ইসলামে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) এর বিধান

23
6857

সংকলন: মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম | গ্রন্থনা ও পরিমার্জনা: ডাঃ মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী

মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) বা বহুজাত বিশিষ্ট পণ্য বাজারজাত পদ্ধতি বাংলাদেশে নতুন হলেও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে অর্ধ শতকের বেশি সময় আগে এটি চালু হয়েছিল। নেটওয়ার্ক মার্কেটিং, ডিরেক্ট সেলিং ও রেফারেন্স মার্কেটিং হিসাবেও এটি পরিচিত। মাল্টিলেভেল মার্কেটিং মূলত ডিস্ট্রিবিউটরদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পণ্য ও সেবা বিক্রি করার একটি প্রক্রিয়া। আধুনিক অভিধানে এর সংজ্ঞা এভাবে দেয়া হয়: (Multi-level marketing, also known as MLM or network marketing, is a business structure where products are sold through a networking process as opposed to a storefront. … is a way of selling goods and services through distributors) অর্থাৎ মাল্টি লেভেল মর্কেটিং যা এএলএম বা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং নামেও পরিচিত, তা হল একটা ব্যবসায় পদ্ধতি যেখানে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় করা হয় … আর তা মূলত ডিস্ট্রিবিউটরদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পণ্য ও সেবা বিক্রি করার একটি প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় আপলাইন ও ডাউনলাইন নামে বহু স্তরের (Multi level) ডিস্ট্রিবিউটর তৈরি হয়। ডাউনলাইনের কোনো ব্যক্তি কর্তৃক বিক্রিত পণ্যদ্রব্যের একটি কমিশন আপলাইনের ডিস্ট্রিবিউটররা পেয়ে থাকে। একে সংক্ষেপে MLM বলা হয়। যেসব দেশে এ ব্যবসা প্রচলিত রয়েছে সেখানে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোনো আইন না থাকায় তা এখনও চালু রয়েছে। ব্যক্তিস্বাধীনতার সর্বোচ্চ বিকাশের কারণে অনেকাংশেই ব্যবসাটি বহাল রয়েছে। কিন্তু সেসব দেশের সচেতন মহল প্রতিনিয়তই জনগণকে এ ব্যবসায় সম্পৃক্ত হতে নিরুৎসাহিত করছে।

জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ মুসলিম বিশ্বের জনবহুল দেশগুলোর অন্যতম। এ দেশে যেমনি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি তেমনি বেকার লোকের সংখ্যাও কম নয়। শতকরা ৬৫ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে। অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার কারণে দরিদ্র ও বেকারদের অনেকেই জড়িয়ে পড়ছে এমএলএম ব্যবসায়। কিন্তু যেহেতু এদেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী সেহেতু মু’মিনদের অন্তরে একটি সংশয় রয়েই যাচ্ছে যে এ ব্যবসাটি শরী‘আতের সাথে সংগতিপূর্ণ কিনা? আমরা আমাদের এ প্রবন্ধে সে দিকটিই তুলে ধরার প্রয়াস চালাবো ইনশাআল্লাহ।

মাল্টি লেভেল মার্কেটিং-এর শরয়ী বিধান :

মাল্টিলেভেল মার্কেটিং-এর শরয়ী বিধান আলোচনা করার পূর্বে ইসলামি শরী‘আতের কতিপয় বিধান ও নীতিমালা যেগুলোর ওপর ভিত্তি করে ব্যবসা ও লেনদেনের বৈধতা-অবৈধতা নির্ভর করে সেগুলো আলোচনা করা দরকার। নিম্নে সংক্ষেপে তা আলোকপাত করা হলো:

(ক) ইসলামি শরী‘আতে হালাল ও হারাম উভয়টিই সুস্পষ্ট। শরী‘আত যেটা হালাল করেছে সেটাকে হারাম করা বা ঘোষণা দেয়া আবার যেটা হারাম করেছে সেটাকে হালাল ঘোষণা দেয়ার অধিকার আল্লাহ্ ভিন্ন অন্য কারও জন্য প্রযোজ্য নয়। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ এ ব্যাপারে সীমালঙ্ঘনকারীদের সাবধান করে ঘোষণা দিয়েছেন: ‘‘তুমি বল, তোমরা কি কখনো এ কথা চিন্তা করে দেখেছ, আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের জন্য যে রিযক নাযিল করেছেন তার মধ্য থেকে কিছু অংশকে তোমরা হারাম আর কিছু অংশকে হালাল করে নিয়েছ; তুমি বল, এসব হালাল-হারামের ব্যাপারে আল্লাহ তোমাদের কোনো অনুমতি দিয়েছেন, না তোমরা আল্লাহ্‌র প্রতি মিথ্যা আরোপ করছ? [সূরা ইউনুস, আয়াত : ৫৯]

(খ) ব্যবসায়িক লেনদেনের ক্ষেত্রে একটি মূলনীতি হলো তা বৈধ ও অনুমোদিত। [1] সুতরাং যে ব্যবসার ক্ষেত্রে শরী‘আতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সেগুলো ছাড়া অন্য সকল ব্যবসা বৈধ। কোনো ব্যবসাকে হারাম সাব্যস্ত করতে হলে এর পক্ষে শরয়ী নিষেধাজ্ঞা থাকতে হবে। কোনো ব্যবসার ক্ষেত্রে শরয়ী নিষেধাজ্ঞা না থাকলে ধরে নিতে হবে তা হালাল ও অনুমোদিত।

(গ) ইসলামি শরী‘আত যা যা হালাল করেছে এবং যা যা হারাম করেছে তা সম্পূর্ণ ইনসাফের ভিত্তিতে করেছে। যার মধ্যে মানুষের কল্যাণ রয়েছে শরী‘আত প্রণেতা শুধু তাই তাদের জন্য হালাল করেছেন এবং যার মধ্যে তাদের অকল্যাণ রয়েছে তাই তাদের জন্য হারাম করেছেন। আমাদের ক্ষুদ্র জ্ঞানে হালালের কল্যাণ এবং হারামের অকল্যাণ বুঝে আসুক বা না আসুক তার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা ঈমানের দাবি। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন: ‘‘যে তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করে এবং অপবিত্র বস্তু হারাম করে; আর যে মুক্ত করে তাদেরকে তাদের গুরুভার ও শৃংখল হতে, যা তাদের ওপর ছিল।’’ [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত : ১৫৭]

(ঘ) ক্রেতা-বিক্রেতার সম্মতি ও আন্তরিক সন্তুষ্টি থাকা। বেচা-কেনা বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য একটি শর্ত হলো ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের সম্মতি ও সন্তুষ্টি। মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে এ মর্মে ঘোষণা করেছেন: ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না; কিন্তু তোমাদের পরস্পর রাযী হয়ে ব্যবসা করা বৈধ’’। [সূরা আন-নিসা : ২৯]

তবে সম্মতি ও সন্তুষ্টি বলতে সব ধরনের সম্মতি ও সন্তুষ্টিই এখানে উদ্দেশ্য নয়। বরং হাদীস থেকে জানা যায় এখানে সম্মতি ও সন্তুষ্টি দ্বারা উদ্দেশ্য হলো বেচা-কেনার ক্ষেত্রে শরী‘আত যে সকল নীতিমালা নির্ধারণ করেছে সেগুলোর আওতায় থেকে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের সম্মতি ও আন্তরিক সন্তুষ্টি থাকা। কাজেই শরী‘আত অসংগত কোনো বিষয়ে কারও পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি ও সম্মতি থাকলেও সেটা ইসলামি শরী‘আতের বিচারে হালাল ব্যবসার অন্তর্ভুক্ত হবে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, মদ ক্রয়-বিক্রয়ের ওপর যদি ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে সম্মতি ও আন্তরিক সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তথাপি তা বৈধ হবে না। কারণ মদটাকে ইসলাম হারাম করেছে। অনুরূপ সুদের কারবার যদি কেউ সন্তুষ্টচিত্তে করে তথাপি তা বৈধ হবে না। কারণ ইসলাম সুদকে হারাম করেছে। আবার ব্যবসার ক্ষেত্রে যদি প্রতারণা ও ধোঁকার আশ্রয় নেয়া হয় তবে সেখানেও ক্রেতা-বিক্রেতার সম্মতি ও আন্তরিক সন্তুষ্টি সেটাকে বৈধ করতে পারে না। কারণ ইসলাম প্রতারণাকে হারাম করেছে।

আমরা আমাদের এ প্রবন্ধে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং-এর বৈধতা-অবৈধতার বিষয়টি দু’টি দিক থেকে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ্‌।

প্রথমত: ভিত্তিগত (substantive and theoretical)
দ্বিতীয়ত: পদ্ধতিগত (procedural)

ভিত্তিগত দিক :

মাল্টি লেভেল মার্কেটিং-এর পদ্ধতি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকমের হলেও তত্ত্বগত ভিত্তিটি (theoretical basis) সবসময় একই। তা হলো, নিম্ন লেভেলের ডিস্ট্রিবিউটর কর্তৃক বিক্রিত পণ্যের একটি কমিশন সর্বোচ্চ লেভেল পর্যন্ত পায়। যেটাকে এক কথায় ‘শ্রমের বহুস্তর সুবিধা’ বলা যায়। কোনো কোনো লেখক এর নাম দিয়েছেন ‘‘Chain reaction of labour’’, কেউবা আবার ব্যক্ত করেছে ‘‘Chain pyramidal commission’’ কিংবা ‘‘Compound brokerage’’ ইত্যাদি নামে। তাদের এ নীতিটির সাথে ইসলামের শ্রমনীতির রয়েছে সরাসরি সংঘর্ষ। কারণ ইসলামের শ্রমনীতি হলো: ‘‘কোনো মানুষই অপরের বোঝা উঠাবে না। মানুষ ততটুকুই পাবে যতটুকু সে চেষ্টা করে’’। [সূরা আন-নাজম, আয়াত : ৩৮-৩৯]

এ আয়াত থেকে সুস্পষ্ট যে, মানুষ কেবল তার নিজের শ্রমের প্রত্যক্ষ ফল লাভের অধিকারী। কারও নিযুক্ত কর্মী না হলে একজন আরেকজনের শ্রমের ফলে অংশীদার হতে পারে না। একইভাবে মানুষ তার শ্রমের ফল কেবল নিকটবর্তী লেভেল থেকে আশা করতে পারে। কোনো ক্রমেই তা বহুস্তর (multi level) পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে না। এটি যেমন ইসলামি শ্রমনীতির সাথে অসংগতিপূর্ণ তেমনি মানবীয় বুদ্ধি বিবেচনায় অস্বীকৃত। কারণ, এ ব্যবসায় এক পর্যায়ে দেখা যায় নিম্নলেভেলের ডিস্ট্রিবিউটর ফরিদপুরের মাসুদ উচ্চলেভেলের ডিস্ট্রিবিউটর বরিশালের নোমানকে চিনে না, তাদের সাথে কোনো যোগাযোগ ও কথা-বার্তা নেই অথচ নিম্নলেভেলের মাসুদ থেকে উচ্চলেভেলের নোমান কমিশন পাচ্ছে। মানবীয় সুস্থ বিবেক বলছে, কোনো পণ্যের পেছনে যে প্রত্যক্ষ শ্রম দিয়েছে কেবলমাত্র সেই পারিশ্রমিক পেতে বাধ্য। কিন্তু যে পরোক্ষ শ্রম দিয়েছে সে পারিশ্রমিক পেতে বাধ্য নয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একজন শিক্ষক সে তার প্রত্যক্ষ শ্রমের ফল হিসেবে বেতন দাবি করতে পারে। কিন্তু সে যদি দাবি করে, তার ছাত্ররা যত জনকে শিক্ষিত করে কর্মক্ষম করে তুলবে এবং ভবিষ্যতে তারা আরও যাদেরকে শিক্ষিত করে তুলবে তাদের প্রত্যেকের আয়ের একটি ক্ষুদ্র অংশ উর্ধবতন শিক্ষককে কমিশন হিসেবে দিতে হবে তাহলে বিষয়টি মেনে নেয়ার মত নয়। কারণ এখানে শিক্ষকের শ্রম শুধু তার সরাসরি ছাত্রদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তার ছাত্রদের ছাত্র বা তাদের ছাত্রের প্রতি তাঁর কোনো শ্রম নেই। তার শ্রমের ভিত্তিতে সরাসরি তার ছাত্রদের কাছ থেকে সে বেতন বা সম্মান পাওয়ার অধিকার রাখে কিন্তু ডাউনলাইনের ছাত্রদের কাছ থেকে সে কিসের ভিত্তিতে কমিশন বা বেতন ভোগ করবে?

