ইলম অন্বেষণের ফযীলত ও মর্যাদা – পর্ব ১

4
2150

লেখক: হুসামুদ্দীন সালীম কিলানী  | অনুবাদক: আলী হাসান তৈয়ব | সম্পাদনা: মো: আব্দুল কাদের

[প্রিয় পাঠক, এটি লেখকের ইলম অন্বেষণ সম্পর্কে ধারাবাহিক আলোচনার প্রথম কিস্তি। ইলম হাসিলের মর্যাদা ও উদ্দেশ্য এবং ইলম অর্জনের নীতিমালা, অন্তরায় ও ভুল-ভ্রান্তিসমূহ ইত্যাকার নানা বিষয়ে আমরা কয়েক কিস্তিতে সুনির্দিষ্ট আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।]

আমাদের এই মহান ধর্মে ইলমকে অনেক মর্যাদা দেয়া হয়েছে। ইলমের ধারক-বাহকরা নবী-রাসূলদের উত্তরাধিকারী। আর আবেদ ও আলেমের মর্যাদার ফারাক আসমান ও যমীনের মতো। কায়স ইবন কাছীর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: মদীনা থেকে এক ব্যক্তি দামেশকে আবূ দারদা রাদিআল্লাহু আনহুর কাছে এলো। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে ভাই, কোন জিনিস এখানে তোমার আগমন ঘটিয়েছে?

তিনি বললেন : একটি হাদীস এখানে আমাকে এনেছে, যা আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন বলে আমার কাছে সংবাদ পৌঁছেছে।

তিনি জানতে চাইলেন : তুমি কি অন্য কোনো প্রয়োজনে আসো নি ?! তিনি বললেন, না।
জানতে চাইলেন : তুমি কি বাণিজ্যের জন্যে আসো নি?! উত্তর দিলেন, জী না।
তিনি জানালেন, আমি কেবল এ হাদীস শিখতেই আপনার কাছে এসেছি।

তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন: ‘যে ব্যক্তি ইলম হাসিলের উদ্দেশ্যে কোনো পথ অবলম্বন করে আল্লাহ তার জান্নাতের পথ সহজ করে দেন। আর তালিবুল ইলমকে খুশি করতে ফেরেশতারা তাঁদের ডানা বিছিয়ে দেন। আলেমের জন্য আসমান ও যমীনের সবাই মাগফিরাত কামনা করতে থাকে। এমনকি পানির মাছগুলো পর্যন্ত। আর আবেদের ওপর আলেমের শ্রেষ্ঠত্ব সকল তারকার ওপর চাঁদের শ্রেষ্ঠত্বের মতো। নিশ্চয় আলেমগণ নবীদের উত্তরাধিকারী। তবে নবীগণ দিনার বা দিরহামের উত্তরাধিকারী বানান না। তাঁরা কেবল ইলমের ওয়ারিশ বানান। অতএব যে তা গ্রহণ করে সে পূর্ণ অংশই পায়।’ [তিরমিযী : ২৬৮২]

আর আলেমগণ হলেন বান্দাদের জন্য আল্লাহর বিশেষ রক্ষী। কারণ তাঁরা শরীয়তকে ভ্রান্তপন্থীদের বিকৃতি ও অজ্ঞদের অপব্যাখ্যা থেকে রক্ষা করেন। আলেমদের জন্য এ এক বিশাল মর্যাদার ব্যাপার। দীনের ব্যাপারে তাঁদের কাছেই ছুটে যেতে হয়। হতে হয় তাঁদেরই শরণাপন্ন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা অজ্ঞদের জন্য আবশ্যক করে দিয়েছেন তাঁদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করা। তিনি ইরশাদ করেন: ‘সুতরাং জ্ঞানীদের জিজ্ঞেস কর যদি তোমরা না জান’। [সূরা আন-নাহল, আয়াত : ৪৩]

আর প্রকৃতপক্ষে তাঁরা মানুষের চিকিৎসক। কেননা দেহের রোগের চেয়ে আত্মার ব্যাধিই বেশি। কারণ, মূর্খতা একটি রোগ আর এই রোগগুলোর ওষুধ হলো এই ইলম। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘নিশ্চয় অজ্ঞতার চিকিৎসা হলো জিজ্ঞাসা’। [আবূ দাঊদ : ৩৩৬]

প্রথম : ইলমের মর্যাদা

১.ইলম অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে :

