পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় ইসলামের শিক্ষা

2
4910

লেখক: আলী হাসান তৈয়ব | সম্পাদক: আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

 

মুসলিম হিসেবে আমাদের সবাইকে মসজিদে যেতে হয়। অন্য সব ধর্মাবলম্বীরাও যান তাদের নিজ নিজ ধর্মীয় উপাসনালয়ে। কোনো ধর্মে যিনি বিশ্বাস করেন না তাকেও যেতে হয় বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে। পাবলিক লাইব্রেরি, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি হাসপাতাল, অফিস-আদালত, স্টেশন, লঞ্চ বা বাসটার্মিনাল থেকে নিয়ে হাট-বাজার বা শপিংমলে কম-বেশি আমাদের সবারই যেতে হয়। সব জায়গায়ই থাকে মানুষের প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের ব্যবস্থা। প্রয়োজন মুহূর্তে সবারই সেখানে যেতে হয়। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে সবাই জানেন এসব জায়গায় প্রায়ই রুচিবান লোককে বিব্রত হতে হয়। দুর্গন্ধময় নোংরা পরিবেশের বিড়ম্বনা এড়াতে অনেকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে প্রাণপন বিলম্ব করেন। যা একইসঙ্গে যেমন বড় পীড়াদায়ক তেমনি স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। দুর্ভাগ্যক্রমে যে বেচারাকে সেখানে যেতে হয় তিনিই কেবল বুঝতে পারেন অসহ্য যন্ত্রণা কাকে বলে। দেশের পাবলিক টয়লেট ও জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের টয়লেটগুলো এতোটাই নোংরা ও দুর্গন্ধে ভরা যে তা নিয়ে কৌতুকের শেষ নেই।

অথচ এমন হবার কথা ছিল না। হওয়া উচিতও নয়। কোনো ভদ্র সমাজে এমন নোংরামি কাঙ্ক্ষিত নয়। এমন হবার কারণ, আমরা জাতি হিসেবে কখনো জাতীয় সম্পদকে নিজের ভাবি না। একটি উর্দু আপ্তবাক্য বাক্য তো সবাই জানেন, ‘সরকার কা মাল, দরিয়া মে ডাল।’ সরকারি সম্পদ অনর্থক সাগরে ফেললেও কারো যায় আসে না। অথচ বাস্তবে সরকারি সম্পদ মানেই প্রতিটি জনগণের সম্পদ। আমরা নিজের বাড়ির টয়লেট পরিষ্কার রাখি, এর যত্নে অবহেলা করি না; কিন্তু জাতীয় প্রতিষ্ঠানের টয়লেটে গেলে এর যত্ন নেই না। যেখানে-সেখানে গ্রাম্য লোকের পানের পিক ফেলা কিংবা শহুরে বা আধা শহুরের বিড়ি-সিগারেটের অবশিষ্টাংশ ফেলার অভ্যেস যে বাঙালীর কবে বদলাবে তা কেবল আল্লাহই জানেন।

একটু খেয়াল করলেই আমরা এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে পারি। আমরা নিজেরাই যদি নিজেদের চারপাশ পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি রাখতে সচেষ্ট হই, তবেই কেবল মুক্তি। চলার পথে যত্রতত্র আবর্জনা ফেলার স্বভাব বদলাতে হবে। মেনে চলতে হবে নির্দিষ্ট জায়গায় বর্জ্য ও আবর্জনা ফেলার নিয়ম। টয়লেটে গিয়ে টিস্যু পেপার নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। ব্যবহারের পর পর্যাপ্ত পানি ঢেলে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। কী আশ্চর্য, আমরাই কষ্ট পাই আবার আমরাই কিনা পরিবেশ নোংরা করি! আমাদের স্বাস্থ্যহানীতে নিজেরাই ভূমিকা রাখি!

