ইসলামে ‘তাকওয়া’র স্বরূপ ও সমাজ জীবনে এর প্রভাব~ পর্ব~ ১

2
4681

লিখেছেনঃ ড. মোঃ ছানাউল্লাহ । ওয়েব সম্পাদনাঃ মোঃ মাহমুদ ইবনে গাফফার

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

পর্ব~ ১ | পর্ব~ ২ | পর্ব~ ৩

একজন মুসলিমের সামাজিক জীবনমানের অপরিহার্য ও অনিবার্য গুণ হল তাকওয়া। এর অর্থ বেঁচে থাকা, সাবধানতা অবলম্বন করা ও ভয় করা। সাধারণত যে বোধ মানবীয় সহজাত প্রবৃত্তি (নফস) মানুষকে অন্যায়, অশ্লীল, খারাপ ও অনিষ্টিকর কথা, কাজ ও চিন্তা থেকে বিরত রাখে মুলত সেটাই হচ্ছে তাকওয়া। আর এ তাকওয়াই সমাজে মানবতাবোধ, নীতিবোধ ও মূল্যবোধ নামে পরিচিত। উঁচু-নিচু, ধনী-গরীব, সাদা-কালো নির্বিশেষে যে কোন মুসলিম নারী পুরুষ তাকওয়া অবলম্বন করে তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক তথা সামগ্রিক জীবন পরিচালনা করেন, তিনি ইসলামের দৃষ্টিতে মু্ত্তাকী নামে পরিচিত। মানুষের জীবনে সাফল্য অর্জনে তাকওয়ার প্রভাব অনবদ্য ও অপরিমেয়। বিশেষ করে সকল মুসলিমের সমাজ জীবনে তাকওয়ার সুদূর প্রসারী প্রভাব অনস্বীকার্য। সামাজিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনয়নে তাকওয়া তথা সুস্থ মানসিকতা, মননশীলতা ও আল্লাহ ভীতির কোন বিকল্প হয় না। বর্তমান প্রবন্ধে উপর্যু্ক্ত দিকগুলোর পযালোচনা কুরআন, সুন্নাহ ও যুক্তির আলোকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।

তাকওয়া পরিচিতি

‘তাকওয়া’ শব্দটি ইসলামের একটি মৌলিক পরিভাষা। এর আভিধানিক অর্থ হল- ভালভাবে বেঁচে থাকা , পরহেয করা, রক্ষা করা, দূরে থাকা, সচেতনতা, জবাবদিহীতা, সচ্ছতা, বিরত থাকা ও সাবধান থাকা। যিনি তাকওয়া অবলম্বন করেন, তাকে বলা হয় ‘মুত্তাকী’ আল্লামা যামাখশারী [৫৬৭-৫৩৮ হি.] বলেন, শাব্দিকভাবে ‘মুত্তাকী’ কর্তাবাচক বিশেষ্য, যা আরবদের কথা ‘ওয়াক্বাহু ফাত্তাক্বা’- ‘সে তাকে বাঁচিয়েছে, ফলে সে বেঁচে গেছে’ থেকে এসেছে। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন: “তোমরা সে আগুন থেকে বেঁচে থাক, যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর।[2]

অন্যত্র বলা হয়েছে: “আল্লাহুর শাস্তি থেকে তাদের রক্ষাকারী কেউ নেই।[3]

যে ঘোড়া কাঁদা ও ধুলোবালি থেকে নিজ ক্ষুর বাঁচিয়ে রাখে তাকে ‘ফারাস ওয়াক্বি’ বলা হয়। কারণ কষ্টদায়ক সামান্য কিছুর স্পর্শ থেকেও সে তার ক্ষুরকে রক্ষা করে।” [4]

আভিধানিকভাবে তাকওয়া শব্দের আর এক অর্থ হল- ভয়, সতর্কতা ও জবাবদিহিতা। ‘তাকওয়াল্লাহ’ মানে ‘আল্লাহ্‌র বিষয়ে সতর্ক হওয়া’ [5] তাঁর (আল্লাহর) যাবতীয় নির্দেশসমূহ প্রতিপালন ও সকল নিষেধাধ্জ্ঞা থেকে দূরে থাকা, বেঁচে থাকার মাধ্যমে আল্লাহকে ভয় করা [6] এই দ্বিতীয় অর্থে পবিত্র কুরআনের অনেক আয়াতে তাকওয়া শব্দের ব্যবহার রয়েছে।

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর।[7]

নূহ (আ:) , হূদ (আ:), সালেহ (আ:), লুত (আ:) এবং শুআইব (আ:) নিজ নিজ জাতিকে বলেছিলেন: “তোমরা কি আল্লাহ্‌কে ভয় করবে না?[8] তাঁরা এও বলেছিলেন, “তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার অনুসরণ কর।[9]

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, তাকওয়া শব্দটি আভিধানিকভাবে দু’টি অর্থ ধারণ করে। এক, আত্মরক্ষা, বেঁচে থাকা, বিরত থাকা, মুক্ত থাকা, রক্ষা করা ও পরহেয করা। দুই, ভয়-ভীতি তথা কোন প্রকার অনিষ্ট ও ক্ষতিকর বিষয় থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার চিন্তা মিশ্রিত ভয় । [10] ইসলামী শরী’আতের পরিভাষায় তাকওয়া অর্থ হল, আল্লাহ্‌ তা’আলার ভয়ে নিষিদ্ধ বস্তুসমূহ হতে দূরে থেকে ইসলাম নির্ধারিত পথে চলার আপ্রাণ চেষ্টা করা। অথবা, যে কাজ করার কারণে মানুষকে আল্লাহ্‌র শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে, তা থেকে নিজেকে রক্ষা করা হচ্ছে তাকওয়া। আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে প্রাপ্ত করুণা, ভালবাসা, দয়া ও অনুগ্রহ হারানোর ভয় অন্তরে সদা জাগ্রত থাকার নাম তাকওয়া । [11]