সুতরাং ইসলামি শ্রমনীতি ও মানবীয় বুদ্ধি বিবেচনায় শ্রমের বহুস্তর সুবিধা (multi level benefit of labour) নীতিটি শরী‘আত সম্মত হতে পারে না। অথচ এ নীতিটিই মাল্টি লেভেল মার্কেটিং-এর সবচেয়ে বড় তাত্ত্বিক ভিত্তি। এ ভিত্তি সরিয়ে ফেললে এ প্রকার ব্যবসার অস্তিত্বই থাকবে না। কোনো সাধারণ কোম্পানি থেকে পণ্য কিনে অপরজনের কাছে বিক্রির মাধ্যমে লাভবান হওয়ার বৈধ অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে। অনুরূপ কোনো ক্রেতা সংগ্রহ করে দেয়ার মাধ্যমে কোম্পানির কাছ থেকে দালালীর কমিশন (brokerage fee) নেয়ার অধিকারও প্রত্যেকের রয়েছে। কারণ এ উভয় ক্ষেত্রেই প্রত্যক্ষ শ্রম জড়িয়ে আছে। এ প্রত্যক্ষ শ্রমের প্রত্যক্ষ সুবিধা নিকটতম স্তর থেকে একবারই পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু মাল্টি লেভেল মার্কেটিং-এ একটি নির্দিষ্ট পয়েন্ট ভ্যালুর পণ্য কিনে দালালীর অধিকার অর্জন করা যা বাস্তবায়ন করতে প্রত্যক্ষ শ্রম দিয়ে নতুন ক্রেতা সংগ্রহ করতে হয়। যে যত বেশি ক্রেতা সংগ্রহ করতে পারে সে ততজনের কমিশন লাভ করার অধিকার রাখে। কিন্তু কোনো ক্রমেই আপলেভেলের প্রত্যক্ষ শ্রম স্বয়ংক্রিয় প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে সুদূর-বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে না। অথচ মাল্টি লেভেল মার্কেটিং-এ তা-ই ঘটে।

উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে সুস্পষ্ট যে, প্রত্যেক ব্যক্তির আয় ও দায় (income and liability) সবসময় ব্যক্তিগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ। তবে এ স্বাভাবিক নীতির ব্যতিক্রম যে সকল বৈধতা শরী‘আতে পাওয়া যায় তা শরী‘আতের বিধান হিসেবে সমালোচনার উর্ধ্বে। যেমন ধনীর সম্পদে অভাবী মানুষের অধিকার, সদকায়ে জারিয়ার সাওয়াব, গোনাহে জারিয়া ইত্যাদি। এগুলো শরী‘আত প্রণেতা কর্তৃক গৃহীত। কাজেই তা স্বাভাবিক নিয়ম বহির্ভূত।

পদ্ধতিগত দিক:

মাল্টি লেভেল মার্কেটিং-এর তাত্ত্বিক ভিত্তি (Theoretical Basis)-এর সাথে ইসলামের প্রতিষ্ঠিত শ্রমনীতি ও মানবীয় বুদ্ধি বিবেচনার সাংঘর্ষিক দিকটি আলোচনা করার পর এবার আমরা এর কিছু পদ্ধতিগত সংঘাত নিয়ে আলোচনা করব ইনশা আল্লাহ্‌। মাল্টি লেভেল মার্কেটিং বা নেটওয়ার্ক-এর পদ্ধতিসমূহের মধ্যে শরী‘আত নিষিদ্ধ বহু বিষয় বিদ্যমান। যার প্রধানগুলো নিম্নরূপ :

  • শ্রমবিহীন বিনিময় এবং বিনিময়বিহীন শ্রম
  • একটি আকদ (চুক্তি)-এর জন্য আরেকটিকে শর্ত করা
  • অর্জিত হওয়া না-হওয়ার অনিশ্চয়তা
  • সুদের সাদৃশ্য ও দৃঢ় সন্দেহ
  • জুয়ার সাদৃশ্য
  • বাতিল পন্থায় মানুষের মাল ভক্ষণ
  • প্রতারণা ও ধোঁকা
  • বর্ধিত মূল্যে বিক্রয়
  • ‘আকদুল ইজারাহ’-এর উসূল পরিপন্থী

নিম্নে প্রতিটির বিস্তারিত আলোকপাত করা হলো :

(ক) শ্রমবিহীন বিনিময় এবং বিনিময়বিহীন শ্রম: মাল্টি লেভেল মার্কেটিং পদ্ধতি শরী‘আতের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো এতে ‘শ্রমবিহীন বিনিময় এবং বিনিময়বিহীন শ্রম’ রয়েছে যা ইসলামি আইন সমর্থন করে না।

বিনিময়বিহীন শ্রমের বিষয়টি ফুটে উঠে তাদের প্রচলিত সে নীতিতে যাতে রয়েছে, একজন ডিস্ট্রিবিউটর (পরিবেশক)-এর ডান ও বাম উভয় দিকের নেট না চললে সে কমিশন পাবে না। অর্থাৎ কেউ যদি নির্ধারিত পয়েন্টের একজন ক্রেতা জোগাড় করে কিন্তু আরেকজন জোগাড় করতে অক্ষম হয়, তবে লোকটি কমিশন থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত হবে। এমনিভাবে কেউ যদি দু’জন ক্রেতাও কোম্পানিকে এনে দেয়, কিন্তু তারা কোম্পানির নির্ধারিত পয়েন্ট থেকে কম পয়েন্টের মালামাল ক্রয় করে তবে এর জন্যও ঐ ব্যক্তি কমিশন পায় না। ফলে এটি বিনিময়বিহীন শ্রমে পরিণত হয় যা ইসলামি আইনে নিষিদ্ধ। হাদীসে কুদসীতে রয়েছে, আল্লাহ্‌ তা‘আলা বলেন: ‘‘কিয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির সাথে ঝগড়া করবো। (এক) যে ব্যক্তি আমার নামে ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করে। (দুই) যে ব্যক্তি কোনো স্বাধীন ব্যক্তিকে বিক্রয় করে তার মূল্য ভোগ করে এবং (তিন) যে ব্যক্তি কোনো শ্রমিককে কাজে নিযুক্ত করে তার কাছ থেকে কাজ আদায় করার পর মজুরী পরিশোধ করে না’’ [সহীহ বুখারী : ২২২৭]

ইসলামি শরী‘আতে ‘একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কাজ করতে না পারলে পারিশ্রমিক পাবে না’ এ ধরনের শর্ত দিয়ে কোনো চুক্তি করা বৈধ নয়। আল্লামা ইবন রুশদ তার ‘আল-মুকাদ্দামাত’ গ্রন্থে বলেছেন:  ‘‘কাপড়ের নির্দিষ্ট সংখ্যার ওপর এ চুক্তি করে লোক নিয়োগ দেয়া যে, ‘কাপড়ের এত সংখ্যক বিক্রয় করতে না পারলে সে কোনো পারিশ্রমিক পাবে না’ তাহলে চুক্তিটি বৈধ হবে না। কারণ এরূপ ক্ষেত্রে নিয়োগদাতা কর্মচারীর অল্প সংখ্যক বিক্রয় দ্বারা যে উপকৃত হচ্ছে তা তার জন্য বৈধ হবে না।’’[২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩০৯]

আর শ্রমবিহীন বিনিময়টি সুন্দরভাবে ফুটে উঠে তাদের ভিত্তিগত দিকে যা ইতোপূর্বে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে। সংক্ষেপে বলা যায়, তাদের নীতিমালা রয়েছে, কোনো ব্যক্তি নির্ধারিত পরিমাণ পণ্য খরিদান্তে ডিস্ট্রিবিউটর (পরিবেশেক) হওয়ার পর যদি সে দু’জন ক্রেতা নিয়ে আসে এবং তারা প্রত্যেকে আরও দু’জনকে এবং সে চার জন আরও আটজনকে কোম্পানির সাথে যুক্ত করে, তবে প্রথম ব্যক্তি এবং দ্বিতীয় লেভেলের দু’ব্যক্তি নিম্ন লেভেলের আট ব্যক্তি ক্রেতা-পরিবেশকের সুবাদেও কোম্পানি থেকে কমিশন পেয়ে থাকে। অথচ এ আটজনের কাউকেই প্রথম ব্যক্তি ও দ্বিতীয় লেভেলের দু’ব্যক্তি কোম্পনির সাথে যুক্ত করে নি; বরং সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর নীতি অনুযায়ী এরা কোম্পানির সাথে যুক্ত হয়েছে তাদের সরাসরি ওপরের ব্যক্তির রেফারেন্সে এবং এর জন্য ঐ ব্যক্তি নির্ধারিত হারে কমিশনও পাবে। এটি সুস্পষ্টই শ্রমবিহীন বিনিময় যা ইসলামে নিষিদ্ধ।

উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে সুস্পষ্ট যে, তাদের এ কারবারে বিনিময়বিহীন শ্রম ও শ্রমবিহীন বিনিময় দু’টিই পুরোপুরিভাবে বিদ্যমান রয়েছে যা শরী‘আতের দৃষ্টিতে বৈধ নয়।

(খ) একটি আকদ (চুক্তি)-এর জন্য আরেকটিকে শর্ত করা: মাল্টি লেভেল নেটওয়াকিং বৈধ না হওয়ার আরও একটি অন্যতম কারণ হলো এতে হাদীসে নিষিদ্ধ ‘একই চুক্তির জন্য আরেকটিকে শর্ত করা’-এর বিষয়টি রয়েছে। কারণ মাল্টি লেভেল মার্কেটিং-এ পণ্য ক্রয়ের শর্তেই শুধু ডিস্ট্রিবিউটর হওয়া যায়। অর্থাৎ কোম্পানি থেকে পণ্য ক্রয় ছাড়া ডিস্ট্রিবিউটর হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাহলে এখানে পণ্য ক্রয়কে ডিস্ট্রিবিউটর হওয়ার জন্য শর্ত করা হচ্ছে, যা হাদীসে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘একই আকদের জন্য আরেকটিকে শর্ত করা হালাল নয়’’। [তবারানী : ১৬১০]

অপর এক হাদীসে রয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ বলেন: ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই আকদে (চুক্তিতে) দু’টি আকদ (চুক্তি) করতে নিষেধ করেছেন’’। [মুসনাদ আহমাদ : ৩৭৮৩]

এ প্রকারের বেচা-কেনা সম্পর্কে আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ বলেন: ‘‘একটি আকদ (চুক্তি)-এর জন্য আরেকটিকে শর্ত করা সুদী কারবার।’’ [সহীহ ইবন হিব্বান : ১০৫৩]

ইমাম শাফিঈ রহ. এ ধরনের হাদীসের দু’টি ব্যাখ্যা উল্লেখ করেছেন:

এক) বিক্রেতা বলল, আমি এ পণ্যটি তোমার নিকট নগদে বিক্রি করলে এত টাকায় বিক্রি করব আর বাকিতে বিক্রি করলে এত টাকায় বিক্রি করবো। অর্থাৎ নগদে কিনলে মূল্য কম ধরা হবে।

দুই) বিক্রেতা বলল, আমি তোমার নিকট এটি ধরা যাক একশত টাকায় বিক্রি করছি, তবে শর্ত হলো আমার নিকট তোমার ঘরটি এত টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতে হবে। ইসলামিক স্কলারদের সর্বসম্মতিক্রমে এ দু’প্রকারের লেনদেনই বাতিল ও অবৈধ। মাল্টি লেভেল মার্কেটিং-এর পদ্ধতি ইমাম শাফিঈর ব্যাখ্যার দ্বিতীয়টির সাথে মিলে যায়। কারণ তারা ডিস্ট্রিবিউটর হওয়ার জন্য পণ্য ক্রয়কে শর্ত করে থাকে। যা আকদের ওপর আকদের নামান্তর।

কোনো কোনো মাল্টি লেভেল মার্কেটিং কোম্পানি উপরোক্ত শরয়ী সমস্যা এড়ানোর জন্য দু’টি পৃথক ফরমের ব্যবস্থা করেছে। একটি পণ্য ক্রয়ের অর্ডার ফরম, অন্যটি ডিস্ট্রিবিউটরশীপের আবেদন ফরম। তারা বুঝাতে চেয়েছে, এখানে পৃথক দু’টি চুক্তি হচ্ছে। অথচ মূলত কার্যক্ষেত্রে একটি চুক্তির জন্য অন্যটি এখনও জরুরি। অর্থাৎ পণ্য-ক্রয় ছাড়া ডিস্ট্রিবিউটর হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাছাড়া দুই ফরমবিশিষ্ট এ ধরনের কোম্পানির নীতিমালায় সুস্পষ্টভাবে লেখা আছে, ‘‘আপনি কি জানেন যে, নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য ক্রয় ছাড়া এখানে ডিস্ট্রিবিউটর হবার কোন সুযোগ নেই?’’ [ডেসটিনি-২০০০ লিমিডেট, বিক্রয় ও বিপনন পদ্ধতি, পৃষ্ঠা : ২৬] এমনকি এ সকল কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটরশিপ ফরমেও বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে এসেছে। আবার ডিস্ট্রিবিউটর হওয়ার জন্য পণ্য ক্রয়ের শর্তের কথাতো দুই ফরমধারীগণও অস্বীকার করেন না; বরং তারা তো ডিস্ট্রিবিউটরদেরকে ‘ক্রেতা ডিস্ট্রিবিউটর’ নামেই উল্লেখ করেন।

