখেন না বরং তোমাদের অন্তরের দিকে দেখেন।’’   [মুসলিম]

[২] নর-নারী যেন এক অপরের উপহাস না করেঃ প্রতিবন্ধীর সমস্যা প্রতিবন্ধীই বেশি জানে কিন্তু যখন কোন সুস্থ ব্যক্তি তাকে উপহাস করে তখন সে দারুণ ভাবে মর্মাহত হয়। তাই ইসলাম সুস্থ হলেও এক অপরের উপহাস করা নিষেধ করেছে। আল্লাহ বলেনঃ হে মুমিনগণ! কোন পুরুষ যেন অপর কোন পুরুষকে উপহাস না করে; কেননা, যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর কোন নারীকেও যেন উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। [হুজুরাত/১১]

[৩] সামাজিক স্বীকৃতিঃ প্রাচীন যুগে অনেকে প্রতিবন্ধীদের উপেক্ষা করতো, তাদের সামাজিক মান-মর্যাদা দেওয়া হত না। এমনকি এখনও কিছু সমাজে তা দেখা যায়। যার ফলে বর্তমানে আন্তর্জাতিক আইন তৈরি করে তাদের অধিকার দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাঃ) ১৪শত বছর পূর্বে বারংবার তাঁর অনুপস্থিতির সময় মদীনার মসজিদের ইমামতির দায়িত্ব এক প্রতিবন্ধী  সাহাবীকে অর্পন করে তাদের সমাজের সর্ব্বোচ্চ সম্মানে অধিষ্ঠিত করার নজীর তৈরি করেন। তিনি সেই প্রতিবন্ধী সাহাবীকে আযান দেওয়ার কাজেওে নিযুক্ত করেছিলেন। সেই সম্মানীয় প্রতিবন্ধী সাহাবী হচ্ছেন আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম। [দেখুন, বুখারী, অধ্যায়ঃ মাগাযী, অনুচ্ছেদ, বদরের যুদ্ধ এবং অহুদের যুদ্ধ]

[৪] শরীয়তের বিধান বাস্তবায়নে ছাড় প্রদানঃ ফিক্হ মূলনীতির একটি প্রসিদ্ধ মূলনীতি হচ্ছে, ‘‘লা তাকলীফা ইল্লা বিমাক্বদূরিন্ আলাইহ্ ’’।

অর্থাৎ শারয়ী আদেশ জরূরী নয় কিন্তু ক্ষমতাবানের প্রতি। এই ফিক্হী মূলনীতিটির  ব্যখ্যা হচ্ছে, প্রত্যেক ফরয বিধান যা মহান আল্লাহ মানুষের প্রতি ধার্য করেছেন, যদি মানুষ তা পালনে সক্ষম হয়, তাহলে তার প্রতি তা পালন করা আবশ্যিক হবে, সে প্রতিবন্ধী হোক বা অপ্রতিবন্ধী। আর যদি সম্পূর্ণরূপে সে তা বাস্তবায়ন করতে অক্ষম হয়, তাহলে তা থেকে সে মুক্তি পাবে। আর যদি কিছুটা করতে সক্ষম হয় এবং কিছুটা করতে অক্ষম হয়, তাহলে যেই পরিমাণ করতে সক্ষম হবে, সেই পরিমাণ তাকে পালন করতে হবে এবং যেই পরিমাণ করতে অক্ষম হবে, সেই পরিমাণ থেকে সে ছাড় পেয়ে যাবে। এর প্রমাণে আল্লাহর বাণী, তিনি বলেনঃ আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না। [বাক্বারাহ/২৮৬] 

এবং নবী (সাঃ) বলেনঃ‘‘যখন আমি তোমাদেরকে কোন আদেশ করি, তখন তা বাস্তবায়ন কর যতখানি সাধ্য রাখ’’।    [বুখারী, মুসলিম]