ইসলাম এ ব্যাপারে সুন্দর শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়েছে। ইসলামে পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা রক্ষায় নানাবিধ বিষয় শেখানো হয়েছে। কুরআন ও সুন্নায় পরিচ্ছন্নতার চেয়ে আরও ব্যাপক শব্দ ‘তাহারাহ’ তথা পবিত্রতা ব্যবহার করা হয়েছে। এই ‘তাহারাহ’ শব্দ যেমন কুফরী ও বিধার্মিকতা থেকে নিয়ে যাবতীয় পাপাচারের মতো আভ্যন্তরীণ নোংরামি থেকে মুক্ত হওয়ার কথা বলে, তেমনি তা সবরকমের বাহ্যিক অপরিচ্ছন্নতা থেকে মুক্ত হওয়াকে অন্তর্ভুক্ত করে। বাহ্যিক পবিত্রতা একজন মুমিনের সালাত শুদ্ধ হবার পূর্বশর্ত। যেমন ‘হাদছ’ তথা অবস্তুগত অপরিচ্ছন্নতা থেকে পবিত্র হতে হয় অযু বা গোসল দ্বারা তেমনি ‘খুবুছ’ তথা বস্তুগত অপরিচ্ছন্নতা থেকেও পবিত্র হতে হয় দেহ, বস্ত্র ও স্থান পরিষ্কারের মাধ্যমে। এ কারণেই ইসলামে ফিকহ শাস্ত্রের সকল গ্রন্থে প্রথমেই ‘কিতাবুত-তাহারাহ’ তথা পবিত্রতা অধ্যায় স্থান পেয়েছে। কেননা সালাতে প্রবেশের জন্য এটি অবিকল্প পথ। তাই জান্নাতের চাবি যেমন সালাত, তেমনি সালাতের চাবি পবিত্রতা।

পবিত্র কুরআনের দিকে চাইলে আমরা দেখি, কোবাবাসীর প্রশংসা করেছেন আল্লাহ তা‘আলা অধিক পবিত্র হবার মানসিকতার জন্য। ইরশাদ হয়েছে: ‘অবশ্যই যে মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাকওয়ার ওপর প্রথম দিন থেকে তা বেশি হকদার যে, তুমি সেখানে সালাত কায়েম করতে দাঁড়াবে। সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালবাসে। আর আল্লাহ্ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।’ [সূরা আত-তাওবা, আয়াত : ১০৮]

তেমনি মহিলাদের মাসিক স্রাব থেকে পবিত্র হওয়ার আলোচনা শেষে মহান আল্লাহ বলেন: ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং ভালোবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদের।’ [সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ২২২]

একইভাবে সুন্নাতে নাববী ঘাটলেও আমরা জীবনের নানা পর্যায়ে পরিচ্ছন্নতায় গুরুত্বারোপ বিষয়ে বহু বিশুদ্ধ হাদীস খুঁজে পাই। পরিচ্ছন্নতার রক্ষায় নানাভাবে নানা উপায়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং নানাবিধ শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। সবচে বড় কথা পরিচ্ছন্নতা রক্ষাকে ঈমানের অংশ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যেমন আবূ মালেক আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক।’ [মুসলিম : ২২৩]

পরিচ্ছন্নতার গুরুত্বের পরিধি ইসলামে যেভাবে বিস্তৃত অন্য কোনো ধর্মে এমনটি কল্পনাও করা যায় না। ব্যক্তির পরিচ্ছন্নতা, গৃহের পরিচ্ছন্নতা ও পরিপার্শের পরিচ্ছন্নতা- কোনোটাই বাদ যায় নি। ব্যক্তির পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় অন্তত জুমাবারে গোসলের গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এমনকি কোনো কোনো হাদীসে এ ক্ষেত্রে ‘ওয়াজিব’ শব্দও উল্লিখিত হয়েছে। যেমন : আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘জুমার দিন (শুক্রবার) গোসল করা প্রতিটি সাবালক ব্যক্তির জন্য ওয়াজিব।’ [বুখারী : ৪৭৯]

আরেক হাদীসে এসেছে, আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘আল্লাহর জন্য প্রতিটি মুসলিমের অবশ্য কর্তব্য হলো (অন্তত) প্রতি সাত দিনের মাথায় তার মাথা ও শরীর ধৌত করা।’ [বুখারী : ৮৯৭; মুসলিম : ৮৪৯]

কারও ওপর গোসল ফরয না হলেও যেহেতু শরীরে ঘাম ও ধূলা-বালি প্রভৃতি আবর্জনা লাগে তাই তাকে অন্তত সাতদিনে একবার গোসলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে তার শরীরের দুর্গন্ধে কেউ কষ্ট না পায়। এদিকে শরীরের কোনো কোনো অঙ্গ পরিচ্ছন্ন রাখতে সবিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। যেমন মুখ ও দাঁত। দাঁত ও মুখের যত্নে মিসওয়াকের গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে মিসওয়াক ব্যবহারকে। যেমন আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘যদি না আমার উম্মত অথবা (তিনি বলেছেন) মানুষের জন্য কঠিন হত তবে আমি তাদেরকে প্রত্যেক সালাতের সঙ্গে মিসওয়াকের নির্দেশ (ওয়াজিব ঘোষণা) দিতাম।’ [বুখারী : ৮৮৭; মুসলিম : ২৫২]