সুফিয়ান ইবন উয়াইনা রহ.- কে ইলমের ফযীলত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বললেন, তোমরা কি আল্লাহর এ বাণীর প্রতি লক্ষ্য করো নি? এতে তিনি ইলম হাসিলের পর আমলের কথা বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে: ‘অতএব জেনে রাখ, নিঃসন্দেহে আল্লাহ ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। তুমি ক্ষমা চাও তোমার ও মুমিন নারী পুরুষদের ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য। আল্লাহ তোমাদের গতিবিধি এবং নিবাস সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। [সূরা মুহাম্মদ, আয়াত : ১৯]

এ আয়াতে আগে ইলম তথা জানার কথা বলা হয়েছে। তারপর বলা হয়েছে আমলের (ক্ষমা চাওয়ার) কথা। এই আয়াতকে সামনে রেখে ইমাম বুখারী রহ. তদীয় সহীহ গ্রন্থের একটি অধ্যায় রচনা করেছেন এমন শিরোনামে এ অধ্যায় ‘বলা ও করার আগে শেখা সম্পর্কে’। অতএব কথা ও কর্মের আগে ইলম অর্জনের অগ্রাধিকার। কারণ ইলম ছাড়া কোনো আমল শুদ্ধ হয় না। আর প্রথমেই শিখতে হবে তাওহীদ তথা আল্লাহর নিরঙ্কুশ একাত্ববাদের ইলম। একে বলা হয় সুলুকের ইলম। যাতে করে আল্লাহর পরিচয় লাভ হয়। আকীদা শুদ্ধ করা যায়। নিজেকে চেনা যায় এবং কিভাবে নিজেকে বিশুদ্ধ ও পরিশুদ্ধ করা যায় তাও জানা যায়।

২.ইলম দৃষ্টির আলো :

ইলম দৃষ্টির আলো। যা দিয়ে মানুষ বস্তুর হাকিকত ও বাস্তবতা অনুধাবন করতে পারে। তবে এ কিন্তু চোখের দৃষ্টি নয়; এ হলো অন্তরের দৃষ্টি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ‘তারা কি যমীনে ভ্রমণ করে নি? তাহলে তাদের হত এমন হৃদয় যা দ্বারা তারা উপলব্ধি করতে পারত এবং এমন কান যা দ্বারা তারা শুনতে পারত। বস্তুত চোখ তো অন্ধ হয় না, বরং অন্ধ হয় বক্ষস্থিত হৃদয়। [সূরা আল-হজ্ব, আয়াত : ৪৬]

এ জন্যই আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন : আলেম ও অন্ধ। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন: যে ব্যক্তি জানে তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার প্রতি যা নাযিল হয়েছে, তা সত্য, সে কি তার মত, যে অন্ধ? বুদ্ধিমানরাই শুধু উপদেশ গ্রহণ করে। [সূরা আর-রাদ, আয়াত : ১৯]

৩.ইলম মানুষের অন্তরে আল্লাহ ভয় সৃষ্টি করে :

যেমন আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন: বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, পরম ক্ষমাশীল। [সূরা ফাতির, আয়াত : ২৮]

আরেক আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: নিশ্চয় এর পূর্বে যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, তাদের কাছে যখন এটা পাঠ করা হয় তখন তারা সিজদাবনত হয়ে লুটিয়ে পড়ে। আর তারা বলে, ‘পবিত্র মহান আমাদের রব ! আমাদের রবের ওয়াদা অবশ্যই কার্যকর হয়ে থাকে। আর তারা কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে। [সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত : ১০৭-১০৯]

৪.ইলম বৃদ্ধির জন্য দু‘আ করা :

আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে ইলম বৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করতে বলেছেন। ইলমের মর্যাদা হিসেবে এতটুকুই যথেষ্ট। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ‘এবং তুমি বল, ‘হে আমার রব, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দিন।’ [সূরা ত্ব-হা, আয়াত : ১১৪]

ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন: যদি ইলম থেকে উত্তম কিছু থাকত তবে আল্লাহ তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তা-ই বৃদ্ধির প্রার্থনা করতে বলতেন। যেমন তিনি এ আয়াতে ইলম বৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করতে বলেছেন।

৫. ইলম উত্তম জিহাদ : 