সুতরাং দুই ফরমের ব্যবস্থা করায় ব্যবসাটি উপরোক্ত হাদীসের নিষেধাজ্ঞা থেকে বের হয়ে যায় নি, বরং যথারীতি আগের অবস্থাতেই বহাল আছে যা শরী‘আতে নিষিদ্ধ।

(গ) হাসিল হওয়া না-হওয়ার অনিশ্চয়তা : মাল্টি লেভেল মার্কেটিং অবৈধ হওয়ার আরো একটি কারণ হলো তাতে হাদীসে নিষিদ্ধ (হাসিল হওয়া না-হওয়ার অনিশ্চয়তা) রয়েছে। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু বলেন: রাসূলুল্লাহ স. নুড়ি পাথর নিক্ষেপ করে ক্রয়-বিক্রয় সাব্যস্ত করা এবং বাইয়ুল গারার (অনিশ্চিত ক্রয়-বিক্রয় করা) থেকে বারণ করেছেন। [সহীহ মুসলিম : ৩৮৮১]

বাইয়ুল গারারের সংজ্ঞা :

ইসলামি পণ্ডিতগণ বাইয়ুল গারার -এর সংজ্ঞা বিভিন্নভাবে প্রদান করেছেন। নিম্নে তা প্রদত্ত হলো :

(ক) আল্লামা কাসানী রাহ. বলেন: ‘‘গারার হচ্ছে এমন একটি অনিশ্চয়তা, যাতে হওয়া এবং না-হওয়া উভয় দিক বিদ্যমান।’’ [বাদায়ে‘উস সানায়ে‘উ, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ৩৬৬]

(খ) আল্লামা ইবনুল আসীর জাযারী রাহ. বলেন: ‘‘যার এমন একটি প্রকাশ্য রূপ রয়েছে যা দ্বারা মানুষ এর প্রতি আকৃষ্ট হয়; কিন্তু এমন অদৃশ্য কারণ রয়েছে যে কারণে তা অস্পষ্ট। এর প্রকাশ্য রূপ ক্রেতাকে ধোঁকায় ফেলে। আর এর ভিতরের রূপ অজানা’’ [জামেউল উসূল, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৫২৭]

(গ) আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রাহ. বলেন: ‘‘বাইয়ুল গারার ঐ কারবারকে বলা হয় যাতে পণ্য বা সেবা পাওয়া যাবে কিনা তা অনিশ্চিত অথবা চুক্তিভুক্ত ব্যক্তি নিজে তা যোগান দিতে অক্ষম অথবা যারা পরিণাম অজানা’’ [যাদুল মা‘আদ, খণ্ড : ৫, পৃষ্ঠা : ৭২৫]।

(ঘ) কারো কারো মতে, বাইয়ুল গারার হলো: ‘‘যে কোনো কারবারের চুক্তির মধ্যে অনিশ্চয়তা।’’ যেমন, পুকুরে বা নদীতে মাছ কেনা-বেচা, আকাশে উড়ন্ত পাখি বেচা-কেনা ইত্যাদি।

মোটকথা, যাতে হাসিল হওয়া বা না-হওয়ার অনিশ্চয়তা রয়েছে তাই হচ্ছে আল-গারার। হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী যে ব্যবসায় এ গারার পাওয়া যাবে তা অবৈধ ও নাজায়িয। আল্লামা ইবন কুদামাহ তার ‘আশ-শারহুল কাবীর’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ইবরাহীম হারবীকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, কোনো লোক যদি এ শর্তে মোরগ ভাড়া নিতে চায় যে, এ মোরগ তাকে সালাতের সময় ঘুম থেকে জাগাবে তবে এ ধরনের কারবার জায়িয হবে কি না? তিনি উত্তর দিলেন, না। কারণ এটি অনিশ্চিত কারবার। হতে পারে কখনো কখনো মোরগ ডাকবে না, আবার কখনো সালাতের সময়ের আগে ডাকবে বা পরে ডাকবে, আবার কখনো হয়তো তার মুখ থেকে ডাক বের করার জন্য প্রহারের প্রয়োজন হবে ইত্যাদি। সুতরাং নানাবিদ অনিশ্চয়তার সম্ভাবনা থাকায় এ ধরনের চুক্তি জায়িয নেই। [খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ৩১৯]

মাল্টি লেভেল মার্কেটিং কোম্পানির পদ্ধতির দিকে তাকালে অনুমেয় হয় যে, সেখানে বহু পদ্ধতিতে গারারের উপস্থিতি রয়েছে। একজন ডিস্ট্রিবিউটর যে চুক্তিতে কোম্পানির সাথে যুক্ত হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো, লোকটি তার ডাউনলাইন থেকে কমিশন লাভ করতে থাকবে। অথচ তার নিজের বানানো দু’জন ব্যক্তি ছাড়া অন্যদের বিষয়টি সম্পূর্ণই অনিশ্চিত এবং অন্যের কাজের ওপর নির্ভরশীল। কারণ তার নিম্নের নেটগুলো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অগ্রসর না করলে লোকটি কমিশন পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে; যে কমিশনকে কেন্দ্র করেই সে মূলত এ মাল্টি লেভেল মার্কেটিং কোম্পানির সাথে যুক্ত হয়েছে।

কোনো কোনো মাল্টি লেভেল কোম্পানিতে ‘ট্রি প্লান্টেশন’ নামে একটি পদ্ধতি রয়েছে। বছরখানেক আগে এ প্রতারণা নিয়ে পত্রিকায় ধারাবাহিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল। ৮০০০ (আট হাজার) টাকা নিয়ে ১২ বছর পর ৩০,০০০ (ত্রিশ হাজার) টাকা অথবা সমপরিমাণ অর্থের গাছ প্রদানের অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করা হয়। গাছ লাগানোর জন্য আদৌ কোনো জায়গা ক্রয়া করা হয়েছে কি না বা কতজন গাছ লাগানোর জন্য টাকা দিয়েছে— এসব বিষয়ে একটা অস্পষ্টতা থেকেই যাচ্ছে। এ সকল অনিশ্চয়তা ও অস্পষ্টতার কারণে ইসলামি শরী‘আত এ লেনদেনকে বৈধ সাব্যস্ত করে না।

(ঘ) সুদের সাদৃশ্য ও দৃঢ় সন্দেহ: মাল্টি লেভেল মার্কেটিং হালাল না হওয়ার আরেকটি কারণ হলো, এতে শরী‘আত নিষিদ্ধ সুদের সাদৃশ্য ও সন্দেহ বিদ্যমান। ইসলামি আইন অনুযায়ী যে সকল কারবারে সুদের সাদৃশ্য ও সন্দেহ রয়েছে তা না জায়িয। ইসলামি আইনবিদগণ এ কারণে বহু কারবারকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। কারণ রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন:‘‘হালাল সুস্পষ্ট এবং হারাম সুস্পষ্ট। এতদুভয়ের মাঝে রয়েছে সন্দেহ ও সাদৃশ্য বিষয় যা অধিকাংশ মানুষই জানে না। কাজেই যে সাদৃশ্য ও সন্দেহ থেকে বেঁচে থাকে সে নিজের দ্বীন ও ইজ্জত রক্ষা করল। আর তাতে জড়ালো সে হারামে নিপতিত হলো’’। [সহীহ বুখারী : ৫২]

অপর এক হাদীসে এসেছে: ‘‘তোমাকে যা সন্দেহে ফেলে তা ছেড়ে তুমি নিশ্চিত জিনিসের দিকে ধাবিত হও।’’ [সুনান তিরমিযী : ২৫১৮, হাদীসটি সহীহ]

ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন: ‘‘কুরআনের সর্বশেষ আয়াত হচ্ছে রিবা (সুদ)-এর আয়াত। রাসূলুল্লাহ স.-এর মৃত্যু হয়ে গিয়েছে কিন্তু তিনি সুদের আয়াতের ব্যাখ্যা দেন নি। কাজেই তোমরা সুদ এবং এমন জিনিস যাতে সুদের সন্দেহ রয়েছে তা বর্জন করো’’। [মিশকাত : ২৮৩০, সুনান ইবন মাজাহ : ২৪৭, হাদীসটি সহীহ]

উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর ঘোষণা হলো, যেহেতু রাসূলুল্লাহ স. রিবার আয়াতের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়ে যান নি সেহেতু যাতে সরাসরি রিবা রয়েছে তাতো বর্জন করতেই হবে পাশাপাশি যাতে রিবার সন্দেহ ও সাদৃশ্য রয়েছে তাও বর্জন করতে হবে।

মাল্টি লেভেল মার্কেটিং-এ সুদের সাদৃশ্য-এর বিবরণ এভাবে দেয়া যায় যে, এসব কোম্পানিগুলোতে ডিস্ট্রিবিউটররা পণ্য ক্রয়ের জন্য উদ্বুদ্ধ হয় কমিশন পাওয়ার আশায়। এতে বুঝা যায়, সে পণ্য ক্রয় বাবদ যে টাকাটি দিয়েছে তা শুধু ঐ পণ্যের মূল্য হিসেবেই দেইনি বরং তা দেয়ার পেছনে তার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ডাউনলাইনদের কাছ থেকে কমিশন ভোগ করা। পণ্যের মূল্য প্রদানের পাশাপশি কমিশনের যে সুযোগের আশায় সে এ কারবারটি করছে তাই ইসলামি শরী‘আতের পরিভাষায় সুদের সাদৃশ্য।

কারও নেট চলমান থাকার কারণে সে নির্দিষ্ট টাকার মোকাবেলায় কমিশন পাওয়ার বিষয়টি যেমনি সুদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ তেমনি যার নেট একেবারেই অগ্রসর হয় নি তার বিষয়টিও সুদের সাদৃশ্য থেকে মুক্ত নয়। কারণ সে তো টাকা দিয়েছিল পণ্য এবং ডিস্ট্রিবিউটর হয়ে কমিশন ভোগ করার জন্য। অথচ ডিস্ট্রিবিউটরের কোনো সুবিধাই সে পায় নি। তথা কিছু টাকা বিনিময়ের অতিরিক্ত থেকেই যাচ্ছে যা ইসলামি আইনের দৃষ্টিতে সুদের সাদৃশ্য বা সন্দেহমূলক সুদ। আর তাছাড়া উপরে আমরা পদ্ধতিগত দিকের প্রথম যে কারণ ‘শ্রমবিহীন বিনিময় এবং বিনিময়বিহীন শ্রম’ উল্লেখ করেছি তাও ইসলামী শরী‘আতের দৃষ্টিতে সন্দেহমূলক সুদের আওতাভুক্ত। কারণ সেখানে শ্রম না দিয়ে বিনিময় নেয়াটি যেমন সুদ সাদৃশ্য তেমনি শ্রম নিয়ে বিনিময় না দেয়াটিও সুদ সাদৃশ্য।

(ঙ) জুয়ার সাদৃশ্য: মাল্টি লেভেল মার্কেটিং ব্যবসা না জায়িয হওয়ার আরও একটি কারণ হলো, এর সাথে জুয়ার সাদৃশ্য রয়েছে। ইসলামি পণ্ডিতগণ এ ব্যবসাকে জুয়ার সাথে তুলনা করে একে হারাম ফতোয়া দিয়েছেন। এ ব্যবসায় একজন ডিস্ট্রিবিউটর পণ্য ক্রয় করার পর সে যদি তার ডান ও বাম হাত উভয় দিকে সমান্তরাল ডিস্ট্রিবিউটর বাড়াতে পারে তবে সে কমিশন পাবে অন্যথায় সে কোনো কিছুই পাবে না। এটি জুয়ার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আর জুয়াকে ইসলামি আইন হারাম করেছে। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্‌ বলেছেন: ‘‘হে মু’মিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপুজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কার্য। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো— যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো’’ [সূরা মায়িদা, আয়াত নম্বর : ৯০]

ইন্টারন্যাশনাল ফিকহ একাডেমি কর্তৃক প্রদত্ত এক ফতোয়ায় মাল্টি লেভেল মার্কেটিংকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। তারা এ সিস্টেমে আপলাইনের দালালদের যে কমিশন দেয়া হয়া তা বৈধ দালালির ফি’র মতো নয় বলে জানান। বরং তারা প্রমাণ করেন যে, এতে সুস্পষ্ট জুয়াবাজী নিহিত রয়েছে।