ইসলামের এই মনোরম বিধানে প্রতিবন্ধীদের জন্য রয়েছে সহজতা ও সহনশীলতা। তাই এমন প্রতিবন্ধী, যে ইসলামের বিধান পালনে একে বারে অক্ষম যেমন পাগল ও জ্ঞানশূন্য ব্যক্তি, তার উপর ইসলাম কোন বিধান জরূরী করে না। আর আংশিক প্রতিবন্ধী যে কিছুটা করতে সক্ষম তার প্রতি অতটুকুই পালনের আদেশ দেয়। যেমন যদি কারো অর্ধ হাত কাটা থাকে তাহলে যতটুকু অংশ বাকি আছে অযুর সময় ততটুকু ধৌত করতে আদেশ দেয়। অনুরূপ প্রতিবন্ধকতার কারণে নামাযে দাঁড়াতে না পারলে বসে আদায় করার আদেশ দেয়। এইভাবে অন্যান্য অবস্থা।

প্রতিবন্ধী  প্রশিক্ষণে  আধুনিক ব্যবস্থা গ্রহণঃ

প্রতিবন্ধী শিক্ষা-প্রশিক্ষণে বর্তমান যুগে বিভিন্ন ধরনের উপকরণ আবিষ্কৃত হয়েছে, যেমন স্পষ্ট হস্তলিপি, সাঙ্কেতিক ভাষা, হুইল চেয়্যার, চলন্ত চেয়্যার, কম্পিউটার প্রোগ্রাম ইত্যাদি। এই রকম যাবতীয় উপকারি উপকরণ ব্যবহার বৈধ। আমাদের এ সবের মাধ্যমে তাদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত। কিন্তু শরীয়ত অবৈধ করেছে এমন উপকরণ গ্রহণ করা যাবে না।

প্রতিবন্ধী প্রশিক্ষণে পাশ্চাত্য থিউরি হতে সাবধানঃ

প্রতিবন্ধী প্রশিক্ষণে পাশ্চাত্য থিউরি হচ্ছে, ‘দুনিয়ার এ জীবনই শেষ জীবন’ ।

অন্য ভাষায় ‘জিন্দেগী না মিলেগী দোবারা’।

অর্থাৎ পৃথিবীর জীবনটাই শেষ জীবন এর পরে কোন জীবন নেই। তাই এটাকে উপভোগ করো, যতখানি পার, যে ভাবে পার। ধর্ম, সমাজ এবং প্রচলিত রিতি-নীতি যেন দুনিয়া উপভোগ করা থেকে বাধা না হয়। তারা যেমন এই থিউরিকে সাধারণের জন্য করে নিয়েছে তেমন প্রতিবন্ধীদের জন্যও করেছে। তাই তারা মনে করে, যদি কোন প্রতিবন্ধী মদ পান করে আনন্দ পায়, তাহলে সে তা পান করুক। যদি কেউ গান ও মিউজিকের মাধ্যমে মজা পায়, তাহলে সে সেটাই গ্রহণ করুক। যদি কেউ ফিল্ম , নাচ-গান এমনকি মানবতা লজ্জা পায় এমন ফিল্মও পছন্দকারী হয়, তাহলে সে নিজে তা করুক কিংবা উপভোগ করুক,আপত্তি থাকবে না।

প্রিয় পাঠক! আমরা মুসলিম। আমাদের জীবন-যাপনের সুন্দর নিয়ম আছে, যা ইসলাম আমাদের প্রদান করেছে। কিন্তু যাদের কোন ধর্ম নেই, নেই আদর্শ বরং নিজেরাই তৈরি করে নিজের জীবনাদর্শ, তারাই উপরের থিউরির আবিষ্কারক, যা আমাদের জন্য কখনও গ্রহনীয় নয় বরং নিন্দনীয়। কারণ মহান আল্লাহ এসব থেকে আমাদের নিষেধ করেছেন।