মুত্তাকীর পারিভাষিক সংজ্ঞায় কাযী নাসিরুদ্দীন বায়যাবী (রা:) [মৃ. ৬৮৫ হি] বলেন: “শরীয়তের পরিভাষায় মুত্তাকী বলা হয় ঐ ব্যক্তিকে যিনি নিজেকে এমন সব কিছু থেকে রক্ষা করেন, বাঁচিয়ে রাখেন, যা তাকে পরকালে ক্ষতির সম্মুখিন করবে।[12]

আবু মুহাম্মদ আল হুসাইন ইব্‌ন মাসউদ আল বগবী (রা:) [মৃ. ৫১০ হি] বলেন: “মুত্তাকী ঐ ব্যক্তি, যিনি শির্‌ক, কবীরা গুনাহ ও সকল প্রকার অশ্লীলতা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখেন। মুত্তাকী শব্দটি আল ইত্তিকাউ থেকে নির্গত। এর প্রকৃত অর্থ হচ্ছে দু‘বস্তুর মাঝখানের অন্তরাল-দেয়াল। যেমন এক হাদীসে আছে, সাহাবায়ে কিরামের উক্তি, “যুদ্ধক্ষেত্রে প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হলে আমরা রাসূলুল্লাহ (সা)-কে আড়াল করে থাকতাম। অর্থাৎ যখন যুদ্ধের তীব্রতা বেড়ে যেত তখন আমরা রাসূলুল্লাহ (সা)-কে আমাদের ও শুক্রদের মাঝখানে অন্তরায় করে রাখতাম। সুতরাং মুত্তাকী আল্লাহর আদেশ পালন এবং তাঁর নিষেধাজ্ঞা থেকে বিরত থাকাকে তার এবং আল্লাহর শাস্তির মাঝখানে অন্তরায় তৈরী করে বলেই তাকে মুত্তাকী বলা হয়।[13]

আল্লামা জারুল্লাহ যামাখশারী (রা:) [মৃত. ৫৩৮ হি] বলেন: “ইসলামী শরীআতের পরিভাষায় মুত্তাকী হল ঐ ব্যক্তি, যে নিজ সত্তাকে রক্ষা করে এমন বিষয় থেকে, যার জন্য সে শাস্তির উপযোগী হয়ে যায়; সেটি করণীয় হোক বা বর্জনীয়। [14]

পবিত্র কুরআনে তাকওয়া

পবিত্র কুরআনের পনের জায়গায় তাকওয়া শব্দটির উল্লেখ রয়েছে।” [15] ‘আল-মুত্তাকুন’ শব্দের উল্লেখ রয়েছে মোট ছয় জায়গায় এবং ‘আল-মুত্তাক্বীন’ শব্দের উল্লেখ রয়েছে মোট ৪৩ জায়গায়। [16] এছাড়া ‘আলবিকায়াতু’ ও ‘আল-ইত্তিকাউ’ শব্দমূল থেকে গঠিত বিশেষ্য-বিশেষণ বা ক্রিয়ারূপে ব্যবহার রয়েছে প্রায় দু’শ জায়গায়। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত করণীয় বা বর্জনীয় প্রায় প্রত্যেকটি বিষয়ের বর্ণনার সাথে ‘তাকওয়া’ শব্দটির উল্লেখ রয়েছে। ‘তাকওয়া’র আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থের সাথে মিল রেখে প্রাসঙ্গিক বিষয়ের অর্থ নির্ধারণ করা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ এর কিছু নিম্নে বর্ণনা করা হলো:

তাকওয়া অর্থ ঈমান। যেমন, আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “কুরআন মাজীদ মুত্তাকীদের তথা মু’মিনদের জন্য পথপ্রদর্শক।[17]

অন্যত্র বলা হয়েছে: “আর তিনি তাদের জন্য তাকওয়ার বাণী তথা তাওহীদের বাণী অর্থাৎ ঈমান অবধারিত করে দিলেন।[18]

আরো বলা হয়েছে: “তারাতো ঐ ব্যক্তি যাদের অন্তরসমুহকে আল্লাহ তা‘আলা তাকওয়ার তথা ঈমানের জন্য নির্বাচন করেছেন।[19] “ফিরআউন সম্প্রদায়, তারা কি তাকওয়া অবলম্বন তথা ঈমান গ্রহণ করবে না?” [20]

তাকওয়া অর্থ তাওবা-অনুশোচনা। যেমন, “আর যদি গ্রামের অধিবাসীরা ঈমান গ্রহণ করে ও তাকওয়া অবলম্বন করে অর্থাৎ তওবা করে তবে তাদের জন্য আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর কল্যাণসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম।[21] তাকওয়া অর্থ আনুগত্য। যেমন, “তোমরা ভীত হও যে, আমি ছাড়া আর কোন মা’বুদ নেই। সুতরাং তোমরা আমারই আনুগত্য কর।[22] অতএব, “তোমরা কি আল্লাহ ছাড়া আর কারও আনুগত্য করছ?[23]আর তোমরা ঘরের দরজা দিয়ে প্রবেশ কর এবং আল্লাহকে ভয় কর অর্থাৎ তাঁর অবাধ্য হয়ো না।[24]