(চ) বাতিল পন্থায় মানুষের মাল ভক্ষণ: মাল্টি লেভেল মার্কেটিং হালাল না হওয়ার আরো একটি অন্যতম কারণ হলো, এর মাধ্যমে ‘অন্যায়ভাবে অন্যের মাল ভক্ষণ’ করা হয় যা ইসলামি আইনে নিষিদ্ধ। এ ব্যবসায় আপলাইনের ডিস্ট্রিবিউটররা ডাউনলাইন ডিস্ট্রিবিউটরের বিক্রি থেকে ‘‘তত্ত্বাবধানের’’ নাম দিয়ে যে বিশাল কমিশন ভোগ করে, ইসলামি আইনের পণ্ডিতগণ সেটাকে ‘অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ ভোগ’-এর অন্তর্ভুক্ত করেছেন। কারণ তাতে শ্রমবিহীন বিনিময় রয়েছে যা আমরা ইতোপূর্বের আলোচনায় সাব্যস্ত করে এসেছি। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্‌ অন্যায়ভাবে অন্যের মাল ভক্ষণকে সম্পূর্ণভাবে হারাম করে ঘোষণা দিয়েছেন: ‘‘হে মুমিনগণ, তোমরা পরস্পরের মধ্যে তোমাদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না, তবে পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসার মাধ্যমে হলে ভিন্ন কথা’’। [সূরা আন-নিসা : ২৯]

বিখ্যাত মুফাসসির আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা এবং প্রখ্যাত তাবিঈ হাসান বসরী রহ. এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলে: ‘‘বিনিময়ের শর্তযুক্ত চুক্তিতে বিনিময়বিহীন উপার্জনই হল বাতিল পন্থায় উপার্জন’’ [আহকামুল কুরআন (জাসসাস) খণ্ড ২, পৃষ্ঠা : ১৭২]

মোটকথা: অত্র আয়াতে ‘‘অন্যায়ভাবে’’ বলতে এমন সব কারবারকে বুঝানো হয়েছে যা আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষিদ্ধ করেছেন। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ উল্লেখ করেন: এখানে ‘‘অন্যায়ভাবে’’ বলতে ‘‘এমন সব পদ্ধতির কথা বুঝানো হয়েছে যা সত্য ও ন্যায়নীতি বিরোধী এবং নৈতিক দিক দিয়ে ও শরী‘আতের দৃষ্টিতে নাজায়িয’’ [সূরা আন-নিসা, আয়াত ২৯]

ওআইসি‘র ইন্টারন্যাশনাল ফিকহ একাডেমির চীফ স্কলার প্রফেসর ড. আব্দুস সাত্তার আবু গুদ্দাহ এ সংক্রান্ত তার ফতোয়ায় বিষয়টি সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, “…compound brokerage falls under the category of eating up another’s property unjustly and has an element of gambling in it. The main factor that contributes to this is the fact that compound brokerage automatically implies that a portion from the sales of the down line will be channeled to the up line.” [The Awakening, November 2008; http://theawakening.blogspot.com/2008]

মাল্টি লেভেল মার্কেটিং-এর কমিশন পদ্ধতিতে কিভাবে ‘‘জুয়াবাজী’’ ও ‘‘অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ ভোগ’’ জড়িয়ে আছে তার একটি চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়ে শেখ সালীম আল-হিলালী বলেন, “This type of business is pure gambling because the purpose is to develop continuous network of people. With this network, large number of people at the bottom of the pyramid (down line) pays money to a few people at the top (up line). In this scheme, no new wealth is created; the only wealth gained by any participation is wealth lost by other participants. Each new member pays for the chance to profit from payment of others who might join later.” [The Awakening, November 2008; http://theawakening.blogspot.com/2008]

(ছ) Business Fraud বা প্রতারণা: মাল্টি লেভেল মার্কেটিং হালাল না হওয়ার আরো একটি কারণ হলো, তাতে রয়েছে বড় ধরনের প্রতারণা। অর্থনীতির হিসাবে কোনো অবস্থাতেই তাদের এ ব্যবসায় এক মাসে ১০ বা ২০ শতাংশ লাভ হতে পারে না। তাই এ ধরনের লাভ দিতে হলে কাউকে না কাউকে ঠকাতে হবেই। ফলে শর্তের মারপ্যাঁচ বুঝে উঠার আগেই প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এক শ্রেণীর লোকেরা। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘যে ব্যক্তি প্রতারণা করে সে আমার দলভুক্ত নয়’’। [সহীহ মুসলিম : ১৯৫]

গ্রাম পর্যায়ে সরেজমিনে তদন্ত করে দেখা গেছে এ সকল কোম্পানির অধিকাংশ ক্রেতাই আপলাইনের অগণিত মধ্যস্বত্বভোগীদের কমিশনের কথা জানে না। এ হিসেবে তো এটি সুস্পষ্ট প্রতারণার শামিল। পৃথিবীতে যত মাল্টি লেভেল ব্যবসা রয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ সফল হয়েছে মিশিগানের ‘অ্যামওয়ে’ নামের এমএলএম কোম্পানি। সেখানে ১০ শতাংশ ডিস্ট্রিবিউটর লাভ বা সফলতার মুখ দেখেছে, বাকী ৯০ শতাংশ তাদের কস্টার্জিত অর্থ কোম্পানির ওই ১০শতাংশের পকেটে ঢুকিয়ে দিয়ে নিজেরা প্রতারিত হয়েছে।

(জ) বর্ধিত মূল্যে বিক্রয়: মাল্টি লেভেল মার্কেটিং না জায়িয হওয়ার আরও একটি কারণ হলো, এ সকল কোম্পানি পণ্যের যথাযথ মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যে তা বিক্রয় করে থাকে। আর এক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নেয় যা শরী‘আত অসঙ্গত। আমরা জানি, ট্রাডিশনাল মার্কেটিং-এ একটি পণ্য উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছতে উৎপাদক + এজেন্ট + পাইকার + খুচরা বিক্রেতা + ভোক্তা ইত্যাদি কতিপয় মধ্যস্বত্বভোগী থাকে। কিন্তু মাল্টি লেভেল মার্কেটিং-এ এসকল মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের বাদ দিয়ে তারা নিজেরাই ডাউনলাইন ও আপলাইন নাম দিয়ে শত সহস্র মধ্যস্বত্ত্বভোগী সৃষ্টি করে চলছে। এ বিপুল সংখ্যক মধ্যস্বত্বভোগীকে কমিশন দিতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই কোম্পানিকে বর্ধিত মূল্যে পণ্য বিক্রি করতে হয়। তাই তারা প্রচলিত পণ্যদ্রব্য পরিহার করে এমন পণ্য মার্কেটে নিয়ে আসে যেগুলো সম্পর্কে মানুষের কোনো ধারণা নেই। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ‘‘নাইজেলা’’ নামক তৈল যার প্যাকেজ মূল্য ৬০০০ টাকা। মাত্র এ ৬০০০ টাকায় কোম্পানি ২৭৭৫ টাকা লাভ করে বলে স্বীকার করা হয়। এভাবে অন্যান্য পণ্যগুলোও দ্বিগুন বা তার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হয়। ইসলামি শরী‘আতে ক্রয়-বিক্রয় ও যাবতীয় চুক্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার প্রতি জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। ইসলামি আইনে পণ্যের গুণগত মান ও ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতিতে বাজার নিয়ন্ত্রিত হবে। ভিন্ন কোনো পদ্ধতিতে বাজার প্রভাবিত করা শরী‘আতে নিষিদ্ধ। সুতরাং পণ্যের মান বৃদ্ধি না করে কোনো কৌশল অবলম্বন করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করাকে ইসলাম কখনোই সমর্থন করে না। যে সব কৌশলের মাধ্যমে দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি করা হয় তার প্রতিটিই ইসলাম হারাম করেছে। যেমন দাম বাড়ানোর জন্য দ্রব্য মজুত করা। যারা এরূপ করে ইসলামের পরিভাষায় তারা অভিশপ্ত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘যে ব্যক্তি বর্ধিত মূল্যে বিক্রির উদ্দেশ্যে পণ্য আটকে রাখে সে গুনাহগার’’। [সহীহ মুসলিম : ২১৬৪]

অনুরূপ কৌশলে শহরের বাইরে থেকে আগত লোকদের থেকে অল্প মূল্যে মাল ক্রয় করে তা বেশি দামে বিক্রি করা হলে তা থেকেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিরত থাকতে বলেছেন। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শহরে বসবাসকারী কোনো ব্যক্তি শহরের বাইরে থেকে আগত কোনো ব্যবসায়ীর কাছ থেকে পণ্য কিনে তা শহরের বাসিন্দাদের কাছে বিক্রি করা থেকে বারণ করেছেন’’ [সহীহ মুসলিম: ৩৫২৪]

এ নিষেধাজ্ঞার ফলে শহরে বসবাসরত মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের অল্প পরিশ্রমে অধিক মুনাফা লাভের বিষয়টি বন্ধ হয়ে গেলে তারা একটু বেশি পরিশ্রম দেখানোর জন্য আগে-ভাগে শহরের বাইরে গিয়ে পথিমধ্যে বিক্রেতাদের কাছ থেকে পণ্য ক্রয় করে তা শহরে এনে বেশি দামে বিক্রয় করার কৌশল অবলম্বন করলে সে ব্যাপারেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শহরবাসীকে শহরমুখী ব্যবসায়ীদের সাথে সাক্ষাৎ করে পণ্য ক্রয় করে তা শহরে এনে বেশি দামে বিক্রয় করতে বারণ করেছেন’’ [সহীহ মুসলিম : ৩৮৯১]

সুতরাং এটি সুস্পষ্ট যে, ইসলামি আইন দ্রব্যমূল্যের বিষয়টি গুরুত্বসহ নিয়েছে। কোনো প্রকার কৌশল অবলম্বন বা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করা শরীআত সঙ্গত নয়। বৃহৎ অর্থনীতির অনিবার্য ক্ষেত্রসমূহে কিছু নিয়ন্ত্রিত মধ্যস্বত্বভোগীর অনুমতি দিলেও ভোক্তা ও উৎপাদকের মাঝে অনর্থক মধ্যস্বত্ত্বভোগীর সংখ্যা বাড়ানো ইসলামে নিষিদ্ধ।

(ঝ) ইজারা চুক্তির উসূলের পরিপন্থী: এমএলএম অবৈধ হওয়ার আরও একটি কারণ হলো তাদের কোনো কোনো পদ্ধতি ইজারা চুক্তির মূলনীতির পরিপন্থী। আমরা জানি, এ সকল কোম্পানিগুলোর ব্যাখ্যা অনুযায়ী ডিস্ট্রিবিউটরশিপ চুক্তিটি শরী‘আতের দৃষ্টিতে ‘আকদুল ইজারাহ।’ আর ‘আকদুল ইজারাহ’-এর দু’টি মৌলিক দিক রয়েছে। ১. শ্রম বা সেবা, ২. পারিশ্রমিক বা বিনিময়। আকদুল ইজারাহ শুদ্ধ হওয়ার জন্য এ দু’টি শর্ত বিদ্যমান থাকতেই হয়। কিন্তু কোনো কারবারে যদি এ দু’টির কোনো একটি না থাকে তথা সেবা বা শ্রম পাওয়া গেল কিন্তু বিনিময় পাওয়া গেল না কিংবা সেবা বা শ্রম ছাড়াই বিনিময় পাওয়া গেল তবে সে কারবারটি ইসলামি আইনে বৈধ নয়।

মাল্টি লেভেল মার্কেটিং-এ যেহেতু দুটোরই সম্ভাবনাই রয়েছে সেহেতু এ কারবার ও ব্যবসা হালাল নয়।

আরও কতিপয় ত্রুটি :

প্রাগুক্ত আলোচনায় আমরা শরী‘আতের নীতিমালার সাথে অসংগতিপূর্ণ বিষয়গুলোকে বিশেষভাবে পর্যালোচনা করেছি। নিম্নে তাদের আরো কতিপয় ত্রুটি তুলে ধরছি :

(ক) আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হওয়ার স্বপ্ন: দারিদ্র পীড়িত ও বেকারত্বের এ দেশে অনেকেই বাকপটু পরিবেশকের কথার মারপেঁচে পড়ে অথবা সেমিনার দেখে কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও পণ্য ক্রয় করে পরিবেশক হয়ে যায়। পরবর্তীতে দেখা যায়, সে কোনক্রমেই অন্য কোনো ক্রেতা যোগাড় করতে পারে না। ফলে তার ধনী হওয়ার স্বপ্ন রূপান্তরিত হয় দুঃস্বপ্নে।