জিহাদের একটি প্রকার হলো প্রমাণ ও দলীলের মাধ্যমে জিহাদ করা। এটিই নবীর উত্তরাধিকারী নেতৃবৃন্দের জিহাদ। মুখ ও হাতের জিহাদ থেকে এটি উত্তম। কারণ ইলম অর্জনে বেশি কষ্ট করতে হয় এবং এর শত্রুও বেশি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ‘আর আমি ইচ্ছা করলে প্রতিটি জনপদে একজন সতর্ককারী পাঠাতাম। সুতরাং তুমি কাফিরদের আনুগত্য করো না এবং তুমি কুরআনের সাহায্যে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সংগ্রাম (জিহাদ) কর।’ [সূরা আল-ফুরকার, আয়াত : ৫১-৫২]

ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন: ‘এটি ছিল তাদের বিরুদ্ধে কুরআনের সাহায্যে জিহাদ। জিহাদের প্রকারদ্বয়ের মধ্যে এটিই বড়। একে মুনাফিকদের বিরুদ্ধের জিহাদও বলা হয়। কারণ মুনাফিকরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়াই করত না। তারা বরং দৃশ্যত মুসলিমদের সঙ্গেই থাকত। কখনো তারা মুসলিমের সঙ্গে শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াইয়েই শরিক হত। এ

তদসত্ত্বেও আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: ‘হে নবী, কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর এবং তাদের ব্যাপারে কঠোর হও; আর তাদের আশ্রয়স্থল হবে জাহান্নাম এবং তা কত নিকৃষ্ট গন্তব্যস্থল ! [সূরা আত-তাহরীম, আয়াত : ০৯] আর বলাবাহুল্য, মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা হয় কুরআন ও প্রমাণের মাধ্যমে।

উদ্দেশ্য হলো, জিহাদ, ইলম অর্জন এবং মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান- সবগুলোই সাবিলুল্লাহ বা আল্লাহর রাস্তা। [দেখুন, ইবনুল কায়্যিম, মিফতাহু দারিস সাআদা : ১/৭০]

আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি আমার এই মসজিদে কেবল কোনো কল্যাণ (ইলম) শেখার বা শেখাবার অভিপ্রায়ে আসবে, সে আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদের মর্যাদার অধিকারী। আর যে অন্য কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে আসবে, সে ওই ব্যক্তির অনুরূপ যে অন্যের সম্পদ পরিদর্শনে আসে। [ইবন মাজা : ২২৭, সহীহ সনদে বর্ণিত]

৬. ইলম প্রচারে প্রতিযোগিতা :

আল্লাহ তা‘আলা কেবল দু’টি বিষয়ে পরস্পর হিংসা (ইর্ষা) পোষণ বৈধ রেখেছেন : সম্পদ ব্যয় এবং ইলম ব্যয়। এটি করা হয়েছে এ দুই  জিনিসের মর্যাদা হেতু। আর মানুষকে নানা ধরনের কল্যাণ আহরণে পরস্পর প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। যেমন আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘কেবল দুই ব্যক্তিকে হিংসা করার অনুমতি রয়েছে : ওই ব্যক্তিকে আল্লাহ যাকে সম্পদ দিয়েছেন। অতপর তাকে সে সম্পদ হকের পথে ব্যয় করতে ন্যস্ত করেছেন। আর ওই ব্যক্তি যাকে তিনি হিকমাহ বা ইলম দান করেছেন। ফলে সে তা দিয়ে বিচার করে এবং তার শিক্ষা দেয়।’ [বুখারী : ৭৩]

৭. ইলম ও দীন সম্পর্কে পাণ্ডিত্য আল্লাহর মহাদান :

আল্লাহ যাকে দীন সম্পর্কে গভীর জ্ঞান দান করেন তিনিই প্রকৃত তাওফীকপ্রাপ্ত। কেননা দীনী বিষয়ে প্রাজ্ঞতা ও পাণ্ডিত্য  আল্লাহর এক মহাদান। মু‘আবিয়া ইবন সুফিয়ান রাদিআল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘আল্লাহ যার কল্যাণ চান তিনি তাকে দীন বিষয়ে গভীর ইলম দান করেন।’ [বুখারী : ৭৩১২; মুসলিম : ২৪৩৯]

৮. ইবাদতের চেয়ে ইলমের মর্যাদা বেশি :