তাকওয়া অর্থ নিষ্ঠা-আন্তরিকতা বা একাগ্রতা। যেমন: “আর নিশ্চয়ই এটি মনের তাকওয়া অর্থাৎ মনের একাগ্রতা।” [25]

তাকওয়া হচ্ছে মূল্যবোধ, মানসিক শুদ্ধতা ও দৃঢ়তা। এটি যে কোন ধরনের পদঙ্খলন থেকে মানুষকে রক্ষা করে; সকল মন্দ ও অশ্লীল কথা, কাজ ও পরিবেশ থেকে ফিরিয়ে রাখে; ‘খাহেশাতে নাফসানী’ তথা প্রবৃত্তির খেয়াল-খুশি বা অভিলাষ ও দুষ্টচক্রের ফাঁদে পড়ে নিজের ক্ষতি করা থেকে এবং পরিবার, সমাজ ও দেশের ক্ষতি করা থেকে রক্ষা করে। জনমানব শূন্য নির্জন স্থানে বা দুর্নীতি করার অসংখ্য সহজ পথ উন্মুক্ত থাকার পরও যে শক্তি মানুষকে তাতে লিপ্ত হওয়া থেকে মুক্ত রাখে তা-ই তাকওয়া। যাদের মনে তাকওয়া রয়েছে, তাদের ওপর শয়তান তথা দুষ্টচক্রের আক্রমণ ঘটার সাথে সাথেই তারা সতর্ক হয়ে যায় এবং তখনই তাদের বিবেচনা শক্তি জগ্রত হয়ে উঠে। [26]

তাকওয়া মানুষের মধ্যে ন্যায়-অন্যায় ও সত্য-মিথ্যা পার্থক্য করার শক্তি জাগ্রত করে। আল্লাহ তাআলা এ প্রসঙ্গে বলেন: “হে বিশ্বাসীগণ, যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তাকওয়া অর্জন কর, তবে তিনি তোমাদের ভাল-মন্দ পার্থক্য করার শক্তি দান করবেন।… [27]

অর্থাৎ তাকওয়ার ফলে মানুষের বিবেক বুদ্ধি প্রখর হয় এবং সুষ্ঠ বিচার-বিবেচনা শক্তি জাগ্রত হয়। তাই সে সত্য-মিথ্যা ন্যায়-অন্যায় ও ভাল-মন্দ চিনতে এবং তা অনুধাবন করতে ভূল করে না। তার হাতে তাকওয়ার আলোকবর্তিকা থাকার ফলে জীবন পথের মন্দ দিকসমূহ সে স্পষ্টত দেখতে পায়। বিবেচনার শক্তির প্রখরতা ও বুদ্ধিদীপ্ততা তার মধ্যে এমনভাবে কাজ করে যে, তার কাছে তখন ইহ-পারলৌকিক যে কোন বিষয়ের কোনটি সঠিক আর কোনটি ভূল তা স্পষ্টতই ধরা পরে। ফলে সে কোন সংশয়, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, ইতস্তত, দুর্বলতা ও হীনমন্যতা ছাড়াই দিবালোকের মত সুস্পষ্ট ও সঠিক পথে চলতে সক্ষম হয়। আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেন, “হে মু’মিনগণ ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর-তাকওয়া অর্জন কর এবং তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। তিনি নিজ অনুগ্রহের দ্বিগুন প্রতিদান তোমাদেরকে দিবেন এবং তোমাদেরকে দিবেন জ্যোতি-আলো, যার সাহায্যে তোমরা পথ চলবে। [28]

অর্থাৎ তাকওয়া জীবনকে এমন এক সুদৃঢ় ভিত্তির উপর স্থাপন করে, যা সকল প্রকার ভয়-ভীতি, লোভ-লালসা, প্ররোচনা-প্রতারণা, প্রলভন-পদস্খলন থেকে মানুষকে নিরাপদ রাখে। অন্ধকারাচ্ছন্ন গভীর সমুদ্রে কম্পাস বা দিক-দর্শন যন্ত্র যেমন সমুদ্রভিযাত্রীকে সঠিক দিক-নির্দেশনা দিয়ে থাকে, সমস্যা-সংকুল জীবন পথে তাকওয়াও তেমনি মানুষকে নির্ভূল পথের সন্ধান দেয়। তাকওয়া একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। শিষ্টের লালন ও দুষ্টের দমন নীতির পরিচায়ক একটি শক্তি। ভালকে গ্রহণ করার তীব্র আগ্রহ এবং মন্দকে পরিহার করে চলার দৃঢ় মনোবলই হচ্ছে তাকওয়া। মানুষের সকল সৎগুণের সঞ্জীবনী শক্তি হচ্ছে তাকওয়া। এ ক্ষেত্রে তাকওয়ার অধিকারী ব্যক্তিদের ইতবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মকাণ্ডের বর্ণনা সম্বলিত নিম্নোক্ত আয়াতগুলো প্রণিধানযোগ্য। যেমন, “এ গ্রন্থ (আল কুরআন) পথ প্রদর্শণকারী পরহেযগারদের জন্য। পরহেযগার হচ্ছে তারা, যারা অদৃশ্য বিষয়ের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে, নামায প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবিকা দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে; এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করে, সেসব বিষয়ের ওপর যা কিছু আপনার ওপর অবতীর্ণ করা হয়েছে, এবং যা কিছু আপনার পূর্ববর্তীদের ওপর অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং তারা আখিরাতের প্রতিও দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করে।[29]