(খ) অন্যের ওপর চাপ সৃষ্টি: কখনো কখনো দেখা যায়, কোনো কোনো পরিবেশক তার নেট অগ্রসর করানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। ফলে সে তার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবকে কোম্পানির সাথে যুক্ত করতে জোর আবদার করে। আবার কখনো নিজ থেকে টাকা ঋণ দিয়ে তাদের জন্য পণ্য সরবরাহ করে থাকে। তাদের পীড়াপিড়ির কারণে অনেকের ইচ্ছ না থাকা সত্ত্বেও পণ্যটি কিনতে বাধ্য হয়।

(গ) মূল পেশায় দায়িত্বশীলতা হ্রাস পাওয়া: এমএলএম-এর মূল কাজ যেহেতু ক্রেতা জোগাড় করা তাই অন্যান্য চাকুরির পাশাপাশি এটি করা খুবই সহজ। ফলে দেখা যায়, অনেকেই এ কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করার কারণে পেশাগত কাজের ফাঁকে ফাঁকে বা অফিস সময়ের পর ক্রেতার খোঁজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে বাধ্য হয়। এতে একদিকে পেশাগত কাজে ফাঁকি দেয়া হয় অন্যদিকে পেশাগত কাজে তার উদ্যম ও কর্মতৎপরতার ভাটা পড়ে। যা একসময় জাতীয় বিপর্যয়ও হতে পারে।

এমএলএম-এর সমর্থকদের যুক্তি ও তা খণ্ডন :

যারা এ ব্যবসাকে বৈধ বলে তারা বহুস্তর সুবিধাকে জায়িয করার জন্য যে সকল যুক্তি প্রদান করে থাকে তার কিছু আমরা উপর্যুক্ত আলোচনায় অপনোদন করেছি। যেমন, দু’ফরমের ব্যবস্থা। নিম্নে তাদের আরও কিছু যুক্তি তুলে ধরে সেগুলো খণ্ডন করা হলো:

প্রথম যুক্তি : বহুস্তর সুবিধাসদকায়ে জারিয়ার ন্যায় :

এই কারবারের সমর্থকরা শ্রমের বহুস্তর সুবিধাকে সদকায়ে জারিয়ার সাথে তুলনা করে বলেন, ‘‘সদকায়ে জারিয়ায় ব্যক্তি যেমন একবার শ্রম দিয়ে দীর্ঘদিন পর্যন্ত এর ফল ভোগ করতে পারে তেমনি এখানে একজন একবার প্রত্যক্ষ শ্রম দিয়ে দীর্ঘদিন পর্যন্ত তা ভোগ করার বৈধতা রাখে’’।

যুক্তি খণ্ডন: তাদের এ যুক্তির ৩টি উত্তর রয়েছে।

১. সদকায়ে জারিয়া একটি আধ্যাত্মিক বিষয় যার সাথে অর্থ ও শ্রম নীতির কোনও সম্পর্ক নেই। কারণ সদকায়ে জারিয়ায় ব্যক্তি যেই ফল পায় তা হলো ছাওয়াব যার কোনো আর্থিক মূল্য নেই। সুতরাং তাদের এ তুলনা বা কিয়াসটি যথাযথ হয় নি। নিরেট ছাওয়াবের বিষয়কে আর্থিক মূল্যের সাথে তুলনা না করাই নীতিগত বিষয়।

২. সদকায়ে জারিয়ার সাথে এমএলএম-এর তুলনা করতে হলে কোম্পানিগুলোকে ঘোষণা দিতে হবে যে, ‘‘প্রতিটি ব্যক্তি তার প্রত্যক্ষ শ্রমের ভিত্তিতে সে সরাসরি যার নিকট পণ্য বিক্রি করবে শুধু তার নিকট থেকে কমিশন পাবে। বাদবাকি যাদের ক্ষেত্রে তার প্রত্যক্ষ শ্রম নেই তাদের উপকার করার কারণে তাদের কাছ থেকে শুধু ছাওয়াবের আশা করবে।’’ তারা এরূপ ঘোষণা দিলে তাদের সাথে ইসলামও একমত।

৩. সদকায়ে জারিয়ার বিষয়টি শরী‘আত প্রণেতা কর্তৃক স্বীকৃত এবং এর ছাওয়াব তিনি নিজ ভাণ্ডার থেকে দেন। এতে অন্য কারো ক্ষতি হচ্ছে না। কিন্তু এমএলএম কোম্পানিগুলো কমিশনটি নিজেদের তহবিল বা ভাণ্ডার থেকে দেয় না বরং তা নতুন ক্রেতার নিকট কমদামি পণ্যটি চড়া দামে বিক্রি করার মাধ্যমে বর্ধিত মূল্যের একটি অংশকে কেটে কেটে প্রদান করে। কাজেই সদকায়ে জারিয়ার সাথে এর তুলনা অমূলক।

দ্বিতীয় যুক্তি : ডাউনলাইনের লোকদের পেছনে আপলাইনের লোকদের কোনো না কোনো শ্রম থাকে:

তারা বলে, ‘‘আপলাইনের লোককে তার নেট সম্প্রসারণের জন্য প্রচুর পরিমানে খাটতে হয়। সে ঘরে বসে থাকলে তার নেট অগ্রসর হতো না’’ অথবা ‘‘যেহেতু আপলাইনের লোকের সরাসরি প্রচেষ্টায় দু’জন লোক যুক্ত হয়েছে এবং তাদের মাধ্যমে আরো দু’জন, এভাবে নেট সম্প্রসারিত হয়েছে। কাজেই ধরে নেয়া যায় যে, সকল ক্ষেত্রেই তার শ্রম রয়েছে’’।

যুক্তির খণ্ডন: ইসলামি শরী‘আতের আইন মতে তাদের এ যুক্তিটি বাতিল যুক্তি। কারণ শরী‘আতের দৃষ্টিতে কোনো কারবার বৈধ-অবৈধ হওয়ার ভিত্তি হচ্ছে এর চুক্তিনামার শর্তাবলি। অর্থাৎ কোনো চুক্তিতে শরী‘আত নিষিদ্ধ ধারা উল্লেখ থাকলে তা অবৈধ বলে গণ্য হবে। যেহেতু এমএলএম আইন অনুযায়ী অধীনস্থ নেট সম্প্রসারণে উপরস্থ ব্যক্তির শ্রম থাকুক বা না থাকুক নেট চালু থাকলে প্রত্যেকেই চুক্তি অনুযায়ী কমিশন লাভ করবে সেহেতু এ চুক্তিটিই শরী‘আত সম্মত হয় নি। আর তাদের দ্বিতীয় বাণী, ‘‘ধরে নেয়া যায় যে, সকল ক্ষেত্রেই তাদের শ্রম রয়েছে’’ এটি ভিত্তিহীন। কারণ আপলেভেলে দু’ব্যক্তিকে যুক্ত করার কারণে ডাউনলেভেলের সকলের অন্তর্ভুক্তিতে তার শ্রম রয়েছে- এমন কথা সুস্থ বিবেক মেনে নিতে পারে না।

তৃতীয় যুক্তি: ‘বহুস্তর সুবিধা’ বইয়ের প্রচার স্বত্ত্বের মতো:

তারা বলে, একজন লেখক তার বইয়ের প্রতি সংস্করণের জন্য প্রকাশক থেকে টাকা পেয়ে থাকে, এমএলএম-এর কমিশনও সে ধরনের কিছু।

যুক্তির খণ্ডন : বইয়ের প্রচার স্বত্বের সাথে এর তুলনা অবান্তর। কারণ বই যতই বের হোক, তাতে তো লেখকের চিন্তা থেকে বের হওয়া খাটুনিমাখা লেখাই থাকছে। একটি বইয়ের মূল উপাদান তো আর কাগজ-কালি নয়; বরং এর ভেতরের জ্ঞানই এর মূল সম্পদ। অথচ এমএলএম-এর কমিশন কার সম্পদ?

চতুর্থ যুক্তি : বহুস্তর সুবিধাপুত্রের আয়ে পিতার হক ও অংশের মতো:

তারা বলে, কোনো পিতা যেমনিভাবে তার পুত্রের পেছনে বিনিয়োগ ও তত্ত্বাবধানের কারণে পুত্রের আয়ে বৈধ হক রাখে তেমনিভাবে এমএলএম-এ আপলাইন ‘তত্ত্বাবধানের’ দায়িত্ব নিয়ে ডাউনলাইনের আয়ে বৈধ হক রাখে।

যুক্তির খণ্ডন : তাদের এ যুক্তিটি একাধিক কারণে সঠিক নয়। যথা :

১. পুত্রের আয়ে পিতার বৈধ হকের বিষয়টি পুত্রের ওপর পিতার বিনিয়োগ ও তত্ত্বাবধানের কারণে নয় বরং তা শরী‘আত প্রণেতার মিরাছ আইনের কারণে। তা বিনিয়োগ ও তত্ত্বাবধানের সাথে সম্পৃক্ত নয়। তা হলে কন্যার আয়েও পিতার বৈধ হক থাকত। কারণ সেখানেও বিনিয়োগ ও তত্ত্বাবধানের বিষয়টি রয়েছে।

২. পুত্রের আয়ে পিতার হকের কোনো মাল্টি-লেভেল প্রভাব নেই। পুত্র কাউকে কাজে লাগালে সেখান থেকে পিতা কোনো সুবিধা পাওয়ার হক রাখে না। আবার পিতা একই সময়ে একাধিক লেভেল যেমন পুত্র, পৌত্র ও প্রপৌত্র থেকে আথির্ক সুবিধা দাবি করতে পারে না যেমনটা এমএলএম-এ করা হয়।

পঞ্চম যুক্তি : বহুস্তর সুবিধাঅনাথ শিশুকে কর্মক্ষম করলে তার উপার্জনে প্রাপ্য অংশের ন্যায় :

তারা বলে, একটি অনাথ শিশুর পিছনে বিনিয়োগ ও শ্রম দিয়ে তাকে শিক্ষিত ও কর্মক্ষম করে তুললে তার উপার্জনে উক্ত অভিভাবকের যেমনিভাবে একটি বৈধ অংশ সৃষ্টি হয় তেমনিভাবে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং-এ একজন প্রতিনিধি প্রত্যক্ষ শ্রম দিয়ে কোনো নতুন ব্যক্তিকে এর অন্তর্ভুক্ত করলে তার ভবিষ্যৎ নিম্নলেভেলের চুক্তিসমূহের মধ্যেও প্রতিনিধির একটি বৈধ অংশ সৃষ্টি হয়ে যায়।

যুক্তির খণ্ডন: তাদের এ যুক্তিতে যদিও যথেষ্ট বিচক্ষণতা রয়েছে তথাপি তাদের এ যুক্তিটি মাল্টি লেভেলের সুবিধাকে সমর্থন করে না। কারণ এ ক্ষেত্রে যে তার পিছনে বিনিয়োগ করল সে একদিকে পাবে ছাওয়াব যার আর্থিক মূল্য নেই অন্যদিকে সে যে অর্থ বিনিয়োগ করেছিল তা পাওয়ার অধিকার রাখলেও সেটার সাথে বহুস্তর পর্যন্ত সুবিধা ভোগের কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ এ ক্ষেত্রে অনাথের পেছনে বিনিয়োগকারী শুধুমাত্র তার বিনিয়োগকৃত টাকারই হকদার। এর অতিরিক্ত কোনো কিছুর সে হকদার নয়।

ষষ্ঠ যুক্তি: বহুস্তর সুবিধাবাড়ি ভাড়া ভোগের মতো :

তারা বলে, ‘‘একবার শ্রম ও বিনিয়োগ করে বাড়ির মালিকরা সারাজীবন বসে বসে ঐ বাড়ির ভাড়া ভোগ করার যেমন বৈধতা রয়েছে তেমনি এমএলএম-এ একবার শ্রম দিয়ে ডাউনলাইন তৈরি করে তা থেকে কমিশন ভোগ করার বৈধতাও রয়েছে। কারণ, নীতি সব স্থানে একই রকম হওয়া উচিত’’।

যুক্তির খণ্ডন: এ যুক্তিতে তাদের মারপেঁচে তারাই ধরা খায়। কারণ একটি বাড়ি করার পেছনে দু’ধরনের বিনিয়োগ থাকে। মালিকের অর্থ ও শ্রমিকের শ্রম। যদি শ্রমের বহুস্তর সুবিধাকে মেনে নেয়া হয় তাহলে প্রতিটি বাড়ির ওপর শ্রমিকেরও সুবিধা ভোগের একটি স্থায়ী অধিকার অর্জিত হতো। কিন্তু বাস্তবে তো শ্রমিক সে বাড়ির কোনো সুবিধা ভোগ করে না। কারণ এক্ষেত্রে মালিক অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে বাড়ি অর্জন করেছে যা ভাড়া দেয়ার যোগ্য আর শ্রমিক শ্রম বিনিয়োগ করে টাকা অর্জন করেছে যা ভাড়া দেয়ার যোগ্য নয়। দু’পক্ষই দু’টি স্বতন্ত্র জিনিস অর্জন করেছে। এতে এটিই প্রমাণিত হয় যে, প্রত্যেকে তার শ্রমের একস্তর সুবিধা নিকটতম স্তর থেকেই পেয়ে থাকে; বহুস্তর থেকে নয়। বাড়ি, জমি, দোকান-পাঠ ইত্যাদি ভাড়া দিয়ে তা থেকে সুবিধা ভোগ করা যায়। কিন্তু তাতে বহুস্তর সুবিধা ভোগের কোনো বিষয় নেই। কিন্তু টাকা-পয়সা, খাদ্যদ্রব্য ধার বা ঋণ দিয়ে তা থেকে কোনো রকমের সুবিধা নেয়া সুস্পষ্ট সুদ।

সপ্তম যুক্তি: বহুস্তর সুবিধামালিক বসে থেকে শ্রমিকদের দ্বারা মুনাফা লাভের মতো :

একজন মহাজন কয়েক বছর শ্রম দিয়ে পণ্য উৎপাদন করে দোকানে বসে শ্রমিকের দ্বারা তা বিক্রি করিয়ে বসে বসে টাকা গুনে। এটা যদি বৈধ হয় তবে এমএলএম-এ বহুস্তর সুবিধা বৈধ হবে না কেন?