ইবাদতের চেয়ে ইলমের গুরুত্ব বেশি। কারণ, ইলমের মর্যাদার হেতুগুলো একটি হলো তা ইবাদতের প্রতি ধাবিত করে। আর যে ইলম হাসিলে পথ অতিক্রম করে তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ হয়ে যায়। মা আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: ‘আল্লাহ আমার প্রতি ওহী করেছেন, যে ব্যক্তি ইলম অর্জনে কোনো রাস্তা অবলম্বন করে, আমি তার জান্নাতের রাস্তা সহজ করে দেই। আর আমি যার দুই প্রিয়তমকে (চক্ষুদ্বয়) কেড়ে নেই, এর বিনিময়ে আমি তাকে জান্নাত দান করি। কল্যাণের ইলম আহরণে আধিক্য ইবাদতেও আধিক্যের হেতু। দীনের সেরা বিষয় হলো আল্লাহর ভয়।’ [বাইহাকী, শু‘আবুল ঈমান : ৫৩৬৭, সহীহ সনদে বর্ণিত]

দ্বিতীয় : আলেমের মর্যাদা

১.আলেমরাই বিশ্বস্ত :  

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন:  ‘আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে, তিনি ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই, আর ফেরেশতা ও জ্ঞানীগণও। তিনি ন্যায় দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। তিনি ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’। [সূরা আলে-ইমরান, আয়াত : ১৮]

এ থেকে জানা গেল, আলেমরা হলেন বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য। যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা সবচে বড় সমাবেশে (হাশরের মাঠে) সাক্ষ্য বানাবেন।

২.আলেমদের প্রশংসায় আল্লাহ :  

আল্লাহ তা‘আলা আহলে ইলম তথা আলেমদের প্রশংসা ও গুণ গেয়েছেন। তাঁর কিতাবকে তিনি তাঁদের বক্ষে সুস্পষ্ট নিদর্শন হিসেবে স্থান দিয়েছেন। এর মাধ্যমে অন্তর পুলকিত হয়, আমোদিত ও সৌভাগ্যমণ্ডিত হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ‘বরং যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, তাদের অন্তরে তা সুস্পষ্ট নিদর্শন। আর যালিমরা ছাড়া আমার আয়াতসমূহকে কেউ অস্বীকার করে না’।  [সূরা আল-আ‘নকাবূত, আয়াত : ৪৯]

৩.আলেমরা নবীগণের ওয়ারিশ :

তাঁরাই হলেন ‘আহলে যিকর’ আল্লাহ তা‘আলা অজ্ঞতায় যাদের কাছে জিজ্ঞেস করতে বলেছেন। তিনি ইরশাদ করেন: ‘সুতরাং তোমরা জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা কর যদি তোমরা না জান’। [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত : ০৭]

৪.ঈমান ও ইলমের বাহকদের মর্যাদা বৃদ্ধি :

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন: ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় সমুন্নত করবেন’। [সূরা আল-মুজাদালাহ, আয়াত : ১১]

৫.মারা গেলেও আলেমের আমল বন্ধ হয় না :

মানুষ বেঁচে থাকে এবং তারপর মারা যায়। মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তার আমলও বন্ধ হয়ে যায়। ব্যতিক্রম শুধু আলেমরা। যে আল্লাহওয়ালা আলেম উপকারী ইলম প্রচার করে মৃত্যুবরণ করেন, তিনি মারা গেলে পরবর্তী লোকেরা তাঁর ইলম থেকে উপকৃত হয় আর তিনি নেকী পেতে থাকেন। ইখলাসের সঙ্গে কাজ করলে তাই তাঁদের নেকী বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। পরবর্তী নিবন্ধে ইনশাআল্লাহ এ ব্যাপারে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব। আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: ‘মানুষ যখন মারা যায়, তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি উৎস থেকে তা অব্যাহত থাকে : সাদাকায়ে জারিয়া, উপকারী ইলম অথবা নেক সন্তান যে তার জন্য দু‘আ কর।’ [মুসলিম : ৪৩১০]

৬.আলেম ও তালেবে ইলমের প্রতি আল্লাহর অবিরাম রহমত বর্ষণ :

পৃথিবীর সব কিছুই ধ্বংসে নিপতিত, সবই বিলয়ের পথে ধাবমান। সব কিছুর ওপরই লানতের বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। সব কিছুর মধ্যে কেবল মানুষের দুইটি শ্রেণী ব্যতিক্রম যাদের ওপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হতে থাকে : ইলমসম্পন্ন ব্যক্তি ও ইলম অন্বেষণকারী এবং অধিক হারে আল্লাহর জিকিরকারী আবেদ। যেমন আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:‘মনে রেখ, নিশ্চয় দুনিয়া অভিশপ্ত। অভিশপ্ত এতে যা আছে তা-ও। শুধু আল্লাহ তা‘আলার জিকির ও জিকিরের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো এবং আলেম ও তালেবে এলেম ছাড়া।’ [তিরমিযী : ২৩২২; ইবন মাজা : ৪১০২]