এখানে তাকওয়ার অর্থ হচ্ছে সৎকাজ সম্পাদন করা। কারণ, অন্য আয়াতে বলা হয়েছে: “পবিত্র কুরআন সৎকর্মশীলগণের জন্য পথপ্রদর্শক ও অনুগ্রহ স্বরূপ।[30]  আর সৎকর্মশীলগণের পরিচয়ে তা-ই বলা হয়েছে, যা মুত্তাকীগণের পরিচয়ে বিধৃত হলো।

অন্যত্র বলা হয়েছে: “শুধমাত্র পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ ফিরানোর মধ্যে কোন কল্যাণ নেই; বরং কল্যাণ হচ্ছে, যে ঈমান আনবে আল্লাহ্‌র ওপর, কিয়ামত দিবস, ফেরেশতাগণ, আসমানী কিতাবসমূহ ও নবী-রাসূলগণের ওপর; আর তাঁরই ভালবাসার মানসে আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন, মুসাফির-পথিক, ভিক্ষুক ও সর্ব প্রকার দাসত্ব থেকে মানুষকে মুক্তির জন্য সম্পদ ব্যয় করবে; আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত প্রদান করে; আর যারা তাদের অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ করে যখন তারা অঙ্গীকার করে এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্যধারণকারী। আর তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই তাকওয়া অবলম্বনকারী-মৃত্তাকী।[31]

তারাই হল সত্যাশ্রয়ী’ অংশের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে: “আয়াতে বর্ণিত বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীন কর্মকান্ডসমূহ যখন তারা নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করবে তখনই তারা মুত্তাকীরূপে পরিগণিত হবে। [32]

“তারাই তো সেসব লোক যারা সত্য প্রমাণিত করেছে, আর তারাই হল মুত্তাকী” আয়াতাংশের ব্যাখ্যায় আবূ হাইয়্যান (রা:) বলেছেন: “সত্যবাদীতা দিয়ে এখানে কথাবার্তায় সত্যবাদীতা বোঝানো হয়ে থাকতে পারে; যদি তা-ই হয় তবে তা হবে মিথ্যার বিপরীত। তখন এর অর্থ হবে তাদের কথাবার্তা তাদের তৃদয়ে যে ঈমান ও কল্যাণ রয়েছে তার অনুরূপ। সুতরাং তারা যদি কোন বিষয়ে সংবাদ দেয় তখন তা হয় এমন সত্য সংবাদ যার মধ্যে কোন মিথ্যা মিশ্রিত হয় না।[33]

বস্তুত, “যারা সত্য নিয়ে এসেছে এবং যারা সত্যকে সত্য বলে গ্রহণ করেছে তারাইতো মুত্তাকী।[34]

সুতরাং জেনে-বুঝে কোন অন্যায়তো সে করেই না; বরং সঙ্গদোষ বা পরিবেশ-পরিস্থিতির শিকার হয়ে কোন অন্যায়, অনৈতিক বা পাপের কাজে প্রবৃত্ত হলে অথবা যে কোন ধরনের ভূল করলে মনে পড়ার সাথে সাথে সে নিজেকে সুধরে ফেলে। [35] কোন কুসংস্কার বা গর্হিত কাজ যারা করে না তারই মুত্তাকী।

ঘরের পিছন দিক থেকে প্রবেশের মধ্যে কোন কল্যাণ নেই; বরং কল্যাণ হচ্ছে পিছন দিক থেকে প্রবেশের মত কুসংস্কার বর্জন করে ঘরের দরজা দিয়ে-সামনের দিক থেকে প্রবেশ করা।[36] কাযী নাসিরুদ্দীন বায়যাবী (রা:) বলেন: “কল্যানের অধিকারী সে ব্যক্তি, যে সকল হারাম ও শাহ্ওয়াত-লালসা থেকে বেঁচে থাকে।” [37]

যুদ্ধ চলাকালীন কঠিন অবস্থায় ধৈর্যধারণের সাথে তাকওয়ার সংযোগ ঘটলে বিজয় অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে। “আর যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে তাদের প্রতারণায় তোমাদের কোনই ক্ষতি হবে না।[38] এ আয়াতসমূহে মানুষের জন্য কল্যাণকর বিষয়গুলোর বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে এবং এগুলো তখনই মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে, যখন তারা এগুলো জীবনের বাঁকে বাঁকে মেনে চলে ও বাস্তবায়ন করে।

আল্লাহ্‌ তা‘আলা এ প্রসঙ্গে বলেন: “হে ঈমানদারগণ ! তোমরা আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিত ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাক।[39] এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আবূ হাইয়্যান, ইব্‌নু মাসঊদ, রবী, কাতাদাহ (রা:) ও হাসান বসরী (রা:) বলেন, ‘হাক্কা তুক্বাতিহি-যথাযথ ভয়’ হল প্রত্যেক কাজে আল্লাহর আনুগত্য করা, আনুগত্যের বিপরীতে কোন কাজ না করা, আল্লাহকে সর্বদা স্মরণ রাখা-কখনও কিস্মৃত না হওয়া এবং সর্বদা তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, অকৃতজ্ঞ না হওয়া। কোন কোন মুফাসসির বলেছেন, ‘হাক্কা তুক্বাতিহি’ এর অর্থ হল, আল্লাহর সকল অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকা।