যুক্তির খণ্ডন: অধিকার ও দায়-দায়িত্বের ক্ষেত্রে দু’টি ব্যবস্থার মধ্যে মৌলিক পার্থক্যের ফলে একটিকে অপরটির সাথে তুলনা করা সঠিক হয় নি। কারণ এরূপ ক্ষেত্রে কর্মচারীদেরকে নিয়োগ, বেতন-ভাতা ও আইনগত দায়-দায়িত্ব দেয়া মালিকের ওপর থাকে যা এমএলএম-এ নেই। তাছাড়া এ ক্ষেত্রেও শ্রমের বহুস্তরের সুবিধার বিষয়টি পাওয়া যায় না। কেননা, এ ক্ষেত্রে মহাজন তার নিযুক্ত কর্মচারীর বিক্রিত পণ্যের লাভ একবারই পাচ্ছে। মহাজনের দোকান থেকে যে ক্রয় করে অন্যের নিকট বিক্রয় করলো তার নিকট থেকে মহাজন কোনো কমিশন থাকছে না; আর পরের স্তরগুলোর কথা বাদই দিলাম।

অষ্টম যুক্তি: বহুস্তর সুবিধাপেনশনের মতো : 

তারা বলে, ‘‘একজন কর্মীর জন্য তার চাকুরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কোন প্রকার শ্রম ছাড়াই যেমন পেনশন গ্রহণ করা বৈধ তেমনি আমাদের এখানেও শ্রম ছাড়া বহুস্তর সুবিধা বৈধ’’।

যুক্তির খণ্ডন: বহুস্তরের সুবিধাকে পেনশনের সাথে তুলনা করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। কারণ সরকার বা প্রাইভেট কোম্পানি একজন কর্মচারীর পেছনে যে খরচের হিসাব করে থাকে তার মধ্যে পেনশনও অন্তর্ভুক্ত থাকে। কাজেই পেনশন তা পারিশ্রমিকেরই একটি অংশ এবং আইনগত অধিকারও বটে। কিন্তু এমএলএম কোম্পানিতে নিম্নের নেটের জন্য প্রদেয় কমিশন কি তার প্রথম দু’জন ক্রেতা বানাবার পারিশ্রমিকের অংশ? যদি তাই হয় তবে তো নিম্নের নেট না চললেও সে তা পাবার অধিকার দাবি করতে পারে।

নবম যুক্তি: বহুস্তর সুবিধাপারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে বৈধ:

তারা বলে, ‘‘ইসলাম ক্রেতা-বিক্রেতার পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে ব্যবসাকে বৈধ করেছে। আমাদের এ কারবারে পুরোপুরি পারস্পরিক সম্মতি রয়েছে। প্রাপ্ত বয়স্ক লোকেরা স্বেচ্ছায় আমাদের সাথে চুক্তি করছে। কাজেই আমাদের এ কারবার বৈধ।

যুক্তির খণ্ডন: আমরা শুরুতেই ব্যবসায়িক কিছু নীতিমালা উল্লেখ করেছি। সেখানে এ নীতিমালার ক্ষেত্রে আমরা বলেছি যে, পারস্পরিক সম্মতিটি অবশ্যই হতে হবে কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত বৈধ বিষয়ের ক্ষেত্রে। কুরআন ও হাদীস যা অবৈধ করেছে সে ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্মতি থাকলেও তা বৈধ হবে না। দরিদ্র পীড়িত ও বেকারত্বের দেশে মানুষের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে সে সম্মতি নেয়া হয় কুরআনের এ সম্মতির অন্তর্ভুক্ত নয়। আল্লামা আসাদ বলেন, ‘‘ঈমানদারদেরকে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে খেতে নিষেধ করা হয়েছে; এমনকি অপর পক্ষ (দুর্বল হওয়ার কারণে) পরিস্থিতির চাপে বঞ্চনা ও শোষণমূলক চুক্তিতে সম্মতি দিলেও’’ [Asad: The Message of the Quran, pp 142-4]।

মাল্টি লেভেল মার্কেটিং সম্পর্কে বিশিষ্ট পণ্ডিতগণের অভিমত:

বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই এ ব্যবসাটি প্রচলিত রয়েছে। তাই এর বৈধতা-অবৈধতা ও উপকার-অপকার নিয়ে বিশিষ্ট পণ্ডিতগণ বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। নিম্নে বিশেষ বিশেষ কতিপয় মন্তব্য প্রদত্ব হলো :

(ক) ইসলামী ফিকহ একাডেমি ১৭ জুন ২০০৩ সালে এর তৃতীয় অধিবেশনে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তা হল : ‘‘বিজনাস কোম্পানি ও এর মত অন্য সকল মাল্টি লেভেল মার্কেটিংয়ের কোম্পানি সমূহের ব্যবসায় অংশগ্রহণ করা শরী‘আতে জায়েয হবে না।’’ লিংক:

http://www.islamway.com/index.php?iw_s=Fatawa&iw_a=view&fatwa_id=31900

 (খ) সউদি আরবের উচ্চ ওলামা পরিষদ মাল্টি লেভেল মার্কেটিংয়ের ব্যাপারে নিম্নবর্ণিত অভিমত ব্যক্ত করেছেন: ‘‘পিরামিড স্কিমের উপর ভিত্তি করে যে ব্যবসা চলছে, যাকে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং বলে অভিহিত করা হয়, তা হারাম। কেননা এ ব্যবসার মূল উদ্দেশ্য হলো কোম্পানির নতুন সদস্য বানিয়ে কমিশন অর্জন, কোম্পানির উৎপাদিত পণ্য বিক্রয় থেকে অর্জিত লাভ মূল উদ্দেশ্য নয়। যখন কমিশনের পরিমাণ পৌঁছে যায় দশ-হাজার (রিয়াল), একই সময় তখন উৎপাদিত পণ্যের মূল্য মাত্র কয়েক শত (রিয়াল)ও অতিক্রম করে না। যে কোন বুদ্ধিমান মানুষকে এ দুটোর কোনটা গ্রহণ করবে জিজ্ঞাসা করা হলে সে অবশ্যই কমিশন এখতিয়ার করবে।

এজন্যই এ কোম্পানিগুলো তাদের পণ্যের প্রচার ও মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে বিশাল কমিশন প্রাপ্তির বিষয়টি উপস্থাপন করে, যা অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা লাভ করবে এবং কাস্টমারদেরকে পণ্যের সামান্য মূল্যের মোকাবেলায় বড় ধরনের লাভ দেয়ার লোভ দেখায়। আর কোম্পানি যে পণ্যের মার্কেটিং করে বেড়ায়, সেটা শুধুই কমিশন লাভের একটা মাধ্যম মাত্র। কোম্পানির লেনদেনের এ বাস্তবতার কারণে এ ব্যবসাটি হারাম। হারাম হওয়ার কারণগুলো বিস্তারিতভাবে নিম্নরূপ:

১. এ ব্যবসায় দু’ প্রকার সুদই বিদ্যমান:

ক.রিবা আল-ফাদল
খ.রিবা আন-নাসীআহ

কেননা গ্রাহক অল্প কিছু টাকা দিয়ে অনেক বেশি টাকা অর্জন করে থাকে। ফলে তা টাকার বিনিময়ে পরবর্তিতে অতিরিক্তসহ টাকা প্রদান হয়ে যাচ্ছে। আর এটাই হচ্ছে সে রিবা বা সুদ যা কুরআন, হাদীস ও ইজমা দ্বারা হারাম সাব্যস্ত হয়েছে। আর কোম্পানি কর্তৃক বিক্রীত পণ্য শুধু আড়াল ও মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, যা ক্রয় করা গ্রাহকের উদ্দেশ্য নয়। সুতরাং পণ্য ক্রয় করা সত্ত্বেও এ লেনদেন বৈধ হবে না।

২. এটা এমন ‘গারার’ ও অশ্চিয়তামূলক লেনেদেনের অন্তর্ভুক্ত যা শরী‘আতে হারাম। কেননা গ্রাহক জানে না সে প্রয়েজনীয় সংখ্যক কাস্টমার যোগাড় করতে পারবে কি-না। আর পিরামিড বা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং যতই চলতে থাকুক, তা কোন এক সময় অবশ্যই শেষ পর্যায়ে উপনীত হতে বাধ্য। আর গ্রাহক জানে না যে, সে কি পিরামিড স্কিমে সম্পৃক্ত হয়ে সবের্বাচ্চ স্তর পর্যন্ত পৌঁছে লাভবান হতে পারবে? নাকি সর্বনিম্ন স্তরে থেকে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে? অবশ্য প্রথম দিকের কিছু গ্রাহকই শুধু লাভবান হবেন, আর অধিকাংশই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এটাই হচ্ছে অনিশ্চয়তামূলক লেনদেনের বাস্তবতা। আর তা হলো দুদিকের এ টানাটানি। তবে খারাপ ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লেনদেনের অনিশ্চয়তায় সম্পৃক্ত হতে নিষেধ করেছেন। [সহীহ মুসলিম]

৩. এ লেনদেনের মধ্যে রয়েছে কোম্পানি কর্তৃক মানুষের সম্পদ অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ; কেননা কোম্পানি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে অন্যরা এ ধরনের চুক্তি থেকে লাভবান হয় না। অবশ্য কোম্পানি গ্রাহকদের কিছু সংখ্যককে লাভ প্রদান করে অন্যদেরকে প্রতারিত করার জন্য। এ বিষয়টিকে হারাম বলে কুরআনে ঘোষণা দেয়া হয়েছে: ‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা বাতিল পন্থায় তোমাদের নিজেদের সম্পদ ভক্ষণ করো না।’’ [আন-নিসা : ২৯]

৪. এ লেনেদেনের মধ্যে রয়েছে প্রতারণা, অস্পষ্টতা ও মানুষকে সংশয়াচ্ছন্ন রাখা। যেমন এখানে পণ্য ক্রয় এমনভাবে দেখানো হয় যেন সেটাই এ লেনদেনের মূল উদ্দেশ্য। অথচ প্রকৃত অবস্থা এর বিপরীত। তদুপরি এখানে বড় ধরনের কমিশনের লোভ দেখানো হয়, যা অধিকাংশ সময়ই বাস্তবায়িত হয় না। আর এটাই হল সে প্রতারণা যা শরী‘আতে হারাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘যে আমাদেরকে প্রতারিত করল সে আমাদের অন্তর্ভূক্ত নয়।’’ [সহীহ মুসলিম]

তিনি আরো বলেছেন: ‘‘ক্রেতা-বিক্রেতা পৃথক না হওয়া পর্যন্ত তাদের এখতিয়ার থাকবে। যদি তারা সত্যবাদী হয় ও সবকিছু বিশদভাবে স্পষ্ট করে তাহলে তাদের বেচাকেনায় বরকত দেয়া হয়। আর যদি তারা মিথ্যা বলে ও গোপন করে তবে তাদের বেচাকেনার বরকত চলে যায়।’’ [সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম]