৭.ইলমের কারণে আমলকারীর প্রতিদান বাড়ে :

ইলমের দ্বারা মুমিনের প্রতিদান বড় হয়। তার নিয়ত হয় পরিশুদ্ধ। ফলে সে নিজ আমল করতে পারে সুন্দর উপায়ে। মানুষ ইলমের চেয়ে মালের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়। অথচ মালের চেয়ে ইলমের মর্যাদা অনেক বেশি। এ ব্যাপারে শরীয়ত আমাদেরকে কয়েকটি শ্রেণীতে বিভক্ত করেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে চার ভাগে বিভক্ত করেছেন। এদের মধ্যে দুই দল হবে নাজাত বা মুক্তিপ্রাপ্ত। তারা হলেন যারা ইলম নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। যেমন কাবশা আনমারী রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেন: তিন শ্রেণীর লোকদের ব্যাপারে আমি কসম করছি এবং তোমাদের কাছে একটি হাদীস বলছি, তোমরা তা সংরক্ষণ করো।’ তিনি বলেন, দান-সদকায় কারো সম্পদ কমে না, কোনো ব্যক্তির প্রতি অত্যাচার করা হলে সে যদি তাতে ধৈর্য ধরে তবে আল্লাহ তার সম্মান বৃদ্ধি করে দেন এবং কোনো বান্দা (মানুষের কাছে) প্রার্থনা বা চাওয়ার দরজা খুললে আল্লাহ তার জন্য অভাবের দরজা উন্মুক্ত করে দেন।’ (বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা কিংবা) অনুরূপ বাক্য বলেছেন। আর আমি তোমাদেরকে একটি হাদীস বলব তোমরা তা স্মরণ রেখ। তিনি বলেন, ‘দুনিয়া চার প্রকার লোকের জন্য;

(১) সেই বান্দার জন্য যাকে আল্লাহ মাল ও জ্ঞান দান করেছেন। ফলে সে এতে তার প্রভুকে ভয় করছে এবং তার আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক রাখছে আর তার ব্যাপারে আল্লাহর হক জানছে, এ হলো সর্বোত্তম মর্যাদায় অধিষ্ঠিত।

(২) সেই বান্দা যাকে আল্লাহ জ্ঞান দান করেছেন কিন্তু মাল দেন নি। সে হলো সঠিক নিয়তের লোক। সে বলে, যদি আমার টাকা-পয়সা থাকতো তাহলে অমুক ব্যাক্তির মত কাজ করতাম। সে তার নিয়ত অনুযায়ী সওয়াব পাবে। এদের দুজনের নেকী হবে সমান।

(৩) আর সেই বান্দা যাকে আল্লাহ টাকা-পয়সা দিয়েছেন কিন্তু জ্ঞান দান করেন নি। সে না জেনেই তার টাকা-পয়সা খরচ করছে। এতে সে আল্লাহকে ভয় করে না, আত্মীয়তা রক্ষা করে না এবং এতে আল্লাহর হকও সে জানে না। সে হলো সবচে নিকৃষ্ট অবস্থানে।

(৪) আর সেই বান্দা যাকে আল্লাহ মালও দেন নি জ্ঞানও দেন নি, সে বলে আমার টাকা পয়সা থাকলে অমুকের মতই (খারাপ কাজ) করতাম। সে তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিদান পাবে। এরা দুজনই গুনাহর দিক থেকে সমান।’ [তিরমিযী : ২৪৯৫]

হাদীসটিতে আমরা দেখি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রকৃত ইলম বলেছেন ওই ইলমকে যা মানুষের সামনে বস্তুর স্বরূপ উদ্ভাসিত করে। সুতরাং ধন-সম্পদের অধিকারী ব্যক্তি যদি ইলমের শোভায় অলংকৃত না হয় তবে সে সম্পদের অপব্যবহার করে। দেখা যায় সে তা ব্যয় করছে কুপ্রবৃত্তির লালসা পূরণে। এ নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে না সে। এ কারণেই তাকে সবচে নিকৃষ্ট স্তরের বলে গণ্য করা হয়েছে। (আল্লাহ আমাদের এ থেকে রক্ষা করুন।) পক্ষান্তরে একজন আলেম প্রকৃত সম্পদের মূল্য অনুধাবন করতে পারেন। তা কোথায় ব্যয় করা উচিত তা বুঝতে পারেন। ফলে তাঁর ইলমের বদৌলতে তিনি মহৎ নিয়ত করতে পারেন। সম্পদ না থাকলে তার নিয়ত করেও পারেন সর্বোত্তম মর্যাদা অর্জন করতে।