আবার কেউ কেউ বলেছেন, আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি বিধানের কাজে কোন ব্যক্তির ভর্ৎসনা বা নিন্দা তাকে কুন্ঠিত করে না। সে ন্যায়-নীতি অবলম্বন করে সকল কাজ সামাধা করে; হোক সে কাজ তার নিজের অথবা তার সন্তানের অথবা তার পিতার বিরুদ্ধে।” [40] এ আয়াতের ব্যাখ্যায় কাযী নাসির উদ্দীন বায়যাবী (র) বলেন, “এখানে স্পষ্টত বা প্রচ্ছন্নভাবে প্রমাণ রয়েছে যে, এটি পূর্ণাঙ্গ মানবীয় গুনাবলী সম্বলিত একটি আয়াত। এখানে বর্ণিত সমুদয় বিষয় এর শাখা-প্রশাখাসহ মুলত তিন ভাগে বিভক্ত। এক. মানুষের আকিদা-বিশ্বাসের বিশুদ্ধতার বিবরণ, দুই. সুন্দর আচার-আচরণ এবং তিন. ব্যক্তি-মানসের কুদৃষ্টি-কালচার। প্রথমটির দিকে ইঙ্গিত রয়েছে আল্লাহর বাণী মান আমানা থেকে ওয়ান্‌নাবিয়্যীন’ পর্যন্ত অংশে, এবং তৃতীয়টির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে ‘ওয়া আকামাস সালাতা’ থেকে শেষ পর্যন্ত অংশ দিয়ে। এ কারনেই আয়াতে বর্ণিত সমুদয় গুণের অধিকারী ব্যক্তিকে তার সুদৃঢ় ঈমান ও ই’তিকাদের ভিত্তিতে সত্যবাদী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং তাকে মুত্তাকী বল হয়েছে তার সুন্দর ব্যবহার ও যথাযথ লেন-দেনের ভিত্তিতে। আর এ জন্যই মহানবী (সা:) বলেছেন: “যে ব্যক্তি এ আয়াতের উপর আমল করল সে অবশ্যই তার ঈমান পরিপূর্ণ করল।[41]

তাকওয়ার দাবী হচ্ছে বেশি বেশি ভাল কাজ করা ও আল্লাহর ইবাদত করা। কল্যাণমূলক কাজে দ্রুত এগিয়ে আসা; চাই তা জাগতিক হোক বা পারলৌকিক। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: “আর তোমাদের প্রভূর ক্ষমার প্রতি এবং জান্নাতের প্রতি দ্রুত এগিয়ে যাও, যার পরিধি হচ্ছে আসমান ও যমীন, যা প্রস্তুত করা হয়েছে মুত্তাকীদের জন্য। (মুত্তাকী হচ্ছে তারা) যারা সচ্ছলতা ও অভাবের সময় (মানুষের প্রয়োজনে সম্পদ) ব্যয় করে, যারা নিজেদের রাগ-ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে। আর আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদেরকে ভালবাসেন। (মুত্তাকী তারাও) যারা কখনও কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা কোন মন্দ কাজে জড়িত হয়ে নিজের ওপর যুলম করে ফেললে (সাথে সাথে) আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর আল্লাহ্ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবেন? আর তারা জেনে-শুনে নিজেদের (ভূল) কৃতকর্মসমূহ বারংবার করতে থাকে না। [42]

তারা (আহলে কিতাবগণ) সবাই সমান নয়। আহলে কিতাবগনের মধ্যে কিছু লোক এমনও আছে যারা অবিচলভাবে আল্লাহ্‌র আয়াতসমূহ পাঠ করে এবং রাতের গভীরে তারা সেজদায় রত থাকে। তারা আল্লাহ্‌র প্রতি ও কিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং কল্যাণকর বিষয়ের নির্দেশ দেয়: অকল্যাণ থেকে বারণ করে এবং সৎকাজের জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করতে থাকে। আর এরাই হল সৎকর্মশীল। তারা যেসব সৎকাজ করবে, কোন অবস্থাতেই সেগুলোর প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শণ করা হবে না. আর আল্লাহ্‌ মুত্তাকীদের বিষয়ে অবগত। [43]

এ আয়াতসমূহে বর্ণিত বিষয়গুলোর প্রত্যেকটি বিষয়ই আমাদের বাস্তব জীবনে অবশ্য করণীয় ও পালনীয়। সুতরাং একজন মানুষ যত বেশী ভাল কাজ করবে তার মধ্যে ততবেশী তাকওয়া বদ্ধমূল হবে।