আর যে বলা হয়, এ লেনদেন হচ্ছে এক ধরনের দালালি, সে দাবি শুদ্ধ নয়। কারণ দালালি হচ্ছে এক ধরনের চুক্তি, যার ফলে পণ্য বেচাকেনা সম্পন্ন হলে দালাল তার পারিশ্রমিক পায়। অথচ নেটওয়ার্ক মার্কেটিংয়ের গ্রাহকই পণ্য বিক্রয়ের মূল্য পরিশোধ করে। তদুপরি দালালির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পণ্যের প্রকৃত মার্কেটিং, অথচ মাল্টি লেভেল মার্কেটিং হল এর সম্পূর্ণ বিপরীত; কেননা এর মূল উদ্দেশ্য কমিশনের মার্কেটিং, পণ্যের নয়। এ কারণেই মাল্টি লেভেলের গ্রাহক চেষ্টা করে একের পর এক এ কমিশন বাণিজ্যের মার্কেটিংয়ের যা দালালির বিপরীত। কারণ দালাল এ ব্যক্তির কাছে মার্কেটিং করে যে প্রকৃতই পণ্য ক্রয় করতে চায়। ফলে উভয়ের পার্থক্য খুবই স্পষ্ট। অনুরূপভাবে এ কমিশনকে হেবা বা অনুদান হিসেবে মনে করা যাবে না। আর যদি একে হেবা বা অনুদান বলে চালিয়ে দেয়া হয়, তবে মনে রাখতে হবে সকল হেবা শরী‘আতে জায়েয নেই। যেমন ঋণের উপর হেবা দেয়া-নেয়া সুদ বলে গণ্য। এজন্যই আবদুল্লাহ ইবন সালাম রা. আবু বুরদাহ রা.কে বলেছিলেন: ‘‘তুমি এমন যমীনে আছ, যেখানে সুদ প্রচলিত। যখন কোন ব্যক্তির কাছে তোমার কোন পাওনা থাকে এরপর সে যদি তোমাকে এক বোঝা ঘাস, অথবা যব কিংবা এক বোঝা গো-খাদ্য প্রদান করে তাহলে তা হবে সুদ।’’ [সহীহ বুখারী]

যে উদ্দেশ্যে হেবা প্রদান করা হয় সে উদ্দেশ্যের শরয়ী বিধান কি হবে সে আলোকে হেবার হুকম নির্ধারিত হবে। এজন্যই যাকাত আদায়কারী কর্মচারী যে এসে বলেছিল, ‘এটা আপনাদের জন্য আর এটা আমাকে হাদিয়া দেয়া হয়েছে’, তার ব্যপারে নবী সা. বলেছেন: ‘‘তুমি কেন তোমার বাবা-মায়ের বাড়িতে বসে থাক নি? তাহলে দেখতে তোমাকে হাদিয়া দেয়া হয় কি-না!’’[সহীহ বুখারী ও মুসলিম]

মাল্টি লেভেল মার্কেটিংয়ের এ কমিশন দেয়া হয় শুধুই নেটওয়ার্ক মার্কেটিংয়ের জন্য, একে যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন, চাই হাদিয়া বা হেবা কিংবা অন্য কোন নামে, তাতে এর প্রকৃত অবস্থা ও বিধানের কোন কিছুই পরিবর্তিত হবে না।…’’

গবেষণা ও ফাতওয়ার স্থায়ী কমিটি, সউদী আরব

সভাপতি :

শাইখ আবদুল আযীয আল-শাইখ

সদস্যবৃন্দ :

শাইখ সালেহ আল-ফাওযান

শাইখ আবদুল্লাহ আল-গুদাইয়ান

শাইখ আবদুল্লাহ আল-মুতলাক

শাইখ আবদুল্লাহ আর-রাকবান

শাইখ আহমাদ আল-মুবারাকী

[ফতওয়া নং- ২২৯৩৫; তাং ১৪-০৩-১৪২৫ হি.]

লিংক: http://www.islamqa.com/en/ref/42579

(গ) বিশিষ্ট লেখক, অধ্যাপক ও মাল্টি লেভেল মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ রবার্ট লরেন্স ফিৎসপ্যাট্রিক এ ব্যবসার ওপর ১৪ বছর গবেষণা করেছেন এবং নিজেও কানাডার একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত থেকেছেন। তিনি লিখেছেন: ‘Its promoters would like you to believe that it is the wave of the future, a business model that is gaining momentum, growing in acceptance and legitimacy, and will eventually replace most other forms of marketing. Many people are led to believe that success will come to anyone who believes in the system and adheres to its methods. Unfortunately, the MLM business model is a hoax that is hidden beneath misleading slogans.’ অর্থাৎ ‘এর উদ্যোক্তারা চায় আপনি এ বিশ্বাস করবেন যে, এটা ভবিষ্যতের ধারা, একটা বিজনেস মডেল, যা গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে, এর আইনি যৌক্তিকতা বাড়ছে এবং অচিরেই এটি মার্কেটিংয়ের অন্য সব ধরনের স্থান দখল করে নেবে। অনেককে এটাও বিশ্বাস করানো হয় যে, যারা এ সিস্টেমের প্রতি আস্থা রাখে, সাফল্য তাদেরকেই ধরা দেবে। দূর্ভাগ্যক্রমে, এমএলএম বিজনেস মডেল হল একটি প্রতারণা যা লুকিয়ে আছে ভুল শ্লোগানের আড়ালে।’ [সূত্র : ইন্টারনেট] তার একটি বিখ্যাত প্রবন্ধ রয়েছে যার শিরোনাম ‘‘এমএলএম ব্যবসায় ১০টি বড় মিথ্যা’’।

(ঘ) ওয়াল্টার জে কার্ল ওয়েস্টার্ন জার্নাল অব কমিউনিকেশনে লিখেছেন: ‘‘MLM organizations have been described by some as cults, pyramid schemes or organizations rife with misleading, deceptive, and unethical behavior, such as the questionable use of evangelical discourse to promote the business, and the exploitation of personal relationships for financial gain’’ [সূত্র : ইন্টারনেট]

(ঘ) মালেশিয়ার বিশিষ্ট পন্ডিত যাহারুদ্দীন আব্দুর রহমান এমএলএম-এর কমিশন ভোগকে হারাম গণ্য করে বলেন: “Generally, commission that is earned through sales of goods and services (like brokerage fee) is permissible in Islam. …However the commission in MLM and pyramid schemes may convert to haram status if (1) sales commission of the network is tied to his/her personal sale….” (2) Commission originates from an unknown down line because the network is too big. As a result, the upline seem to enjoy commission without the need to put any effort. This could be classified as compound brokerage (broker on broker on broker…) which falls under the category of eating up another’s property unjustly and has an element of gambling in it.” [www.zaharuddin.net]

উপসংহার:

সবশেষে আমরা এ কথা বলতে পারি যে, এ ব্যবসা শুধু শরী‘আতের সাথেই সাংঘর্ষিক নয় বরং স্বাভাবিক বুদ্ধি বিবেচনায়ও এটি অসংগতিপূর্ণ। মুখরোচক গল্প শুনিয়ে, ধনী হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে শর্তের বেড়াজালে আটকে এ ব্যবসার ধ্বজাধারীরা শত শত মানুষকে সর্বস্বান্ত করছে, ছিনিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। সরকার, মসজিদের ইমাম-খতীব, সমাজের নেতা, বুদ্ধিজীবী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের দায়িত্ব হল এ ব্যাপারে সমাজের লোকদের সচেতন করা। আল্লাহ আমাদের সকলকে এ ব্যবসার খপ্পরে পড়া থেকে রক্ষা করুন। আমীন!!

 

 [1] এটি একটি প্রসিদ্ধ মত। এর বিপরীত মত হচ্ছে যে, যতক্ষণ শরী‘আতসম্মত না হবে, ততক্ষণ কোন কিছুই হালাল নয়। [সম্পাদক]

ওয়েব সম্পাদনা: মোঃ মাহমুদ -ই- গাফফার

প্রবন্ধ উৎস: ইসলামহাউজ ওয়েবসাইট 

Print Friendly, PDF & Email


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

23 COMMENTS

  1. Ami MEDS It Development Ltd. namok ekti Network Marketing protisthane kaj kori. MEDS er ponno holo IT Education (computer edu). A bapare shorioter bidhi-nishedh bistatiro jante parle khub upokar hoto.

  2. puro ta na porleo apnar kothar shate akmot… Islami soriot is correct no doubt… tarpor o akta kotha thake jeta apni bollen j direct parisromik er kotha. direct work er comission halal baki gulo halal na.but amr kotha tai jodi hoi tahole marketing manager to direct kono sales e jorito na but tar kn sales er upor taka deya hoi besi …. tar salary and also sales comison o besi.. tar team er upr base kore sales comision dea hoi company te. tahole ki tar oi commision o ki halal hobe na…

  3. muhtaram
    assalamu alikum
    pls post as early as possible book nabiji salat publish from saudi arabia translate in bengali.

    ma-assalam
    Sabbir Ahmed

  4. This kind of people is ready to call every kind of innovation as haram. They even once called michrorphone haram. Do not listen to this fanatics. They are the pseudo Islamist. MLM companies are are not only doing business but also training the people to lead an honest and meaningful life. That is why by doing MLM a person pave the way for better life in this world and hereafter. 

  5. Genarelly in a company marketing manager directly control the marketing executives but in MLM system here if some can manage two or four person in his bith side, he need not to think of it any more or he can think a little is it going on or not, on the other hand, a mananger need to make plan continusly for the porgressing the sells. Again, in a company a marketing executive can leave the job and he need manage another one that in MLM system need not to think because there any one will work in both side and he will get comission for that. So, I think these are the illogical gaps between these two systems.

  6. আপনি ঘুস-সুদ খাইয়াও আপনার ভাষায় better life lead করতে পারবেন। তাই বলে এগুলো হালাল হয়ে যাবে না। আপনি যদি বিয়ে না করে থাকেন তাহলে পাত্রীর বাবার কাছে বলেন আপনি destiny করেন, দেখেন কি হয়…………।

  7. খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি  বিষয়ে আলোচনা করেছেন, ধণ্যবাদ। আশা করি quantum method এবং বাড়িওলাদের জুলুমের বিষয়ে আলোচনা করবেন ইনশা আল্লাহ।

  8. apni dekhen ae page jeikhane title ache, tar niche likha ache “Download article as PDF ” aetar upore click korte apni ekta pdf file paben. tarpor oita save kore apni jaake khushi dekhate paren.. 

  9. জাযাকাল্লাহু খাইরান ।ভাই আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।দয়া করে অনলাইন MLM(dolancer,skylancer)সম্পরকে কিছু লিখবেন ।খুব বিরক্ত করতেছে ।একটা জবাব দেয়া দরকার

  10. আস সালামু আলাইকুম । আমি Dolancer এ click to Earn  এবং Post to Earn এ  কাজ করি ।কিন্তু আমি নতুন কোন সদস্যকে ভর্তি করে টাকা আয় করিনা শুধু কাজ করি ।এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে এটা করা কি জায়েয মানে এর অর্থ হারাম নাকি হালাল । দয়া করে ভাল ভাবে জেনে  আমাকে জানালে আমি সঠিক রাস্তা পাব? এটা আমার খুব দরকার ।

  11. “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শহরে বসবাসকারী কোনো ব্যক্তি শহরের বাইরে থেকে আগত কোনো ব্যবসায়ীর কাছ থেকে পণ্য কিনে তা শহরের বাসিন্দাদের কাছে বিক্রি করা থেকে বারণ করেছেন’”……..তাহলে শহরের লোক কি না খেয়ে থাকবে? ঢাকা শহরে কেউ চালের ব্যবসা করবে কি করে? চাল তো শহরের বাইরে থেকেই আসে….

  12. আমি এই লিঙ্কে ভিজিট করে কিছু অসংগতি খুজে পেলাম! প্রথম তথ্যটাই যদি ভুল হয় তাহলে তার ওপর ভিত্তি করে পরের সব যুক্তিগুলোই ভুল হবে! আমি কয়েকটি পয়েন্টের অসংগতি নিচে তুলে ধরছি-

    ১। এখানে বলা হয়েছে- “যেসব দেশে এ ব্যবসা প্রচলিত রয়েছে সেখানে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোনো আইন না থাকায় তা এখনও চালু রয়েছে।”
    – কথা হচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকাসহ পৃথিবীর যেসব দেশে এম,এল,এম ব্যবসা পরিচালিত হয় প্রায় সকল দেশেই এর সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আছে! আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এমনকি মুসলিম প্রধান দেশ মালয়শীয়াতেও এটি রাষ্ট্রিয় ভাবে বৈধ! গুগল-এ সার্চ দিলেই এ তথ্য পাওয়া যায়! তবুও আমি জাস্ট একটা লিঙ্ক ও ঐ ওয়েব সাইটের প্রথম কিছু লাইন কপি করে দিলাম-
    http://mlmsmartresources.irewards.my/target/product/task/viewdetail/cat/32098/MLM_Licensing.html

    “…Government has always encourages its growth and a positive recognition to MLM industry. The enactment of Direct Sales Act that accords legal protection to MLM companies, together with license application and approval processes represent the significant of this industry to the government….”