৮.আলেমের ক্ষমা প্রার্থনা :

ইলমওয়ালাদের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব বুঝাতে এতটুকুই যথেষ্ট যে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য সব কিছুইকে অনুগত করে দেন যাতে তারা তাঁর জন্য দু‘আ ও ক্ষমা প্রার্থনা করে। যেমন: আনাস ইবন মালেক রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: ‘ইলমের অধিকারী ব্যক্তির জন্য সব কিছুই মাগফিরাত বা ক্ষমা প্রার্থনা করে। এমনকি সমুদ্রের মাছ পর্যন্ত।’ [সহীহ মুসনাদ আবী ই‘আলা : ২/২৬০; সহীহ জামে‘ সগীর : ৩৭৫৩ কানযুল উম্মাল : ২৮৭৩৭]

৯.তালিবুল ইলমদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুপারিশ করেছেন :

যেমন আবূ সাঈদ খুদরী রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: ‘অচিরে তোমাদের সমীপে ইলম হাসিলের উদ্দেশ্যে নানা দল আসবে। তোমরা যখন তাদের দেখবে, বলবে, স্বাগতম স্বাগতম হে ওই সম্প্রদায়,  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাদের ব্যাপারে সুপারিশ করেছেন। অতপর তোমরা তাদের ইলম শেখাবে।’ [ইবন মাজা : ২৪৭, ‘হাসান’ সূত্রে বর্ণিত]

১০.আলেমদের চেহারা উজ্জ্বল হওয়া এবং তাদের সচ্ছলতা :

আহলে ইলম যারা  আল্লাহর দেয়া শরীয়তের জ্ঞান পৌঁছে দেন মানুষের কাছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দু‘আ মত তারা হলেন মানুষের মধ্যে সবচে উজ্জ্বল চেহারাবিশিষ্ট এবং তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ মর্যাদাবান। নবীজী  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘আল্লাহ ওই ব্যক্তির চেহারা উজ্জ্বল (কারো কারো ব্যাখ্যা মতে ওই ব্যক্তিকে সুখে-স্বাচ্ছন্দে) রাখুন যে আমার কথা শোনে অত:পর তা (অপরের কাছে) পৌঁছে দেয়। কেননা, ফিকহ বা ইলমের অনেক বাহক আছে যে (আসলে) ফকীহ বা আলেম (ইসলামী জ্ঞানে পণ্ডিত) নয়। আবার অনেক ফিকহ বা ইলমের বাহক আছেন যিনি তা পৌঁছে দেন এমন ব্যক্তির কাছে যে কি না তার চেয়েও বড় ফিকহবিদ।’ [ইবন মাজা : ২৩১, ‘সহীহ’ সূত্রে বর্ণিত]

১১.ইলমের মাধ্যমে নবীদের ওপর আল্লাহর অনুগ্রহ :

ইলমের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম নিদর্শন হলো আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবী ও রাসূলবর্গকে দেয়া ইলমকে আপন দান ও অনুগ্রহ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এ থেকেই এ দানের মাহাত্ম্য অনুমেয়। আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি আপন অনুগ্রহ ও দানের কথা বলতে গিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ‘আর আল্লাহ তোমার প্রতি নাযিল করেছেন কিতাব ও হিকমাত এবং তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন যা তুমি জানতে না। আর তোমার ওপর আল্লাহর অনুগ্রহ রয়েছে মহান। [সূরা আন-নিসা, আয়াত : ১১৩]

আপন বন্ধু ইবরাহীমের প্রতি অনুগ্রহ প্রসঙ্গে বলেন: ‘নিশ্চয় ইবরাহীম ছিলেন এক উম্মত, আল্লাহর একান্ত অনুগত ও একনিষ্ঠ। তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। সে ছিল তার নিয়ামতের শুকরকারী। তিনি তাকে বাছাই করেছেন এবং তাকে সঠিক পথে পরিচালিত করেছেন।’ [সূরা আন-নাহল, আয়াত : ১২০-১২১]