  • মুত্তাকীগণ অনুসন্ধিৎসু, উদ্ভাবনী ও সৃজনশীল প্রতিভার অধিকারী হয়। দৈনন্দিন জীবনে ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক পরিবর্তন-বিবর্তন তাকে স্পর্শ করে, তাকে নাড়া দেয়, ঘটনার মূল কারণ সন্ধানে ব্যাপৃত করে। ফলে সে বিভিন্ন সূত্র আবিষ্কারে উদ্বুদ্ধ হয় এবং বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অবদান রাখতে সক্ষম হয়। [44]
  • চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ নক্ষত্র তথা সৌর জগত এবং পৃথিবীর জীব-জন্তু, পাহাড়-পর্বত, বৃক্ষলতা, খাল-বিল, নদী-নালা, সাগর-মহাসাগর, রাত-দিনের পরিবর্তন ইত্যাদি মুত্তাকীদের কাছে গবেষণার উপাদান হয় এবং গবেষণার আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও এর থেকে উপকৃত হওয়ার বিষয়ও তাদের সাথে সম্পর্কিত, যারা তাকওযার অধিকারী।[45]
  • বৃষ্টির পানি দিয়ে জমিতে উৎপন্ন ফল-ফসল ও উদ্ভিদের কথা চিন্তা করে এর উৎকর্ষ সাধন ও উৎপাদন বাড়ানোর ওপরও মুত্তাকীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।[46]
  • বদান্যতা প্রদর্শন হচ্ছে তাকওয়া। বিয়ে করার সময় মোহর ধার্য করে বা পূর্ণমোহর প্রদান করে যদি বিয়ে সম্পন্ন হয় এবং যুক্তিসঙ্গত কোন কারণে সে বিয়ে বহাল রাখা সম্ভব না হয় তাহলে ইসলামের বিধান অনুযায়ী নারী (স্ত্রী) তার জন্য নির্ধারিত মোহরের অর্ধাংশের অধিকারী হবে। বাকী অর্ধেক পুরুষকে (স্বামীকে)ফিরিয়ে দিবে। তবে নারী সম্পূর্ণ মোহর ফিরিয়ে দিলে বা পুরুষ সম্পূর্ণ মোহর আদায় করে দিলে তা হবে বদান্যতার ব্যাপার। আর এ বদান্যতা-উদারতা পুরুষের পক্ষ থেকে হোক এটিই তাকওয়া।[47]
  • এমনিভাবে নিয়ম মোতাবেক স্বামী-স্ত্রী বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে খোর –পোষ দেয়া তাকওয়ার অধিকারী ব্যাক্তির ওপর কর্তব্য  বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে। [48] সুতরাং বড় মনের অধিকারী হওয়া, উদারতা প্রদর্শন করা ও কর্তব্য কাজ যথাযথ সম্পাদন করা হল তাকওয়ার দাবী।
  • পৃথিবীতে বসবাসরত অসংখ্য মানুষের মধ্যে সবাই একত্ববাদের বিশ্বাসী নয়। আল্লাহ্‌র একত্ববাদে বিশ্বাসী মুসলিম জাতি অন্যান্য কুফরী মতবাদে বিশ্বাসী জাতি-গোষ্ঠীর সাথে ব্যক্তিগত, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্পর্ক রক্ষা করা ও লেনদেন করাতে ইসলামে কোন বাধা নেই। কারণ, ইসলামে সংকীর্ণতা বা প্রতিবন্ধকতা নেই। [49]
  • মুসলিম-অমুসলিম যে কোন ব্যক্তি, জাতি-গোষ্ঠি বা রাষ্ট্রের সাথে কৃত চুক্তি বা অঙ্গীকার পূর্ণ করা এবং তাতে আন্তরিক হওয়া তাকওয়ার অধিকারী ব্যক্তিদের বৈশিষ্ট্য। এরুপ ব্যক্তিদেরকে আল্লাহ্‌র ভালবাসার পাত্র বলে পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে।[50]

তবে সম্পর্ক রক্ষা ও লেন-দেনের আড়ালে যেন মুসলিমদের কৃষ্টি-কালচার, ধর্মীয় বিশ্বাস হারিয়ে না যায় এবং অমুসলিমদের কোন চক্রান্তে না পড়ে সে বিষয়ে অত্যন্ত সতর্কতা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে চলার জন্য পবিত্র কুরআনে তাকওয়া শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে। বলা হয়েছে: “যদি তোমরা তাদের পক্ষ থেকে কোন অনিষ্টের আশঙ্কা কর, তবে তাদের সাথে সাবধানতার সাথে থাকবে ।[51]

স্বাবলম্বন বা আত্মনির্ভরতা হচ্ছে শ্রেষ্ঠ তাকওয়া। আয়-উপার্জন, শিক্ষা-প্রশিক্ষণ ও সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন যাপনের সকল উপায়-উপকরণ অবলম্বন করে স্বাবলম্বী হয়ে চলার নাম তাকওয়া। সহায়-সম্বলহীন অবস্থায় আল্লাহর ওপর নির্ভর করে আল্লাহর রাস্তায় বেরিয়ে পড়া, স্থানীয় জনগণের ওপর বোঝা হওয়া, জীবন-জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনে কারো গলগ্রহ হওয়া, হাত পাতা, ভিক্ষে করা ও পরনির্ভরশীল হওয়া তাকওয়া হতে পারে না। কেবল হাদীয়া-তোহ্‌ফার ওপর নির্ভর করে যারা জীবন-যাপন করে, তারা মুত্তাকী হতে পারে না। আত্মনির্ভরশীল জীবন গঠন এবং ব্যাক্তি, সমাজ বা রাষ্ট্রের ওপর বোঝা হয়ে জীবন-যাপন থেকে বিরত থাকার মনোবৃত্তিকে তাকওয়া বলা হয়েছে।

  • আল্লাহ্ তা’আলা হজ্জের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেছেন: “আর তোমরা পাথেয় সাথে নিয়ে নাও। নিশ্চয় সর্বোত্তম পাথেয় হচ্ছে তাকওয়া। আর হে বুদ্ধিমানগণ! তোমরা আমাকেই ভয় করতে থাকো। [52]
  • এখানে তাকওয়া শব্দের অর্থ হচ্ছে: “এমন সহায়-সম্বল অবলম্বন যা থাকার ফলে অন্যের কাছে হাত পাততে হয় না।[53]
  • এ আয়াতের শানে নুযুল ও ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে: “এ আয়াতটি ইয়ামানের অধিবাসীদের প্রতি নাযিল হয়েছে। তারা হজ্জ করত এমন অবস্থায় যে, প্রয়োজনীয় খাদ্য-সামগ্রী কিছুই তারা সঙ্গে নিয়ে যেত না এবং বলত, আমরা আল্লাহর নির্ভরশীল। ফলে তারা স্থানীয় জনগণের ওপর বোঝা হয়ে থাকত।[54]