    ২। আপনার আরেকটি বক্তব্য- এখানে একজনের কমিশন অন্যজনকে দেয়া হয়! (শিক্ষকের উদাহরন দিয়ে বোঝানো হয়েছে- এটা হালাল নয়)
    কিন্তু বাস্তবতা- এটা শিক্ষকের উদাহরনের সাথে যায় না। বরং বর্তমানে পৃথীবির সকল “সেলস”-এর ক্ষেত্রেই সিনিয়র সেলস ম্যানরা তার সেলস-টীমের জুনিয়রদের কাজের ওপর কমিশন পায় এবং তা শরিয়াত ও রাষ্ট্র স্বীকৃত!
    ৩। “ডান-বাম না মিললে কোন কমিশন পাওয়া যায় না”- বলে যে দাবী করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা! কারণ ডেসটিনিতে মাত্র ৫ পিভির কোন পন্য বিক্রি করলেও (এইচ,পি,ডি) কমিশন পাওয়া যায়!
    ৪। “ডিস্ট্রিবিউটর হতে হলে আগে পণ্য ক্রয় করতে হয়”- এরূপ শর্ত নাকি ইসলামে হারাম!
    বুঝলাম না! পৃথীবির কোন বৈধ কোম্পানি বিনা পন্য ক্রয়ে “ডিস্ট্রিবিউটরশিপ” দেয়! তাহলে সারা পৃথীবির সব ব্যবসাই হারাম!
    তবে হ্যাঁ কর্মি নিয়োগের ক্ষেত্রে এরূপ শর্ত হারাম হতে পারে! সেক্ষেত্রে জানা প্রয়োজন- ডেসটিনির (২৫০০+) স্টাফ নিয়োগে এরূপ কোন শর্ত নেই। আর ৪৫লাখ লোক স্টাফ না- শুধুই ডিস্ট্রিবিউটর!

    ৫। “ডাউন লাইনে কেউ কাজ না করলে কমিশন পাওয়া যায় না” সুতরাং এটা হারাম! (নিজেই নিজের যুক্তি খন্ডন!)
    যাহোক- তথ্যটি সত্য নয়। যে কেউ পার্সোনাল সেল করলেই কমিশন পায়, ডাউন লাইনের প্রয়োজন নেই!

    ৬। গাছের ব্যপারে প্রতারণার সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে!
    এটা সুস্পষ্ট করে আলোচনা করা হয়েছে এবং আদালত ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বৈধভাবেই এটা করা হয়েছে! (সেটা সরকারের স্থানিয় তদন্তেও একাধিকবার প্রমানিত হয়েছে!)

    ৭। ওখানে “কমিশনের আশায় পণ্য কেনা”কে সুদ সাদৃশ্য তুলনা করা হয়েছে! আমার মনে হয় সেটা ব্যক্তির নিজের সমস্যা! কোম্পানি তাকে সুবিধাটুকু দেখিয়েছে- লোভ নয়!

    ৮। বলা হয়েছে- “এখানে অনেক ব্যক্তিকে লাভ দিতে হয় তাই চড়া দামে পণ্য বি্ক্রি করতে হয়”!
    কথাটা কল্পনা প্রসূত- কারণ, যে পরিমান বিক্রি- তার লভ্যাংশ থেকেই কমিশন দেয়!
    উদাহরণ দিয়েছে- ৬০০০টাকার নাইজেলায় ২৭৭৫/- লাভ করা হয়!
    আমি যদি বলি- ১ বোতল মিনারেল ওয়াটার (৫০০মিলি) এর দাম ১৫/- যার উৎপাদন খরচ সর্বোচ্চ ২/৩টাকা! কে বেশী লাভ করে?
    পানি ওয়ালা না নাইজেলা ওয়ালা?
    পানি বিক্রি তবুও হালাল আর নাইজেলা হারাম???

    সর্বোপরি উক্ত লিঙ্কে ফতোয়া দানকারী ব্যক্তির ব্যাপারে আমার মন্তব্য হলো- আপনি এম,এল,এম বলতে ডেসটিনির সাথে আরো অনেক কোম্পানিকে জড়িয়ে ফেলেছেন!
    এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার- কেউ যদি চাল বিক্রি করার সময় ওজনে কম দেয় তাহলে “ঐ চাল বিক্রেতার চাল বিক্রি করা” টা হারাম হবে।
    তাই বলে পুরো চালের ব্যবসাটাই কিন্তু হারাম নয়!
    তাই পুরো এম,এল,এম কে গড়পড়তায় এক পালায় না মেপে স্পেসিফিক ভাবে ডেসটিনির কার্যক্রমের কোন অংশ হারাম বা অবৈধ কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার! আর সে ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রকৃত তথ্য নিয়ে মূল্যায়ন করতে হবে! তা না হলে আজ সারা পৃথীবি জুড়ে গুটিকয়েক মুসলিম জঙ্গী সংগঠনকে পুজি করে পুরো মুসলিম জাতিকেই যেভাবে “সন্ত্রাসী” আখ্যা দিয়ে হেয় করা হচ্ছে, তেমনি এম,এল,এম-এর মত একটা বিরাট ইন্ডাস্ট্রিকেও ভুল ভাবে ব্যাখ্যা করে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ক্ষতি সাধনের সম্ভাবণা তৈরি হবে!

  13. আমার জানা মতে অনেক বড় ঘরে বিয়ে হয়! আপনি জানেন না তাই ভাবছেন- সবাই আপনার মত ডেসটিনিকে হেয় করে!

  14. mr. kader@ If u think it’s so easy like that! apni MLM-e asen tarpor dekhen- bose bose taka ase kina! tahole r DIAMOND ra sara din office korto na ar lakh lakh taka khoroch kore Office chalato na.

    An MLM executive work more than a ordinary sales executive & only that reason he earn more & Royalty…

  15. ১। ওখানে বলা হয়েছে- “যেসব দেশে এ ব্যবসা প্রচলিত রয়েছে সেখানে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোনো আইন না থাকায় তা এখনও চালু রয়েছে।”

    – কথা হচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকাসহ পৃথিবীর যেসব দেশে এম,এল,এম ব্যবসা পরিচালিত
    হয় প্রায় সকল দেশেই এর সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আছে! আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ
    ভারত এমনকি মুসলিম প্রধান দেশ মালয়শীয়াতেও এটি রাষ্ট্রিয় ভাবে বৈধ! গুগল-এ
    সার্চ দিলেই এ তথ্য পাওয়া যায়! তবুও আমি জাস্ট একটা লিঙ্ক ও ঐ ওয়েব সাইটের
    প্রথম কিছু লাইন কপি করে দিলাম-

    Click This Link

    “…Government has always encourages its growth and a positive
    recognition to MLM industry. The enactment of Direct Sales Act that
    accords legal protection to MLM companies, together with license
    application and approval processes represent the significant of this
    industry to the government….”

    ২। তাদের আরেকটি বক্তব্য- এখানে একজনের কমিশন অন্যজনকে দেয়া হয়! (শিক্ষকের উদাহরন দিয়ে বোঝানো হয়েছে- এটা হালাল নয়)

    কিন্তু বাস্তবতা- এটা শিক্ষকের উদাহরনের সাথে যায় না। বরং বর্তমানে পৃথীবির
    সকল “সেলস”-এর ক্ষেত্রেই সিনিয়র সেলস ম্যানরা তার সেলস-টীমের জুনিয়রদের
    কাজের ওপর কমিশন পায় এবং তা শরিয়াত ও রাষ্ট্র স্বীকৃত!

    ৩। “ডান-বাম না মিললে কোন কমিশন পাওয়া যায় না”- বলে যে দাবী করা হয়েছে তা
    সম্পূর্ণ মিথ্যা! কারণ ডেসটিনিতে মাত্র ৫ পিভির কোন পন্য বিক্রি করলেও
    (এইচ,পি,ডি) কমিশন পাওয়া যায়!

    ৪। “ডিস্ট্রিবিউটর হতে হলে আগে পণ্য ক্রয় করতে হয়”- এরূপ শর্ত নাকি ইসলামে হারাম!

    বুঝলাম না! পৃথীবির কোন বৈধ কোম্পানি বিনা পন্য ক্রয়ে “ডিস্ট্রিবিউটরশিপ” দেয়! তাহলে সারা পৃথীবির সব ব্যবসাই হারাম!

    তবে হ্যাঁ কর্মি নিয়োগের ক্ষেত্রে এরূপ শর্ত হারাম হতে পারে! সেক্ষেত্রে
    জানা প্রয়োজন- ডেসটিনির (২৫০০+) স্টাফ নিয়োগে এরূপ কোন শর্ত নেই। আর ৪৫লাখ
    লোক স্টাফ না- শুধুই ডিস্ট্রিবিউটর!

    ৫। “ডাউন লাইনে কেউ কাজ না করলে কমিশন পাওয়া যায় না” সুতরাং এটা হারাম! (নিজেই নিজের যুক্তি খন্ডন!)

    যাহোক- তথ্যটি সত্য নয়। যে কেউ পার্সোনাল সেল করলেই কমিশন পায়, ডাউন লাইনের প্রয়োজন নেই!

    ৬। গাছের ব্যপারে প্রতারণার সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে!

    এটা সুস্পষ্ট করে আলোচনা করা হয়েছে এবং আদালত ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি
    নিয়ে বৈধভাবেই এটা করা হয়েছে! (সেটা সরকারের স্থানিয় তদন্তেও একাধিকবার
    প্রমানিত হয়েছে!)

    ৭। ওখানে “কমিশনের আশায় পণ্য কেনা”কে সুদ সাদৃশ্য তুলনা করা হয়েছে! আমার
    মনে হয় সেটা ব্যক্তির নিজের সমস্যা! কোম্পানি তাকে সুবিধাটুকু দেখিয়েছে-
    লোভ নয়!

    ৮। বলা হয়েছে- “এখানে অনেক ব্যক্তিকে লাভ দিতে হয় তাই চড়া দামে পণ্য বি্ক্রি করতে হয়”!

    কথাটা কল্পনা প্রসূত- কারণ, যে পরিমান বিক্রি- তার লভ্যাংশ থেকেই কমিশন দেয়!

    উদাহরণ দিয়েছে- ৬০০০টাকার নাইজেলায় ২৭৭৫/- লাভ করা হয়!

    আমি যদি বলি- ১ বোতল মিনারেল ওয়াটার (৫০০মিলি) এর দাম ১৫/- যার উৎপাদন খরচ সর্বোচ্চ ২/৩টাকা! কে বেশী লাভ করে?

    পানি ওয়ালা না নাইজেলা ওয়ালা?

    পানি বিক্রি তবুও হালাল আর নাইজেলা হারাম???

    সর্বোপরি উক্ত লিঙ্কে ফতোয়া দানকারী ব্যক্তির ব্যাপারে আমার মন্তব্য হলো-
    উনি এম,এল,এম বলতে ডেসটিনির সাথে আরো অনেক কোম্পানিকে জড়িয়ে ফেলেছেন!

    এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার- কেউ যদি চাল বিক্রি করার সময় ওজনে কম দেয় তাহলে “ঐ চাল বিক্রেতার চাল বিক্রি করা” টা হারাম হবে।

    তাই বলে পুরো চালের ব্যবসাটাই কিন্তু হারাম নয়!

    তাই পুরো এম,এল,এম কে গড়পড়তায় এক পালায় না মেপে স্পেসিফিক ভাবে ডেসটিনির
    কার্যক্রমের কোন অংশ হারাম বা অবৈধ কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার! আর সে
    ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রকৃত তথ্য নিয়ে মূল্যায়ন করতে হবে! তা না হলে আজ সারা
    পৃথীবি জুড়ে গুটিকয়েক মুসলিম জঙ্গী সংগঠনকে পুজি করে পুরো মুসলিম জাতিকেই
    যেভাবে “সন্ত্রাসী” আখ্যা দিয়ে হেয় করা হচ্ছে, তেমনি এম,এল,এম-এর মত একটা
    বিরাট ইন্ডাস্ট্রিকেও ভুল ভাবে ব্যাখ্যা করে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক
    ক্ষতি সাধনের সম্ভাবণা তৈরি হবে!

  16. আমি টিমে ভারাই খেলটে যাই এবং ইসলামের সব দিকটা ঠিক রাখার চেস্টা করি। এখন জানার বিষয় হচ্ছে খেলটে গিয়ে পারিশমিক হিসাবে টাকা নেওয়া জায়েজ হবে?

  17. আমি এই রকম বিজনেস করছিলাম। এখন তো বন্ধ করে দিলাম। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এখন কেবল নিজের ব্যবহারের জন্য ওই প্রোডাক্ট কিনতে পারব? ওই রকম ভালো প্রোডাক্ট কিন্তু খোলা বাজারে পাওয়া যাবে না? বা পেলে ও অনেক খরচ পড়বে।

  18. বর্তমানে ইনফিনিটি মার্কেটিং লিমিটেড সম্পর্কে কিছু লিখুন।তা হালাল না হারাম?

আপনার মন্তব্য লিখুন