ইউসুফ আলাইহিস সালামের প্রতি অনুগ্রহ প্রসঙ্গে বলেন: ‘আর সে যখন পূর্ণ যৌবনে উপনীত হল, আমি তাকে হিকমত ও জ্ঞান দান করলাম এবং এভাবেই আমি ইহসানকারীদের প্রতিদান দিয়ে থাকি।’ [সূরা ইউসুফ, আয়াত : ২২]

মূসা আলাইহিস সালামের প্রতি অনুগ্রহ প্রসঙ্গে বলেন: ‘আর মূসা যখন যৌবনে পদার্পণ করল এবং পরিণত বয়স্ক হলো, তখন আমি তাকে বিচারবুদ্ধি ও জ্ঞান দান করলাম। আর এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কার দিয়ে থাকি।’ [সূরা আল-কাসাস, আয়াত : ১৪]

ঈসা ইবন মারইয়াম মাসীহ আলাইহিস সালামের প্রতি অনুগ্রহ প্রসঙ্গে বলেন: ‘হে মারইয়ামের পুত্র ঈসা, তোমার ওপর ও তোমার মাতার ওপর আমার নি‘আমত স্মরণ কর, যখন আমি তোমাকে শক্তিশালী করেছিলাম পবিত্র আত্মা দিয়ে, তুমি মানুষের সাথে কথা বলতে দোলনায় ও পরিণত বয়সে। আর যখন আমি তোমাকে শিক্ষা দিয়েছিলাম কিতাব, হিকমাত, তাওরাত ও ইনজীল।’ [সূরা আল-মায়িদা, আয়াত : ১১০]

১২.ইলমের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবার মর্যাদা ও সৌভাগ্য :

আলী ইবন আবী তালিব রাদিআল্লাহু আনহু বলেন: ‘ইলমের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম দিক হলো যে-ই এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় সে এ কারণে আনন্দিত হয়। এমনকি সে যদি ইলমের অধিকারীও না হয়। পক্ষান্তরে যে ইলম থেকে সরে যায় এবং অজ্ঞতায় জড়িয়ে পড়ে তা তার জন্য কষ্টকর মনে হয় এবং এ কারণে সে মর্মপীড়া অনুভব করে। এমনকি সে যদি অজ্ঞও হয়। [জামেউ বায়ানিল ইলম : ১/৫৯]

১৩.লোকদের মধ্যে ইলমের অধিকারীগণই সবচে বেশি ভয় করেন আল্লাহকে :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ‘আর এমনিভাবে মানুষ, বিচরণশীল প্রাণী ও চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যেও রয়েছে নানা বর্ণ। বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, পরম ক্ষমাশীল। [সূরা ফাতির, আয়াত : ২৮]

অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ‘নিশ্চয় এর পূর্বে যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, তাদের কাছে যখন এটা পাঠ করা হয় তখন তারা সিজদাবনত হয়ে লুটিয়ে পড়ে। আর তারা বলে, ‘পবিত্র মহান আমাদের রব! আমাদের রবের ওয়াদা অবশ্যই কার্যকর হয়ে থাকে’। ‘আর তারা কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে।’। [সূরা বানী ইসরাঈল, আয়াত : ১০৭-১০৯]

১৪.আলেমগণ সেরা মুজাহিদদের অন্যতম :

জিহাদের একটি প্রকার হলো প্রমাণ ও দলীলের মাধ্যমে জিহাদ করা। এটিই নবীর উত্তরাধিকারী নেতৃবৃন্দের জিহাদ। মুখ ও হাতের জিহাদ থেকে এটি উত্তম। কারণ ইলম অর্জনে বেশি কষ্ট করতে হয় এবং এর শত্রুও বেশি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ‘আর আমি ইচ্ছা করলে প্রতিটি জনপদে একজন সতর্ককারী পাঠাতাম। সুতরাং তুমি কাফিরদের আনুগত্য করো না এবং তুমি কুরআনের সাহায্যে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সংগ্রাম (জিহাদ) কর।’ [সূরা আল-ফুরকার, আয়াত : ৫১-৫২]

ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন: ‘এটি ছিল তাদের বিরুদ্ধে কুরআনের সাহায্যে জিহাদ। জিহাদের প্রকারদ্বয়ের মধ্যে এটিই বড়। একে মুনাফিকদের বিরুদ্ধের জিহাদও বলা হয়। কারণ মুনাফিকরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়াই করত না। তারা বরং দৃশ্যত মুসলিমদের সঙ্গেই থাকত। কখনো তারা মুসলমানের সঙ্গে শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াইয়েই শরিক হত।

