এক বাস ড্রাইভার

4
3757

বাংলা অনুবাদঃ জহিরুল কাইয়ুম ।  ওয়েব সম্পাদনাঃ মোঃ মাহমুদ -ই- গাফফার

চমৎকার একটি দিন। ড্রাইভার স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে রাস্তা ধরে চলেছেন গন্তব্যের পানে। প্রথম কয়েকটি স্টপেজ ভালমতই পার হয়ে গেল। কেউ নামলো কেউ আবার উঠল। সবকিছুই ঠিকঠাক যাচ্ছিল। তারপর হল কি! পরবর্তী স্টপেজে ছয় ফুট আট ইঞ্চি লম্বা, সুঠাম দেহী এক কুস্তিগীর উঠল গাড়ীতে। গাড়ীতে উঠে ড্রাইভারের দিয়ে কড়া নজরে তাকিয়ে বলল, “পালোয়ান কখনো ভাড়া দেয় না।” তারপর গিয়ে বসল গাড়ির পেছনের এক সিটে।

এ ফাঁকে বাস ড্রাইভারের দৈহিক বর্ণনাটাও দিয়ে রাখি। ড্রাইভার প্রায় পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি লম্বা,হালকা পাতলা গড়ন, আচার আচরণে মোটামুটি নম্র টাইপের। পালোয়ানের আচরণ ড্রাইভারের ভাল না লাগলেও পালোয়ানের সাথে ড্রাইভার কোন তর্ক-বিতর্কে জড়াতে যায়নি।পরের দিনও ঐ একই ঘটনা-সেই পালোয়ান আবার গাড়িতে উঠল এবং গতদিনের মত ভাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে সিটে বসে পড়ল। পরের দিনও ঐ একই কাহিনী। তারপরের দিনও তাই।

পালোয়ান বাসভাড়া না দিয়ে প্রতিদিন সুবিধা নিচ্ছে। বিষয়টি রীতিমত বাস ড্রাইভারের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে উঠল। এমনকি তার ঘুম হারাম হওয়ার জোগাড়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ড্রাইভার এবার অন্য পন্থা অবলম্বনের মনস্থির করল। সিদ্ধান্ত নিল পালোয়ানকে সায়েস্তা করার জন্যে বডি বিল্ডিং করবে। কারাতে,জুডো যা আছে  প্রয়োজনে সব শিখবে। পরিকল্পনা মাফিক এক প্রশিক্ষন কেন্দ্রে ভর্তিও হল। সময়টা গ্রীষ্মের শেষের দিক। প্রশিক্ষন নিয়ে ড্রাইভার নিজেই এবার পালোয়ান হয়ে উঠেছে। নিজের শক্তি-সামর্থ্যের ব্যাপারে সে এখন সন্তুষ্ট।পরের এক সোমবার পালোয়ান বাসে উঠে পূর্বের ভঙ্গিমায় বলল,“পালোয়ান কখনো ভাড়া দেয় না।” আর অমনি ড্রাইভার লাফিয়ে উঠে গলা ফাটিয়ে বলে উঠল,“কেন ভাড়া দিস না???!!!” হতভম্ব হয়ে পালোয়ান এবার জবাব দিল,“আমার বিনামুল্যে বাস ভ্রমনের পাস আছে।”

 গল্পের নৈতিক শিক্ষা

গল্পের নৈতিক শিক্ষা একেবারে পরিষ্কার যা আমাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে এবং দৈনন্দিন চলাফেরায় অবহেলা করে আমরা এড়িয়ে যাই।ঘটনা থেকে জানা গেল যে পুরো ঘটনা না জেনে হঠকারীতার পরিচয় দিয়ে কোন বিষয়ে উপসংহারে পৌঁছা মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়।একজন মুসলিম তার অপর মুসলিম ভাই সম্পর্কে উত্তম ধারণা পোষণ করবে এবং তাকে  সন্দেহের সুবিধা দেবে (কোন কারণে সন্দেহ করতে হলে তাকে ভাল জেনে পরবর্তী অনুসন্ধানে অগ্রসর হবে)। সম্ভব হলে তাকে তার অবস্থান বা পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করার সুযোগ দেবে যেন সন্দেহের কোন কারণ থাকলে তা পরিষ্কার হয়ে যায়।

অনুমান করা থেকে বেঁচে থাকো। কারণ অনুমান হলো সবচেয়ে বড় মিথ্যা। আর বেঁচে থাকো অন্যের দোষ খোঁজা থেকে, এবং অন্যের উপর গোয়েন্দাগিরি করা থেকে, বেঁচে থাকো (মন্দ কাজে) প্রতিযোগিতা করা থেকে, বেঁচে থাক অপরের হিংসা করা থেকে, অপরকে ঘৃণা করা থেকে এবং একে অপরকে পরিহার করা থেকে; এমনভাবে থাকো যেন তোমরা পরস্পর ভাই এবং আল্লাহ্‌র দাস।”  [আল-বুখারী; খণ্ড ৮, অধ্যায় ৭৩, হাদীস নং ৯২]

অন্যের কথাকে সর্বোত্তম উপায়ে ব্যাখ্যা করাটা হলো মু’মিনদের অন্যতম গুণ। ‘উমার (রা:) বলেন: “তোমার বিশ্বাসী ভাইয়ের কোনো কথাকে খারাপ অর্থে গ্রহণ করো না, যতক্ষণ পর্যন্ত তা ভালো অর্থে নেওয়ার সুযোগ থাকে।” একইভাবে ইসলামিক বিশেষজ্ঞগণের মত হল, যদি কাউকে সন্দেহ করার কোন কারণ থাকেও, তবুও মানুষের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় সন্দেহকে প্রশ্রয় দেয়া উচিত নয়।

পরিশেষে, কোন ব্যক্তিকে মূল্যায়ন করার সময় উক্ত ব্যক্তির চারিত্রিক সকল দিক বিবেচনা করা এবং হঠকারীতা পরিহার করা উচিৎ। কারো উপর মিথ্যারোপ করা থেকে বেঁচে থাকার জন্য তার ব্যাপারে পুরো বিষয়টা পরিষ্কারভাবে জেনে নেয়া উচিত।

Print Friendly, PDF & Email
Banner Ad


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

4 COMMENTS

আপনার মন্তব্য লিখুন