তেমনি চুলের পরিচ্ছন্নতা রক্ষায়ও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ‘একদিন আমাদের বাসায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেড়াতে এলেন। এখানে এসে তিনি এক এলোকেশী ব্যক্তিকে দেখতে পেলেন। তার সম্পর্কে তিনি বললেন, ‘এ ব্যক্তি কি এমন কিছু জোটাতে পারে নি যা দিয়ে সে তার মাথার চুল বিন্যস্ত করবে’। আরেকজনকে তিনি দেখলেন ময়লা বস্ত্র পরিহিত। তার উদ্দেশে বললেন, ‘এ ব্যক্তি কি এমন কিছু জোগাড় করতে পারে নি যা দিয়ে সে তার কাপড় পরিষ্কার করবে।’  [মুসনাদ আহমাদ : ১৪৮৫০; বাইহাকী : ৫৮১৩]

আর এর পূর্ণতা হিসেবে উল্লেখ করা যায় ‘সুনানে ফিতরাত’ তথা প্রকৃতির সুন্নত খ্যাত বিষয়গুলো। এসব থেকে স্পষ্টই ধারণা মেলে যে, মানুষের পরিচ্ছতা ও সৌন্দর্য এবং সুস্থতা ও কমনীয়তার নেয়ামত রক্ষায় শরীয়তে কতটা গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বাদ যায় নি নখ কাটা, গোঁফ ছোট করা, বোগলের চুল উপড়ানো থেকে নিয়ে গুপ্তাঙ্গের অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করা পর্যন্ত কোনোটাই। বুখারী ও মুসলিম শরীফে এ সম্পর্কিত অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যেমন মা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘দশটি বিষয় ‘ফিতরাতে’র [1] অন্তর্ভুক্ত : গোঁফ কাটা, দাড়ি লম্বা রাখা, মিসওয়াক করা, নাকে পানি দেওয়া, নখ কাটা, চামড়ার ভাঁজের জায়গাগুলো ধৌত করা, বগলের নিচের চুল তুলে ফেলা, নাভির নিচের চুল মুণ্ডানো, (বাথরুমের প্রয়োজন পুরণের পর) পানি দ্বারা পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা। বর্ণনাকারী বলেন, দশম বিষয়টি আমি ভুলে গেছি, যদি না তা হয় ‘কুলি করা।’ [সহীহ মুসলিম : ২৭৫৭]

ব্যক্তির পর গৃহ পরিচ্ছন্ন রাখতেও যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়েছে হাদীসে। নিজের শরীর ও পোশাকের মতো আবাসস্থানকেও নোংরা, আবর্জনা ও দৃষ্টিকটু উপাদান থেকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। নিজের স্বাস্থ্য ও সুস্থতা রক্ষায় এর বিকল্প নেই। ইমাম তিরমিযী একটি হাদীস সংকলন করেছেন সা‘ঈদ ইবনুল মুসাইয়িব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে। তিনি বলেন: ‘নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্রকে পছন্দ করেন; আল্লাহ পরিচ্ছন্ন, তিনি পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করেন; আল্লাহ মহৎ, তিনি মহত্ত্ব পছন্দ করেন; আল্লাহ বদান্য, তিনি বদান্যতা পছন্দ করেন। অতএব তোমরা তোমাদের (ঘরের) উঠোনগুলো পরিচ্ছন্ন রাখবে।‘ [তিরমিযী : ২৭৯৯] [2]

পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার শিক্ষা সংক্রান্ত হাদীসটি তো এত চর্চিত ও উচ্চারিত হয় যে বলা যায় তা সবারই মুখস্থ। হাদীসটি পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা সম্পর্কে। যেমন আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘সূর্যোদয় হয় এমন প্রতিটি দিন মানব দেহের প্রতিটি জোড়া তথা গ্রন্থির ওপর সাদকা ওয়াজিব হয়। তুমি দু’টি মানুষের মধ্যে যে ন্যায়বিচার করো, তা সাদকা। তুমি মানুষকে তার ভারবাহী পশুর ওপর চড়িয়ে দিয়ে কিংবা তার ওপর মালপত্র তুলে দিয়ে যে সাহায্য করো, তাও সাদকা। (এমনিভাবে) কাউকে ভালো কথা বলাও সদকা। নামাযের দিকে যাওয়ার সময় তোমার প্রতিটি পদক্ষেপ সাদকা। রাস্তা থেকে তুমি যে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেল, তাও সাদকা।‘ [বুখারী : ২৯৮৯; মুসলিম : ১০০৯]

আরেক হাদীসে এসেছে, আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘তোমরা লা‘নতকারী (অভিশাপের কারণ) দু’টি কাজ থেকে বেঁচে থাকো। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, লা‘নতকারী (অভিশাপের কারণ) দু’টি কাজ কী? তিনি বললেন, যে মানুষের চলাচলের রাস্তায় কিংবা তাদের ছায়ায় পেশাব-পায়খানা করে।’ [আবূ দাঊদ : ২৫; মুসনাদ আহমদ : ৮৮৫৩]

পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলাকে ঈমানে অংশ আখ্যায়িত করা হয়েছে। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘ঈমানের সত্তরের কিছু বেশি কিংবা ষাটের কিছু বেশি শাখা আছে; তার মধ্যে সর্বোত্তম হলো ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বলা আর নিম্নতম হলো (চলাচলের) পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা। আর লজ্জাও ঈমানের একটি শাখা।‘ [মুসলিম : ৩৫]

পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলায় আল্লাহর মাগফিরাত লাভের কথা বলা হয়েছে। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘এক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে পথ অতিক্রম করছিল। পথিমধ্যে সে রাস্তায় একটি কাঁটার ডাল দেখতে পেয়ে তা সরিয়ে ফেলল। এতে আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হলেন এবং তাকে ক্ষমা করে দিলেন।’ [বুখারী : ৬৫২]

তেমনি পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করে পরিবেশ দূষণ রোধেও পবিত্র সুন্নাহে নানা গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যেমন বদ্ধ বা স্রোতের পানিতে পেশাব থেকে বারণ করে বলা হয়েছে, (আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে,) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘তোমাদের কেউ যেন বদ্ধ পানিতে পেশাব না করে অতঃপর তা দিয়ে গোসল করে।’ [বুখারী : ২৩৯; মুসলিম : ২৮২]

তেমনি খাদ্য ও পানীয়কে দূষণমুক্ত রাখতে পাত্র ঢেকে রাখাসহ বিভিন্ন জরুরি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যেমন জাবের ইবন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ‘তোমরা বাসন ঢেকে রাখো, পানপাত্রের মুখ বন্ধ রাখো, দরজা অর্গলাবদ্ধ করো এবং এশার সময় তোমাদের শিশুদের সামনে রাখো। কেননা এসময় জিনরা ছড়িয়ে পড়ে এবং আছর করে। আর তোমরা নিদ্রাকালে বাতিগুলো [প্রদীপসমূহ] নিভিয়ে দিও। কেননা ইঁদুর কখনো প্রদীপের সলতে টেনে নিয়ে যায়। অতঃপর তা গৃহবাসীকে জ্বালিয়ে দেয়।’ [বুখারী : ৩৩১৬]

তা ছাড়া পরিবেশ নোংরা করলে অন্যের কষ্টের কারণ হয়। আর অন্যকে কষ্ট না দিতেও ইসলামে নানা রকম আদব শেখানো হয়েছে। আবূ মুসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ‘সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, কে উত্তম মুসলিম? তিনি উত্তর দিলেন, ‘যার হাত ও মুখের অনিষ্ট থেকে অন্যসব মুসলিম নিরাপদ।’ [বুখারী : ১১]

আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে ইসলামের সৌন্দর্য অনুধাবন করে এর আলোকময় শিক্ষায় উদ্ভাসিত হবার তাওফীক দান করুন। আমাদের সকলকে বানিয়ে দিন ইসলামের আলোর দিশারী এবং সত্য ও সুন্দরের পথনির্দেশক।

আমীন।


[1]. আরবীতে ‘ফিতরাত’ শব্দের অর্থ স্বভাব। আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন যে উত্তম মানবীয় স্বভাব সৃষ্ট করেছেন তার সর্বোত্তম নিদর্শন নবী রাসূলগণ। এ কারণে ‘ফিতরাত’ শব্দটির অর্থ করা হয়েছে আদর্শ ও অনুকরণীয় স্বভাব, তথা নবী ও রাসূলগণের স্বভাব।

[2]. ইমাম তিরমিযী হাদীস সম্পর্কে বলেছেন, এটি একটি ‘গরীব’ হাদীস। আর শায়খ আলবানী ‘গায়াতুল মারাম’-এর ৮৯ পৃষ্ঠায় এটিকে ‘যঈফ’ বলেছেন। তবে ‘তোমরা তোমাদের (ঘরের) মেঝেগুলো পরিচ্ছন্ন রাখবে’ [যা আলোচ্য বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট] অংশটুকুকে এর ব্যতিক্রম বলেছেন। কারণ, এতটুকুর সমর্থক ‘হাসান’ সূত্রের হাদীস বর্ণিত হয়েছে। দেখুন : সুনান আত-তিরমিযী, আহমদ শাকের : ৫/১১১।

Print Friendly, PDF & Email
Banner Ad


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

2 COMMENTS

আপনার মন্তব্য লিখুন