এতদসত্ত্বেও আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: ‘হে নবী, কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর এবং তাদের ব্যাপারে কঠোর হও; আর তাদের আশ্রয়স্থল হবে জাহান্নাম এবং তা কত নিকৃষ্ট গন্তব্যস্থল! [সূরা আত-তাহরীম, আয়াত : ০৯]

আর বলা বাহুল্য, মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা হয় কুরআন ও প্রমাণের মাধ্যমে।

উদ্দেশ্য হলো, জিহাদ, ইলম অর্জন এবং মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান- সবগুলোই সাবিলুল্লাহ বা আল্লাহর রাস্তা। [দেখুন, ইবনুল কায়্যিম, মিফতাহু দারিস সাআদা : ১/৭০]

আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি আমার এই মসজিদে কেবল কোনো কল্যাণ (ইলম) শেখার বা শেখাবার অভিপ্রায়ে আসবে, সে আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদের মর্যাদার অধিকারী। আর যে অন্য কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে আসবে, সে ওই ব্যক্তির অনুরূপ যে অন্যের সম্পদ পরিদর্শনে আসে। [ইবন মাজা : ২২৭, সহীহ সনদে বর্ণিত]

১৫.ইলমের প্রচারেই (ইলম প্রচারে ঐকান্তিক প্রয়াসের কারণেই) আলেমদের মর্যাদা :

আল্লাহ তা‘আলা কেবল দু’টি বিষয়ে পরস্পর হিংসা (ইর্ষা) পোষণ বৈধ রেখেছেন : সম্পদ ব্যয় এবং ইলম ব্যয়। আর এটি করা হয়েছে এ দু’টি জিনিসের মর্যাদার কারণে। আর মানুষকে নানা ধরনের কল্যাণ আহরণে পরস্পর প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। যেমন আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘দুইটি বিষয়ে কেবল হিংসা করার অনুমতি আছে : ওই ব্যক্তিকে আল্লাহ যাকে সম্পদ দিয়েছেন। অতপর তাকে সে সম্পদ হকের পথে ব্যয় করতে ন্যস্ত করেছেন। আর ওই ব্যক্তি যাকে তিনি হিকমাহ বা ইলম দান করেছেন। ফলে সে তা দিয়ে বিচার করে এবং তার শিক্ষা দেয়।’ [বুখারী : ৭৩]

শেষ কথা :

আলেম ও ইলমের মর্যাদা সম্পর্কে বেশ কিছু বিষয় আমরা এখানে আলোচনা করলাম। তবে সকল তালিবুল ইলম ভাইয়ের কাছে আমার অনুরোধ, আপনারা এ সম্পর্কে আরও জানতে আগ্রহী হোন। এ সংক্রান্ত নিম্নোক্ত কিতাবগুলো পড়লে আশা করি বেশি উপকৃত হতে পারবেন। যেমন : ‘মিফতাহু দারুস সা‘আদাহ’, ‘জামেউ বায়ানিল ইলমি ওয়া ফাযলিহী’, ‘আর-রিহলাহ’ ও ‘আদাবুল আলেমি ওয়াল মুতা‘আল্লিম’ ইত্যাদি আরবী গ্রন্থ।

আল্লাহ তা‘আলা আপনাদের সকলকে যাবতীয় নিষিদ্ধ বিষয় থেকে রক্ষা করুন এবং ইলম, ইলম শেখা ও শেখাতে কষ্ট সহ্য করায় আপনাদের উত্তম বিনিময় দান করুন।

আমীন। 


 [1] (قال الترمذي : حَدِيثٌ حَسَنٌ وهكذا قال الألباني ) .

 

Print Friendly, PDF & Email
Banner Ad


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

4 COMMENTS

  1. Assalamu Alikum please gives Bangla salat book file in PVDF format
    & please give a mobile contact number for discuss my problem of salat questions,
    May ALLHA bless you.

  2. Dear Dini Bhai , Assalamu’alaikum let me know about taiyatul mosjid salat at the time of Fajor and Magrib

  3. তালাবে এলম হওয়ার মেহনত করতে পারি কিন্তু আল্লাহু আলিমুল গায়েব ওয়াশ শাহাদা এলম দান না করলে কিন্তু আলেম হতে পারব না।

আপনার মন্তব্য লিখুন