কাজেই সর্বপ্রকার পরাধীনতা তথা জ্ঞান-বিজ্ঞান, অর্থ-সামর্থ, শক্তি-সাহস, কৃষ্টি-কালচার,সংস্কতি-সভ্যতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে পরনির্ভরশীলতার অভিশাপ থেকে মুক্তি অর্জনের সর্বাত্মক চেষ্টা করা মুত্তাকী হওয়ার জন্য একান্ত প্রয়োজন।

মুত্তাকী ব্যক্তিকে কতগুলো বিষয় বর্জন করে চলতে হয়। মানুষের মধ্যে দুটি পরস্পর বিরোধী প্রবনতা বা শক্তি পাশাপাশি সাংঘর্ষিক অবস্থানে বিদ্যমান। তা হল, ভাল-মন্দ, সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়, কল্যাণ-অকল্যাণ, আলো-অন্ধকার ইত্যাদি। এ পরস্পর বিরোধী দুই প্রবণতার মধ্য থেকে ভাল ও কল্যাণময় প্রবণতা বেছে নিয়ে সেটাকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করা এবং এর উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার ফলে যত কঠিন পরীক্ষা ও অবস্থারই মুকাবিলার সম্মুখীন হোক না কেন, তা ধৈর্য ও সাহসের সাথে উত্তীর্ণ হওয়া এটাই প্রকৃত তাকওয়া। অর্থাৎ মানবীয় সহাজাত সুকুমার বৃত্তি বা আকাঙ্খা যা মানুষকে কুপ্রবৃত্তি তথা মন্দ কথা, খারাপ কাজ ও দুষ্ট চিন্তা থেকে বিরত রাখে, তাকেও তাকওয়া বলা হয়। যারা তাকওয়া অবলম্বনে জীবন যাপন করেন এবং মুত্তাকীদের নেতা বা আদর্শ যারা হতে চান, তারা যেসব বিষয় বর্জন করে জীবন যাপন করেন, এমন কিছু বিষয়ের উল্লেখ করে মহান আল্লাহ বলেন: “আর যখন তারা (সম্পদ) ব্যয় করে তখন অনর্থক ব্যয় করে না, আবার কার্পণ্যও করে না; বরং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী পথ অবলম্বন করে (ব্যয় করে)।[55]