ছিটেফোঁটাঃ

  • বলা হয়েছে, বর্তমান পৃথিবীর মানব সম্প্রদায়ের প্রায় ১০% লোক প্রতিবন্ধীর সমস্যায় পীড়িত।
  • প্রাচিন যুগে রোম সম্প্রদায়, যারা যোদ্ধা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছিল, তারা বধিরকে আইনানুযায়ী বোকা ও হাবলা বলে আখ্যায়িত করে তাদের থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছিল।
  • মিসরের ফেরাউন রাজা সম্প্রদায় প্রতিবন্ধী শিশুদের হত্যা করতো।
  • বিশিষ্ট দার্শনিক আরাসতু (এরিস্টল) বধির প্রতিবন্ধী সম্বন্ধে মন্তব্য করেন যে, তাদের শিক্ষা দেওয়া অসম্ভব।
  • দার্শনিক আফ্লাতূন তাদের শহর থেকে বের করে দেওয়ার মত প্রকাশ করে, কারণ তাদের দ্বারা শহর নির্মাণের কাজ অসম্ভব।
  • বানু উমাইয়্যা রাজত্বে বাদশাহ উমার বিন আব্দুল আযীয প্রথম প্রতিবন্ধী শুমারীর আদেশ প্রদান করেন।
  • খলিফা ওলীদ বিন আব্দুল মালিক সর্ব প্রথম কুষ্ঠরোগের হাসপাতাল নির্মাণ করেন।
  • ইমাম আবু হানীফা (রাহেঃ) কাযী থাকাকালীন বায়তুল মাল থেকে প্রতিবন্ধীদের খরচ দেওয়ার আইন জারী করেন।
  • খলীফা মামুন বাগদাদ সহ অন্যান্য বড় শহরগুলিতে অন্ধালয় এবং দুর্বল অপারগ মহিলালয় নির্মাণ করেন।
  • সুলতান কালাউন প্রতিবন্ধীদের জন্য বেমারিস্তান নির্মাণ করেন।
  • বিশিষ্ট তফসীরবিদ রাযী ‘দারাজাতু ফুক্দানিস্ সাম’ ( শ্রবন শক্তি বিলুপ্ততার স্তর) নামক বই লেখেন।
  • অন্ধ প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার উদ্দেশ্যে স্পষ্ট হস্তলিপি ব্রাইলের বহু পূর্বে মুসলিমগণ আবিষ্কার করেন।
  • আবান্ বিন উসমান একজন প্রতিবন্ধী ‘ফকীহ’ ছিলেন।
  • মুহাম্মদ বিন সিরীন শ্রবন প্রতিবন্ধতার পরেও একজন বিশিষ্ট স্বপ্নের তা’বীরবিদ ও হাদীস বর্ণনাকারী ছিলেন।
  • বিগত সউদী গ্রান্ড মুফতী সামাহাতুশ্ শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায অন্ধ ছিলেন।
  • সউদী আরবের বর্তমান গ্রান্ড মুফতীও অন্ধ প্রতিবন্ধী।
  • বর্তমানে মদীনার মুহাদ্দিস এবং মসজিদে নববীতে হাদীসের দারস প্রদানকারী শাইখ আব্দুল মুহসিন আল্ আব্বাদ এক জন অন্ধ প্রতিবন্ধী। (তিনি লেখকের সম্মানীয় শিক্ষক)

[তথ্যসূত্র, ‘মাজাল্লাতুল্ হিকমাহ’ সপ্তম সংখ্যা এবং বিভিন্ন আরবী ওয়েব সাইট]

Print Friendly, PDF & Email
Banner Ad


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

2 COMMENTS

  1. প্রিয় লেখক, এরকম ভিন্ন একটি বিষয় নিয়ে লিখার জন্যে আল্লাহ আপনাকে উত্তমরূপে পুরস্কৃত করুন। খুবই সময়োপযোগী প্রবন্ধ। তবে কিছু কিছু শব্দচয়নের ক্ষেত্রে আরও শ্রুতিমধুর কিছু শব্দের ব্যবহার করলে ভালো লাগতো। যেমন অন্ধ প্রতিবন্ধী এর জায়গায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। Edit করার সুযোগ থেকে থাকলে আমি সাহায্য করতে পারতাম। আশা করি জানাবেন। :)

  2. প্রিয় লেখক, এরকম ভিন্ন একটি বিষয় নিয়ে লিখার জন্যে আল্লাহ আপনাকে উত্তমরূপে পুরস্কৃত করুন। খুবই সময়োপযোগী প্রবন্ধ। কিন্তু শব্দচয়নের ক্ষেত্রে আরও শ্রুতিমধুর শব্দের ব্যবহার করলে আরও ভালো লাগতো। যেমন অন্ধ প্রতিবন্ধী এর পরিবর্তে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। Edit করার সুযোগ থাকলে আমি এ ব্যাপারে সাহায্য করতে পারি। জানাবেন আশা করি। :)

আপনার মন্তব্য লিখুন