[2]. আল কুরআন ২:২৪।
[3]. আল কুরআন, ১৩:৩৪।
[4]. আবুল কাশিম জারুল্লাহ মাহমূদ ইব্‌ন উমার আল যামাখশারী, আল-কাশ্‌শাফ ‘আন হাক্বায়িক্বি আল তানযীল ওয়া ‘উয়ূনি আল আক্বাবীল ফী ওযূহি আল তাবীল, মিশর, মাকতাবা মিশর, তা.বি, খণ্ড ১, পৃ. ৩৭।
[5]. fear is of many kinds : (1) the abject fear of the coward; (2) the fear of a child or an inexperienced person in the face of an unknoun danger; (3) the fear of a resonable man who wishes to protect. (4) the reverence which is akin to love. For it fears to doanything which is no pleasing to the object of love. The first is third is a many precaution against ebil as long as it is unconquered; and the fourth is the seed-bed of ighteousness. Those mature in faith cultivate the fourth : at earlier stages, the third or the second may be necessary; rhey are fear. But not the fear of Allah. The first is a feeling of which anyone should be ashamed. (the holy Quran-English tronslation of the meanings and commentary. Saudi Arabia : King Fahd Holy Quran printing complex- 1411 H.), p. 170-171, Footnote No. 247.
[6]. ড. ইবরাহীম মাদকূর, আল-মুজাম আল ওয়াসীত, দেওবন্দ, কুতুবখানা হুসাইনিয়াহ, তা.বি.,পৃ. ১০৫২।
[7]. আল-কুরআন. ২২:০১।
[8]. আল-কুরআন. ২৬: ১০৬,১২৪, ১৪২, ১৬১, ১৭৭।
[9]. আল-কুরআন. ২৬: ১০৬,১২৪, ১৪২, ১৬১, ১৭৭।
[10]. Taqwa, and the verbs and nouns connected with the root, signify : (1) the fear of Allah, which, according of wisdom: (2) rwstraingt, or guarding on’s tongue, hand and heart from evil: (3) hence righteousness, piety, good conduct. All these ideas are imtlied : in the translation, only one or other of these ideas can be indicated, according to the context. (the holy Quran-English tronslation of the meanings and commentary. Saudi Arabia : King Fahd Holy Quran printing complex- 1411 H.), p. 170-171, Footnote No. 26.
[11]. সম্পাদনা পরিষদ, ইসলমী বিশ্বকোষ, ঢাকা, ইফাবা, ১৯৯২, ১২শ খণ্ড, পৃ. ১০৭।
[12]. কাযী নাসির উদ্দীন আবদুল্লাহ্ ইবন ওমর ইবন মুহাম্মদ আল-বায়যাবী, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৬।
[13]. আবু মুহাম্মদ আল হুসাইন ইবন মাসউদ আল-বগভী (মৃ. ৫১০ হি.), মা’আলিমুত তানযীল ফিত তাফসীর ওয়াত তাবীল, বৈরুত, দার আল ফিক্‌র, ১৯৮৫, খণ্ড ১, পৃ. ৩৫।
[14]. আবুল কাশিম জারুল্লাহ মাহমূদ ইবন উমার আল যামাখশারী, আল-কাশশাফ ‘আন হাক্বায়িক্বি আল তানযীল ওয়া ‘উয়ূনি আল আক্বাবীল ফী ওযূহি আল তাবীল, প্রাগুক্ত, খণ্ড ১, পৃ. ৩৭।
[15]. যেমন, আল-কুরআন, ২:১৯৭, ২৩৭, ৫: ২.৮, ৭: ২৬. ৯: ১০৮, ২০: ১৩২, ২২: ৩২, ৩৭, ৪৮:২৬, ৪৯: ৩, ৫৮: ৯, ৭৪: ৫৬, ৯৬: ১২; মুহাম্মদ ফুয়াদ আবদুল বাকী, আল-মুজাম আল-মুফাহরাস লি আলফায্‌ আল কুরআন আল কারীম, বৈরুত, দার আল মারিফাহ্ ১ম মুদ্রণ ১৪২৩ হি./২০০২, পৃ. ৩৭৯।
[16]. মুহাম্মদ ফুয়াদ আবদুল বাকী, আল-মুজাম আল-মুফাহরাস লি আলফায্‌ আল কুরআন আল কারীম, প্রাগুক্ত,পৃ.৮৪৫-৮৪৬।
[17]. আল কুরআন, ২:২; আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা)সহ অন্যান্য অনেক সাহাবা (রা) বেলন, তারা হলেন ঈমানদার ব্যক্তিগণ। আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন জারীর আল তাবারী (মৃ. ৩১০ হি.) জামিউল বায়ান ‘আন তাবীলি আয়িল কুরআন, বৈরুত দার আল ফিক্‌র, তা.বি. খণ্ড ১. পৃ.১৪৭।
[18]. আল-কুরআন. ৪৮: ২৬।
[19]. আল-কুরআন. ৪৯:০৩।
[20]. আল-কুরআন. ২৬:১১।
[21]. আল-কুরআন. ৭:৯৬।
[22]. আল-কুরআন. ১৬:০২।
[23]. আল-কুরআন. ১৬:২৬।
[24]. আল-কুরআন. ২৩:৫২।
[25]. আল-কুরআন. ২২:৩২।
[26]. আল-কুরআন. ৭ : ২০১-২০২।
[27]. আল-কুরআন. ৮ : ২৯।
[28]. আল-কুরআন. ৫৭ : ২৮।
[29]. আল-কুরআন. ২ : ২-৪।
[30]. আল-কুরআন. ৩১ : ১-৫।
[31]. আল-কুরআন. ২ : ১৭৭।
[32]. শায়খ আবদুর রহমান ইবন হাসান, ফাতহুল মাজীদ, রিয়াদ, আল রিয়াসাহ আল ‘আম্মাহ, ১৯৮৩, পৃ. ৩৩৩।
[33]. মুহাম্মদ ইব্‌ন ইউসুফ ওরফে আবু হাইয়্যান আল-আন্দালুসী (৬৫৪-৭৫৪ হি,). তাফসীর আল রাহরুল মুহীত, কায়রো, দারুল কিতাব আল-ইসলামী, ৩য় মুদ্রণ, ১৪১৩ হি, /১৯৯২, খণ্ড ২ , পৃ. ৮।
[34]. আল-কুরআন. ৩৯: ৩৩।
[35]. আল-কুরআন. ৭ : ২২১।
[36]. আল-কুরআন. ২ : ১৮৯।
[37]. কাযী নাসির উদ্দীন আবদুল্লাহ্ ইবন ওমর ইবন মুহাম্মদ আল-বায়যাবী, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৩৩।
[38]. আল-কুরআন. ৩ : ১২০।
[39]. আল-কুরআন. ৩: ১০২।
[40]. মুহাম্মদ ইব্নু ইউসুফ ওরফে আবু হাইয়্যান আল-আন্দালুসী (৬৫৪-৭৫৪ হি,). তাফসীর আল রাহরুল মুহীত, ৩য় খণ্ড, পৃ.১৭।
[41]. কাযী নাসির উদ্দীন আবদুল্লাহ্ ইবন ওমর ইবন মুহাম্মদ আল-বায়যাবী, প্রাগুক্ত, পৃ. ১২৫।
[42]. আল কুরআন, ৩ : ১৩৩-১৩৫।
[43]. আল কুরআন, ৩ : ১১৩-১১৫।
[44]. আল কুরআন, ১০ : ৬।
[45]. আল কুরআন, ১০ :৬।
[46]. আল কুরআন, ১০ : ৩১।
[47]. আল কুরআন, ২ : ২৩৭।
[48]. আল কুরআন, ২ : ২৪১।
[49]. আল কুরআন, ২২ : ৭৮।
[50]. আল কুরআন, ৩ : ৭৬।
[51]. আল কুরআন, ৩ : ২৮।
[52]. আল কুরআন, ২ : ১৯৭।
[53]. জালালুদ্দীন আল সুয়ূতী, তাফসীর জালালাইন, সিঙ্গাপুর : এদারা নশর ওয়া ইশা’আতে ইসলামিয়্যাহ্, তা.বি., পৃ . ২৯।
[54]. কাযী নাসির উদ্দীন আবদুল্লাহ্ ইবন ওমর ইবন মুহাম্মদ আল-বায়যাবী, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৩৭।
[55]. আল কুরআন, ২৫ : ৬৭-৬৮, ৭২-৭৪।

Print Friendly, PDF & Email
Banner Ad


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

2 COMMENTS

আপনার মন্তব্য লিখুন